কুড়িগ্রামের চিলমারীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকলেও চলতি প্রাইমারি এ্যডুকেশন সার্টিফিকেট পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানের হলে ৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। একই বিদ্যালয়ের হয়ে একাধিকবার পিইসি পরীক্ষায় অংশ নেবার অভিযোগও রয়েছে। এসব কাগজ-কলমে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও বাস্তবের সাথে পুরোটাই ভিন্ন। উপজেলা শিক্ষা প্রশাসন বিষয়টি জানা নেই অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস।
সরেজমিনে দেখাযায়, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের সরকার পাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সাইনবোর্ড আছে ক্লাস কক্ষে সাইন বোর্ড ছাড়া বিদ্যালয়ের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয়ের টিনসেড ঘরে একজন ভাড়াটিয়া রয়েছেন প্রায় ৬ বছর থেকে।
কক্ষে ভেতর দেখা যায় ব্রেঞ্চ, টেবিল, চেয়ার কিংবা পাঠদানের উপকরণের পরিবর্তে খাট, টেবিল, সোফা এবং রান্নার সরঞ্জামাদি। শরীফের হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১নং কেন্দ্রে দেখা গেল সরকার পাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬ জন শিক্ষার্থী পিইসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
এদের মধ্যে ২৩৩৮নং রোলের পরীক্ষার্থী পারভেজ মিয়া বিদ্যালয় সম্পর্কে জানায়, তাদের একতলা বিশিষ্ট পাকা ভবন। তারা নিয়মিত ভাবে স্কুলে ক্লাস করে। অপর দিকে ২৩৩৯নং-এ মারুফ হাসান, ২৩৪০নং-এ আতিকুর রহমান, ২৩৪১নং-এ রবিউল হাসান, ২৩৪২নং লুবনা জাহান, ২৩৪৩নং-এ সিমা আক্তার পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৫সালে পিইসি পরীক্ষায় ২৪৫৪নং রোলে মোছা: লুবনা জাহান, জন্ম তারিখ-১৮/১০/২০০৪ইং, পিতা- সাইফুল ইসলাম, মাতা- নুরজাহান বেগম, গ্রাম-সরকার পাড়া। পরের বছর আবার পিতা-মাতা এবং ঠিকানা একই দিয়ে লুনা আক্তার, জন্ম ৩০/১১/২০০৬ইং, রোল ২৫৮৬ নং-এ পিইসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। চলতি পরীক্ষায় ২৩৪২নং লুবনা জাহান,জন্ম তারিখ-০১/০৬/২০০৭ইং, পিতা- সাইফুল মাতা- নুরজাহান একই ঠিকানা দিয়ে অংশ নেয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে অংশ নেয়া পরীক্ষার্থী জানান, সে এবারেই প্রথম পরীক্ষা নিচ্ছে। কিন্তু তার সহপাঠি এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বিদ্যালয় ভবন সম্পর্কে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।
কেন্দ্র সচিব আফরোজা বেগম বলেন, সরকার পাড়া বেসরকারি বিদ্যালয় সহ ২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬৭৮জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। এদের মধ্যে প্রথম দিনের ইংরেজি পরীক্ষায় ৩৭জন অনুপস্থিত রয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক সাইফুর রহমান জানান, গ্রামের মৃত আব্দুল হাই সরকারের দেয়া ৩৮ শতক জমিতে ১৯৯৪ সালে নির্মাণ করা হয় সরকার পাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। কিন্তু ১৯৯৭ সালে সরকারের পরিপত্র অনুযায়ী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর ৩৩ শতক জমি ৪০ হাত ঘর এবং প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে ৩ লাখ টাকা থাকতে হবে। সে অনুযায়ী অর্থ না থাকায় বিদ্যালয়টি রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম স্থগিত হয়ে পড়ে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যালয়টি। কিছু অসাধু কর্তকর্তা এবং স্থানীয় বাটপাররা যোগসাজসে ২০১৫ সালে থেকে কাগজ কলমে পিইসি পরীক্ষায় এই বিদ্যালয়ের নামে শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়ে আসছে। নিয়মিত সরকারের দেয়া বই উত্তোলন করা হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দেখে।
আব্দুল হামিদ (৫০), আব্দুল আল মামুন (২৩), লাকি আক্তার (৩০) স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৬ বছরের বিশি সময় ধরে সরকার পাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ক্লাস বন্ধ আছে। এখানে একজন ভাড়াটিয়া কয়েক বছর ধরে আছে। যারা পিইসি পরীক্ষায় অংশ নেয় তারা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। শতভাগ পাশ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি করণের জন্য টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া শিক্ষার্থী দিয়ে পরীক্ষা দেয় হয়। উপজেলা শিক্ষা প্রশাসন বিষয়টি জানলে তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
সরকার পাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বর্তমান প্রধান শিক্ষক নুরজাহান বেগম বলেন, নিজেকে প্রধান শিক্ষক অস্বীকার করেন। কিন্তু প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীর বিররণীতে তাকে প্রধান শিক্ষক দেখানো হয়েছে প্রশ্নে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
এছাড়া তিনি জানান নিয়মিতভাবে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হাজিরা, পাঠদান চলছে। তার বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি সটকে পড়েন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আমজাদ হিসেবে পরিচয় দিয়ে জানান, বিদ্যালয়ে ১৩০জন শিক্ষার্থী রয়েছে। পিইসি পরীক্ষায় সিস্টেমের মাধ্যমে পরীক্ষায় দেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এখন পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয় পরিদর্শন করতে যাননি। তবে গাফলতির অভিযোগ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের উপর চাপিয়ে দেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন