ব্যাংকিং খাতে পরিবারতন্ত্রকে গুরুত্ব দিয়ে আইনের সংশোধন হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এই সংক্রান্ত একটি বিল জাতীয় সংসদীয় কমিটি চূড়ান্ত করেছে আর এই আইনটি জাতীয় সংসদে চলমান অধিবেশনে উন্থাপন করা হলে বিলটি পাশ হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত এই আইনে বলা হয়েছে যে কোনো বেসরকারি ব্যাংকে একই পরিবারে চারজন পর্যন্ত সদস্য পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারবে। অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন, ব্যাংকিং আইনে এ ধরনের পরিবর্তন তাদের ভাষায় ব্যাংকিং খাতে লুটপাট এবং চরম অব্যবস্থাপনার সৃষ্টি করতে পারে।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আগে ব্যাংকিং খাতে একই পরিবারের দু’জন সদস্য থাকতে পারত। এখন আইন সংশোধনের মাধ্যমে একই পরিবারের চারজন সদস্য থাকলে কোনো সমস্যা হবে না। আইনকে পাশ কাটিয়ে যে কাজটি আগে নানা ভাবে অস্বচ্ছ উপায়ে করা হতো সেটি যদি আইনের মাধ্যমে করা হয় তা হলে স্বচ্ছতা আসবে।
দেশের একটি বেসরকারি খাতের ব্যাংকে গত বেশ কিছু দিন ধরে আইনের তোয়াক্কা না করে একই পরিবারের পাঁচজন সদস্য ব্যাংকটির পরিচালক রয়েছেন। সে ব্যাংটি বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বিশৃঙ্খল ব্যাংক হিসাবে পরিচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডিপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, সেই ব্যাংকটিতে গত তিন বছরে তিনজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিবর্তন হয়েছে। এবং গত নয় মাস ধরে সেখানে কোনো পরিচালকই নেই। সে ব্যাংকটির উদাহরণ টেনে ইব্রহীম খালেদ বলেন, নতুন আইন পাশ হলে সেটা ব্যাংকিং খাতকে কোন দিকে নিয়ে যাবে তা নিয়েই উদ্বেগ।
তিনি আরো বলেন, ব্যাংকিং খাতে ২২ পরিবার নামে পরিচিত ছিল কতিপয় ধনী ব্যক্তি। যাদের কাছে দেশের ৮০% সম্পদ কুক্ষিগত ছিল। তারা প্রত্যেকেই একটা করে ব্যাংকের মালিক ছিলেন। বঙ্গবন্ধু এবং বাঙালীরা ২২ পরিবারের বিরোধীতা করেছিলেন সমতায় আনার জন্য। এখন ব্যাংকিং খাতে নতুন আইন পাশের মাধ্যমে আমরা কি আবার ২২ পরিবারের ব্যাংকিং পরিবারতন্ত্রে ফিরে গেলে কি ভাল হবে? আগেই একবার প্রমাণিত হয়েছে যে ২২ পরিবার লুটতরাজের জায়গা।
দেশের বেসরকাকি ব্যাংকগুলোর যারা উদ্ধোক্তা তাদের বেশির ভাগই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত। গত নয় বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে দলটির নেতা কিংবা তাদের রাজনৈতিক মিত্ররা বেশ কয়েকটির ব্যাংকের অনুমোদন পেয়েছে। যে সংসদীয় কমিটি এখন ব্যাংকিং খাতের আইন সংশোধনের সমর্থন করছেন। তারা এর আগে একই পরিবারের পাঁচজন সদস্য থাকার বিরোধীতা করে ছিলেন। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যাংকের মালিকদের চাহিদাই পূরণ করা হচ্ছে কিনা সেটি সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ইব্রাহীম খালিদ।
একই পরিবারের পাঁচজন সদস্য থাকার বিরোধীতা করে ছিলেন সংসদীয় কমিটি কিন্তু পরবর্তীতে তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেন। এসম্পর্কে আব্দুর রাজাক বলেন, আমরা আগে একই পারিবার পাঁচজন সদস্য থাকার বিরোধীতা করেছিলাম কিন্তু পরবর্তীতে মন্ত্রীসভার কমিটিতে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে। পরে আমরা আমাদের অবস্থান পরিবর্তন করি।
বিশ্লেষকরা বলছেন বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা পরিচালকরা যে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু অর্থিক শৃঙ্খলা না ভেবে রাজনৈতিক প্রভাবকে যদি প্রাধান্য দেয়া হয় সেক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাত নিয়ে গ্রাহকদের মাঝে চরম আস্থাহীনতা তৈরি হবে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন