পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকটের দ্বিপক্ষীয় এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান দেখতে চেয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তিনি এবার বললেন এমন হলে তার দেশ কারো পক্ষ নেবে না। রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সন্ধ্যায় দূতাবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে বেইজিংয়ের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যকার চলমান দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ও সংলাপকে উৎসাহিত করেছেন। রাখাইন ইস্যুতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনায় বেইজিং সমাধান দেখতে চায় জানিয়ে তারা বলেন, এ নিয়ে চীন তার ঘনিষ্ট দুই প্রতিবেশীকে (বাংলাদেশ ও মিয়ানমার) প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিয়ে যাবো। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার অংশ হিসেবে মন্ত্রী মাহমুদ আলীর আসন্ন মিয়ানমার সফর এবং রোহিঙ্গাদের ফেরানো সংক্রান্ত চুক্তি সইয়ের প্রস্তুতির প্রশংসা করেন বেইজিংয়ের প্রতিনিধিরা।
অবশ্য রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফেও ‘দ্বিপক্ষীয় আলোচনা’য় চীনের তাগিদের বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও থার্ড কমিটির বৈঠকে মিয়ানমারের পক্ষে চীনের স্পষ্ট অবস্থান নেয়ার প্রেক্ষাপটে শনিবারের বৈঠকে বেইজিং ‘এখন থেকে আর কারো পক্ষ নেবে না’ এমন ঘোষণা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকার কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ওই বৈঠকে ঢাকা-বেইজিং দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলোর পাশাপাশি আঞ্চলিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়েও কথা হয়েছে। সেখানে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের মাইলস্টোন ঢাকা ভিজিটের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদানে তার দেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এ অঞ্চলের শান্তি এবং সমৃদ্ধির জন্য চীনের মন্ত্রী যোগাযোগ-কানেকটিভিটিতে গুরুত্ব দিয়েছেন। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ঘাটতি কমানোর উদ্যোগ নেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, রাখাইনে নির্যাতনের কারণে বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ মিয়ানমার নাগরিকের বাংলাদেশে অস্থায়ী আশ্রয় গ্রহণ বিষয়ে উত্থাপিত আলোচনায় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, বন্ধু হিসেবে চীন এর একটি সমাধান দেখতে চায়। এ ক্ষেত্রে চীন কারও (বাংলাদেশ কিংবা মিয়ানমার) পক্ষ নেবে না। একই সঙ্গে মন্ত্রী মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা এবং সংলাপের ওপর জোর দেন। সীমান্তে রোহিঙ্গা-স্রোত অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশ যে ধকল সাইছে তা স্বীকার করে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা তাদের উভয় বন্ধুর মধ্যকার সমস্যাটির শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। তিনি বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন। রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে (রাখাইনে) দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে ফেরত পাঠাতে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বাংলাদেশ যুক্ত রয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাহমুদ আলী এ ইস্যুতে চীনের সমর্থন আশা করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন