পৃথিবীর আলো দেখার আগেই মাতৃগর্ভে যে শিশুটি গুলিবিদ্ধ হয়েছিল তার কথা কি মনে আছে? ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় এলাকায় আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয় শিশু সুরাইয়া। নানা জটিলতা পার করে জন্ম নেয়া সেই শিশু বয়স এখন দুই বছর ৪ মাস। তার জীবনে যেন জটিলতার শেষ নেই।
যে বয়সে হেঁটে-খেলে বেড়ানোর কথা, সেই বয়সে দাঁড়াতেও পারছে না সুরাইয়া। মা-বাবা ভাইবোনদের সহায়তায় দাঁড়াতে হয় তাকে। ঠিক মতো কথাও বলতে পারে না সে। শুধু বাবা আর মাকে ডাকতে পারে। এমনকি শুনতে ঠিক মতো শুনতেও পায় না। তার ডান কানে সমস্যা।
সুরাইয়ার বাবা-মায়ের মতে, তার আচরণে অস্বাভাবিকতা রয়েছে। এমনকি ডান হাতেও শক্তি পায়না শিশুটি। বলতে গেলে অকেজো এ হাতে কিছু্রই করতে পারেনা সে। যে কোনো কাজে বাড়িয়ে দেয় বাম হাত।
আর গুলিবিদ্ধ সেই ডান চোখটি এখন পুরোপুরিই নষ্ট। সেই চোখে আর কখনোই আলো আসবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
দুর্ভোগ পিছু না ছাড়া সেই ছোট্ট শিশুটি অক্টোবরের ২ তারিখে পায়ে ফোড়া নিয়ে ভর্তি হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।চিকিৎসকরা জানায়, সুরাইয়ার পায়ে রক্ত জমে ইনফেকশান হয়ে এমনটা হয়েছে। এ কারণে কচি শরীরেও করা হয় অস্ত্রোপচার।
এর বাইরে ঠান্ডা-জ্বর-কাশিসহ শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা যেনো তার নিত্যসঙ্গী। এক অসুখ থেকে নিরাময় হলে অারেকটায় আক্রান্ত হতে হয় তাকে।
ছোট্ট শিশুটির চিকিৎসায় চায়ের দোকানদার বাবা বাচ্চু ভূঁইয়া যে আয় করেন তার বড় একটি অংশ খরচ হয়ে যায়। ঢাকায় এসে নিয়মিত চিকিৎসার কথা থাকলেও সবসময় তা হয়ে ওঠেনা।
তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: সুরাইয়াকে ঢাকায় শিশু বিকাশ কেন্দ্রে নিয়ে নিয়মিত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তুু আমার আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় সবসময় তা করতে পারিনা।
সুরাইয়াকে ঢাকায় এনে চিকিৎসা দিতে প্রতিবার খরচ হয় প্রায় ৮ হাজার টাকা উল্লেখ করে বাচ্চু ভূইয়া বলেন, মেয়েটির জন্মের পর ঢাকায় থাকার সময় অনেকেই তার চিকিৎসাসহ ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখন তাদের কারো খোঁজ নেই।
শিশুটিকে নিয়ে সবসময় তটস্থ থাকতে হয় মা নাজমা বেগমকে। বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় বেশিরভাগ সময়ই কান্নাকাটি করে শিশুটি। খাবরেও তার অরুচি।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি জানান, চিকিৎসকরা সুরাইয়ার বয়স ৫ বছর না হওয়া পর্যন্ত প্রতিমাসেই তাকে রাজধানীর শিশু বিকাশ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এভাবে চিকিৎসা দিলে শিশুটি শারীরিক সমস্যা কাটিয়ে সুস্থ্য হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন তারা।
যে ঘটনাকে নিয়ে এতকিছু এখন পর্যন্ত তার মামলার বিচারকাজ শুরু না হওয়ার পাশাপাশি বারবার মামলার তারিখ পরিবর্তনে নানা শঙ্কায় রয়েছেন নাজমা বেগম। আসামিদের পক্ষ থেকেও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে বিভিন্ন সময় চাপ দেয়া হচ্ছে মামলা তুলে নিতে।
এ বিষয়ে মাগুরা সদর থানার ওসি ইলিয়াসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
২০১৫ সালের ২৩ জুলাই মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় এলাকায় মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগের দু’দল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে মমিন ভূইয়া নামে একজন নিহত হন। এ সময় গভের্র শিশুসহ নাজমা বেগম নামে এক গৃহবধূ গুলিবিদ্ধ হন।
এ ঘটনায় নিহত মোমিন ভুইয়ার ছেলে রুবেল ঘটনার ৩ দিন পর ২৬ জুলাই তার বাবা মোমিন খুন ও মাতৃগর্ভে শিশু গুলিবিদ্ধের ঘটনায় মাগুরা সদর থানায় ১৬ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিদের মধ্যে আজিবর নামে একজন পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।
পরে পুলিশের তদন্তে আরেক আসামি নাম বাদ পড়লেও তোতা, আয়নাল ও মুন্না নামে আরো ৩ জনের নাম যুক্ত হয়।
২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর ১৭ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন