রাজধানীর নীলক্ষেতের ফুটপাতে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় ক্র্যাচে ভর করে ধীরে ধীরে পথ চলছিল মধ্যবয়সী লোকটি। বয়স আনুমানিক ৫০-৫৫ বছর। গলার সামনে পেছন থেকে ফিতায় বাঁধা লেমিনেটিং করা দুটি নোটিশ আকারের কাগজ ঝুলছিল।
‘তাতে লেখা, আসসালামু আলাইকুম, অন্ধ হাফেজকে সহায়তা করুন। যে যা পারেন, যার যার সামর্থ অনুযায়ী। সে হাফেজী পাস। কোনো কাজ করতে পারে না। দয়া করে যে যা পারেন, অন্ধ হাফেজকে সহায়তা করুন।’
পথচারীদের অনেকেই গলায় ঝুলানো নোটিশটি পড়ে থমকে দাঁড়িয়ে দু’চার টাকা সাহায্য দিচ্ছিল। কেউ আবার প্রশ্ন করছিল, লোকটি যে অন্ধ তা তো বোঝা যাচ্ছে কিন্তু তিনি কি আসলেই হাফেজ?
কৌতুহলবশত এ প্রতিবেদক তার নাম পরিচয় জানতে চাইলে অন্ধ হাফেজ জানান, তার নাম হাফেজ মো. হামিদ। ফরিদপুরের বাহাদুরপুরের একটি মাদরাসা থেকে ত্রিশ বছর আগে হাফেজী পড়েছেন।
কথা প্রসঙ্গে জানালেন, তিনি জন্মান্ধ নন। চিকেন পক্সে আক্রান্ত হয়ে দু’চোখ অন্ধ হয়ে যায়। অন্ধ হওয়ার আগে তিনি কোরআনের হেফজ করা ছাড়াও এসএসসি পাস করেছেন। তিনি বিবাহিত ও তিন সন্তানের জনক। বর্তমানে পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লার মোড়ে থাকেন।
তিনি আরও জানান, অন্ধ হওয়ার পর অনেক দিন চেষ্টা করেও চাকরি পাননি। অন্ধ হওয়ায় কেউ তাকে চাকরি দিতে রাজি হয়নি। তাই শেষ পর্যন্ত অন্ধত্বকে পুঁজি করে ভিক্ষা করছেন। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রতিদিন সকালে বাসা থেকে বের হয়ে শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাট ঘুরে ভিক্ষা করেন। তবে তিনি মুখে ভিক্ষা চান না। গলায় ঝোলানো নোটিশ দেখে কেউ কেউ টাকা দেন।
মো. হামিদ সত্যিই হাফেজ কিনা প্রমাণ হিসেবে কোরআন শরীফের আয়াত তেলাওয়াত করতে বললে তিনি সঙ্গে সঙ্গে কোরআন শরীফ আয়াত তেলাওয়াত করতে শুরু করেন।
দৈনিক কত টাকা রোজগার করেন জানতে চাইলে বলেন, আপনারা যে যা দেন তাই দিয়ে কোনোভাবে সংসার চালিয়ে যাচ্ছি। তবে ভিক্ষা করতে মোটেও ভালো লাগে না।
এ প্রতিবেদককে তিনি জানান, যদি কেউ দয়া করে একটা চাকরি দিতো তবে আর ভিক্ষা করতে হতো না। তার মোবাইল নম্বর চাইলে তিনি মোবাইল নেই জানিয়ে বলেন, তিনি লালবাগ বকশিবাজারের জাতীয় অন্ধ সংস্থা অফিসে নিয়মিত যান। সেখানকার সেক্রেটারির কাছে তার খোঁজ করলেই পাওয়া যাবে। এ কথা বলে তিনি হাঁটতে শুরু করেন এবং বললেন, মাত্রই হাঁটতে শুরু করেছি, দিনভর হাঁটতে হবে বহুটা পথ, যেতে হবে বহুদূর।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন