নাটোরে জোড়া খুনের ঘটনায় মাদককেই দুষছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তাঁরা মনে করছেন, মাদকের কারণে সদর উপজেলার দস্তানাবাদ ফকিরপাড়া গ্রামের পেয়ারাচাষি শাহাদত সরদারের পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে।
গত রোববার রাতে শাহাদত সরদারের ছেলে আলম সরদার তাঁর মা বিলকিস বেগম (৪২) ও ছেলে আলিফ সরদারকে (১১) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। বাবা শাহাদত সরদারকেও কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। এলাকাবাসী আলম সরদারকে ধরে পুলিশে দিয়েছেন। বাবা শাহাদত সরদারকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সোমবার বিকেলে বিলকিস বেগম ও শিশু আলিফের লাশ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। সকালে শাহাদত সরদারের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। বাইরের একটি জানালার ভাঙা অংশ দিয়ে উৎসুক জনতা ভেতরে দেখার চেষ্টা করছে। বাড়ির সামনে মানুষের জটলা।
শাহাদতের ভাই শহিদুল ইসলাম বলেন, ওই বাড়িতে তাঁর ভাই শাহাদত সরদার, ভাবি বিলকিস বেগম ও তাঁদের একমাত্র নাতি আলিফ সরদার থাকত। রোববার রাতে ভাই-ভাবির একমাত্র ছেলে আলম নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বাড়ি গিয়ে তাঁর মা ও নিজের ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেন। বাবা শাহাদতকেও কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন।
শহিদুল ইসলাম বলেন, মাদকের কারণে এই হত্যাকাণ্ড। তাঁর ভাই-ভাবির এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে নাটোরের সিংড়ায়। ছেলে আলম কলেজে পড়ার সময় থেকে মাদকাসক্ত। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই লেখাপড়া বন্ধ করে দেন। পশুর চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু নেশা ছাড়তে পারেননি। পশুর চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেলে তিনি পেয়ারা ব্যবসা শুরু করেন। মাদকাসক্তি কাটবে, এই আশায় ছেলের বিয়ে দেন শাহাদত-বিলকিস দম্পতি। কিন্তু তাতেও কিছু হয়নি। আলমের সংসারে আসে দুই ছেলে। ছোট ছেলে গত বছর পুকুরে ডুবে মারা যায়। মাদক সেবন আর প্রতিদিন গভীর রাতে বাড়ি ফেরা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই বিবাদ হতো। একপর্যায়ে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায় আলমের। নাতি আলিফ রয়ে যায় দাদা-দাদির কাছে। আলমকে বাড়ি থেকে বের করে দেন শাহাদত। গ্রামের অন্য একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতে শুরু করেন আলম। চার মাস আগে তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। কিন্তু মাদকের কারণে এই সংসারও টেকেনি। এক সপ্তাহ আগে আলম মা-বাবার সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। রোববার মাদক সেবন করে সন্ধ্যার পর বাড়িতে যান তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন