‘আমাদেরকে মালিক মারে, পুলিশ মারে। এখন আবার উবার–পাঠাও মারা শুরু করছে! আমরা যাব কোথায়? খামু না? বৌ ছেলেমেলে না খেয়ে থাকবে? পোলাপানের লেখাপড়া বাদ দিয়ে শহর ছেড়ে দিমু?’
এভাবেই আক্ষেপ করে এনটিভি অনলাইনকে বলছিলেন রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলের সামনে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আনুমানিক ৪৫ বছর বয়সী ওবায়দুর রহমান।
ওবায়দুর আক্ষেপ করে বলেন, ‘যত স্থানে সিএনজি নিয়ে যাই বিশেষ করে পার্কিংয়ে পুলিশ বা লাঠিয়াল বাহিনী থাকলেই তাদের টাকা দিতে হয়। না দিলে পার্কিংয়ে দাঁড়াতে দেয় না। না দাঁড়ালে যাত্রী পাব কই?
গতকাল বসুন্ধরা শপিং মলের সামনে হুমায়ুন নামের একজন পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে থেকে প্রত্যেক অটোরিকশা চালকের কাছ থেকে ১০ টাকা করে চাঁদা নিচ্ছিলেন। এই ঘটনা এই প্রতিবেদকের চোখে পড়লে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন চালকের সঙ্গে এই চাঁদা নিয়ে কথা হচ্ছিল। এরপর প্রতিদিন পুলিশ তাদের কীভাবে হয়রানি করে সেই প্রসঙ্গে কথা বলছিলেন।
সে সময় হুমায়ুন নামের ওই পুলিশ সদস্য এসব বিষয় জানতে পেরে সব অটোরিকশা চালককে তাড়িয়ে দেন বসুন্ধরা শপিং মলের সামনে থেকে।
ওই সময় শহিদুল নামের অন্য এক অটোরিকশাচালক বলেন, ‘দেখছেন কি অবস্থা? তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছি বলে তাড়িয়ে দিল লাইন থেকে। অথচ একে একে লাইনের সামনে আসতে সময় লেগেছে প্রায় দেড় ঘণ্টা! আমরা কার কাছে যাব?’
রাজধানীর কাজীপাড়ায় অটোরিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মনিরুল ইসলামও আক্ষেপ করে বলেন, ‘মালিককে ভাড়া দিতে হয় এক হাজার টাকা। গ্যাস খরচ যায় ২০০ টাকা। সারা দিনে নিজের ২০০ টাকা খাওয়া এবং পকেট খরচ লাগে। এই এক হাজার ৪০০ টাকা আগে তুলতেই হবে। তার পরে লাভের চিন্তা। বেচে থাকা দায়।’
মনিরুল আরো বলেন, ‘ছোট ছোট ভাড়ায় গেলে পেট বাঁচানো দায়। এসব কারণ ছোট ভাড়ায় যেতে পারি না। আর তাতেই যাত্রীরা আমাদের ওপর খেপে আগুন। আমরা জানি আমাদের অনেক সমস্যা আছে। তাহলে কি আমরা সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালানো ছেড়ে দেব?’
রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশা চালক আলমগীর বলেন, ‘আমরা সিএনজি চালাই মানে বাংলাদেশের সবচেয়ে খারাপ কাজটা করি। সবার আচরণ দেখে তাই-ই মনে হয়।’
গুলিস্তানে দাঁড়িয়ে থাকা মিরাজ নামের এক চালক বলেন, ‘দিনে ও রাতে সিএনজি চালালে মালিককে দিতে হয় এক হাজার ৬০০ টাকা। ভাড়া কম হোক কি মোটেও না হোক এসব মালিক দেখবেই না। তারা শুধু টাকা চেনে। আর কিছুই চেনে না। তার ভিতরে আবার উবার ও পাঠাও এসে আমাদের মারার চেষ্টা করছে। কোথায় যাব আমরা?’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন