অন্তরঙ্গ মুহূর্তে দানিয়ালের সাথে লুবনা (বাঁয়ে); আল-আমিন রাজু ও লুবনা : নয়া দিগন্তঅন্তরঙ্গ মুহূর্তে দানিয়ালের সাথে লুবনা (বাঁয়ে); আল-আমিন রাজু ও লুবনা : নয়া দিগন্ত
বরগুনার পাথরঘাটায় তরুণীকে গণধর্ষণ করে হত্যা এবং পরে লাশ কলেজ পুকুরে লুকিয়ে রাখার অপরাধে ছাত্রলীগের চার নেতাকে গ্রেফতার এবং বিলুপ্ত কলেজ কমিটির দানিয়ালের সাথে লুবনা মনির ঘনিষ্ঠ ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। এ ঘটনায় পাথরঘাটার মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে, সবার মুখে একই কথা, কে এই লুবনা?
লুবনা মনি পাথরঘাটা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও পাথরঘাটা সনি সিনেমা হলের সাবেক ব্যবস্থাপক শাহ আলমের মেয়ে। মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত থাকাকালীন পৌর শহরের ৭নং ওয়ার্ডের মো: সাজ্জাদ হোসেন বাবু নামের এক ছেলের সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তার তালাক হয় এবং পরে আবার বাবুর সাথে দ্বিতীয়বার বিয়ে হয়। কিন্তু দানিয়ালের সাথে ঘনিষ্ঠতা টের পেয়ে লুবনাকে ছেড়ে খুলনা চলে যায় বাবু। এরপর তৃতীয়বার গোপনে বিয়ে হয় আরেক ছেলের সাথে। সেখানে বেপরোয়া জীবনযাপনের জন্য ঘর বাঁধা হয়নি লুবনার। বর্তমানে লুবনা পাথরঘাটা উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও পাথরঘাটা কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। কলেজ শাখার সভাপতি রুহী আনান দানিয়াল তার দূর সম্পর্কের ভাই হলেও তাদের ঘনিষ্ঠতার আলোচনা রয়েছে পাথরঘাটার সর্বত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লুবনা মনির কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়। এর মধ্যে একটি ছবিতে দানিয়াল লুবনাকে জড়িয়ে রয়েছে এবং অপর একটিতে উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন রাজুর মুখে সিগারেট ধরিয়ে দিতে দেখা যায় লুবনাকে।
উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি লুবনা মনিকে জড়িয়ে ছাত্রীদের যৌন হয়রানিতে ওই দুই নেতা রুহি আনান দানিয়াল ও সাদ্দাম হোসেন ছোট্টকে সহযোগিতার একাধিক অভিযোগ উঠেছে।
পাথরঘাটা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগÑ পাথরঘাটা কলেজে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল সভাপতি রুহি আনান দানিয়াল ও সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ছোট্ট এবং এই নারী নেত্রী লুবনার। তাদের আধিপত্যে জিম্মি ছিল কলেজের শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কলেজে রেজাল্ট ও ফরম পূরণসহ সবকিছু ওই নেতাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নানা কৌশলে বাধ্য করে প্রায় শতাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে ওই নেতা ও তাদের দলীয় সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
পাথরঘাটা কলেজে অধ্যয়নরত বেশ কয়েকজন ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কলেজে প্রতি বছর নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হলেই তাদের মাঝে যেসব মেয়ে সুন্দরী তাদের দিকে সাদ্দাম ও দানিয়ালের নজর পড়ত, তাদের ওই দুই নেতার পক্ষ হয়ে লুবনা মনি ভর্তি, পরীক্ষা, রেজাল্ট ও ফরম পূরণে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেয়ার প্রপোজ করতেন ও মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে দিত। এই নেত্রীর ফাঁদে পড়লেই ওই সব ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়া হতো। এতে রাজি না হলে নানাভাবে ওই ছাত্রীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করত দানিয়াল, সাদ্দাম ও লুবনা। এতে কাজ না হলে একপ্রকার জোর করেই কলেজের ছাদে নিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করত তাদের।
তারা আরো জানান, কলেজে দানিয়াল ও সাদ্দামের বিশেষ একটি জায়গা রয়েছে। এখানে শিক্ষক বা সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিষেধ। লুবনা মনি কৌশলে টার্গেট করা ছাত্রীদের ছাদে নিয়ে অপক্ষেমাণ সাদ্দাম ও দানিয়ালের কাছে পৌঁছে দিত।
পাথরঘাটা কলেজের উপাধ্যক্ষ মো: জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের জানান, এমন সব ঘটনা আমার জানা ছিল না। তবে দানিয়াল ও সাদ্দাম ভর্তি ফরম পূরণসহ বিভিন্ন ব্যাপারে সুপারিশের জন্য আসত। তাদের উদ্দেশ্য আমরা অবগত ছিলাম না। তবে তারা যদি ঘৃণ্য অপকর্মের সাথে লিপ্ত থাকে তবে তাদের কঠোর বিচার হওয়া উচিত।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন