১৫ নভেম্বর গভীর রাত। চার পাশে অন্ধকার। রাস্তার পাশে এক প্রসূতি যন্ত্রণায় কাতর। দশ মাস ধরে বয়ে বেড়ানো যন্ত্রণা থেকে যেন মুক্তির প্রহর গুনছে প্রসূতি। সন্তান প্রসবের যন্ত্রণা কাতর প্রসূতি মা বাকপ্রতিবন্ধী, ভবঘুরে। তাই তার সন্তানের আতুরঘর যশোরের কেশবপুর শহরের ত্রিমোহিনী মোড় এলাকার বনানী টি স্টোরের সামনের খোলা জায়গা। প্রসব যন্ত্রণায় কাতর প্রতিবন্ধীর চিৎকারে এগিয়ে যান পাতা কুড়ানী হাফিজা খাতুন। প্রসব যন্ত্রণা থেকে মুক্তি এনে দেন তিনি। অবশেষে পুত্রসন্তানের আগমন ঘটে প্রতিবন্ধী নারীর কোলজুড়ে। রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে চরম অবহেলায় যে শিশুর আতুরঘর, তার জন্মের আগমনে নেই কোন আনন্দ আয়োজন। বরং তার জন্মই যেন আজন্ম পাপ। মা হওয়াটা যেন তার অভিশাপ। ফুটফুটে সন্তান কোলে বাকপ্রতিবন্ধী নারীর চোখে মুখে যেন ধিক্কার ছাড়া আর কিছু নেই। সদ্যভূমিষ্ঠ সন্তানের মা হওয়াটা তখনই আনন্দের হত, যখন পিতৃপরিচয় মিলতো। সন্তান হয়তো কোনদিন তার পিতার পরিচয় জানতে পারবে না। তার পিতাও হয়তো কোনদিন সন্তানের দাবি নিয়ে আসবে না। লালসার শিকার বাকপ্রতিবন্ধীর সঙ্গে অন্যায়ের বিচারও হয়তো চাইবে না কেউ কোনদিন। দত্তক সন্তান হিসেবেই শিশুটি হয়তো পাবে মা, বাবার পরিচয়। তাদের বুকেই দেখবে পৃথিবীটাকে।
.
১৫ নভেম্বর সকালে জন্মের পর শিশু ও মাকে ভর্তি করা হয় কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। মা ও সন্তান দুজনই সুস্থ আছে বলে জানালেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার পলাশ দে।
জানতে চাইলে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) কবীর হোসেন বলেন, ১৫ নভেম্বর গভীর রাতে বাকপ্রতিবন্ধী ভবঘুরে ওই নারী পুত্রসন্তান প্রসব করেছে। তাপস সাহা নামের এক ব্যক্তির উদ্যোগে নবজাতক ও মাকে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসার পর মা ও শিশু দুজনই সুস্থ আছে। ভবঘুরে মহিলার পরিচয় পাওয়া যায়নি। সে নিজেও কথা বলতে পারে না। রোববার নবজাতক ও তার মাকে সেফ হোমে পাঠানো হবে। এরপর আদালতে পাঠানো হবে। বিজ্ঞ আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেই মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভারপ্রাপ্ত ইউএনও কবীর হোসেন বলেন, সামাজিক অবক্ষয়ের অংশ হিসেবে কোন পুরুষের লালসার শিকার ওই মহিলা। বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় কাউকে হয়তো বলতে পারেনি পাশবিক নির্যাতনের কথা। পুত্রসন্তান জন্ম দিয়েছে। ঘটনাটি শোনার পর মানবকি দিক বিবেচনায় শিশু ও তার মাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। এখন সুস্থ আছে। শিশুটিকে একটি দম্পতি দত্তক নিতে আগ্রহী। এ বিষয়ে আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটিই হবে চূড়ান্ত।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন