প্রেমঘটিত কারণেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সুলতান মাহমুদ আত্মহত্যা করেছেন।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিষয়টি যুগান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন সুলতান মাহমুদের বড় ভাই রঞ্জু ওরফে ভাণ্ডারি।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কামারের মোড়ের আফরোজা ছাত্রাবাস থেকে পুলিশ সুলতানের মরদেহ উদ্ধার করে। তিনি কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের ১৫নং ওয়ার্ডের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহ শেখের পুত্র। সুলতান পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট।
সুলতান মাহমুদের পরিবার ও বন্ধুরা যুগান্তরকে জানান, কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার তামান্না আক্তার নামের এক মেয়ের সঙ্গে ৫-৬ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল সুলতান মাহমুদের। বর্তমানে সেই মেয়ে রৌমারীর একটি কলেজে ইন্টারমিডিয়েট ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলে দুই পরিবারের লোকজন বসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে। মেয়ের পরিবারের তরফ থেকে দুই বছর সময় বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু বিভিন্ন সময় মেয়ের বিয়ের চেষ্টা চালানো হয়।
গত ১৫ নভেম্বর আবারও মেয়ের বিয়ে অন্য স্থানে ঠিক করার চেষ্টা করে তার পরিবার। বিষয়টি সুলতান মাহমুদ জেনে গেলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের পোস্ট ও তার ব্যবহৃত রুমের ওয়ালের লেখায় বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফেসবুকে তার সর্বশেষ স্ট্যাটাসটি হল- সময় এসেছে ইতিহাস পাল্টাবার... পাল্টে যাচ্ছি তাই।
এ ছাড়া তার কক্ষের ওয়ালে প্রেমের গান লেখা দেখা যায়। তার শরীরেও ইংরেজি বড় হাতের ‘টি’ অক্ষরের কাটা ক্ষত দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, দুপুরের পর তিনি বৈদ্যুতিক ফ্যানে গামছায় ঝুলে আত্মহত্যা করেন।
ছাত্রাবাসের অন্য শিক্ষার্থীরা যুগান্তরকে জানান, সকাল থেকেই সে রুমের দরজা খোলেনি। সন্ধ্যার দিকে তার পরিবারের পক্ষ থেকে মোবাইল ফোনে জানানো হয় যে, সুলতান কোনো মোবাইল রিসিভ করছে না। এর আগে তার এক সহপাঠী শিট নেয়ার জন্যও তার রুমের সামনে গিয়ে ডাকাডাকি করে। অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পরও তার কোনো সাড়া না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানান ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরা।
খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান ও সহকারী প্রক্টর শফিক আশরাফ পুলিশ নিয়ে তার কক্ষের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ফ্যানের সঙ্গে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।
সুলতান মাহমুদের বড় ভাই রঞ্জু ওরফে ভাণ্ডারি যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রেমের কারণে আমার ভাইয়ের অকালে এমন মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। আমার অন্য দুই ভাই একরামুল ও মিলু রংপুরে গেছেন। তারাই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মুহিব্বুল ইসলাম মুন যুগান্তরকে বলেন, ‘মরদেহ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তার পরিবার যেভাবে চাইবে সেভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন