‘এই শইল (শরীর) লইয়্যা বাইরে যাইতাম পারি না। কেউ দেখলেই নাকো ধরে।
মশা-মাছি বয়। সব সময় কালি জ্বলে আর কাইজ্জায়(চুলকানো)। স্যার, আমারে একটা মলম দিবাইন-এই যন্ত্রণা আর ভালা লাগে না-’ দগ্ধ শরীর নিয়ে এইভাবে কান্না করে কথা গুলি বলে নয় বছরের শিশু রূপা। ঢাকার এক বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করার সময় গত প্রায় এক বছর আগে গ্যাসের চুলা থেকে আগুন লেগে শরীরের বিভিন্ন স্থান পুড়ে যায়। বাসার মালিক চারমাস চিকিৎসা করালেও এখন শিশুটি গ্রামের বাড়িতে এসে বেকায়দায় পড়েছে। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে কবিরাজের দ্বারস্থ হয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে।
স্থানীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রুপা নামে মেয়েটি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সিংদই গ্রামের মৃত ফজর আলীর কন্যা। এ বয়সে সহপাঠিদের নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় দাপিয়ে বেড়ানোর কথা। কিন্তু দারিদ্রতার কারণে পিতৃহীন রূপার ভাগ্যে জুটেনি স্কুলজীবনের আনন্দ।
তাই পরিবারের দৈন্যদশা কাটাতে তাকে বেছে নিতে হয়েছে গৃহপরিচারিকার কাজ। এ ভাবেই চলছিল শিশুটির জীবন।
জমিজমা ও বসভিটেহীন শিশুটির পরিবার অবাবে পড়ে গত বছরের জানুয়ারি মাসে পিতৃহীন শিশুটিকে ঢাকায় অবস্থান করা প্রতিবেশি আনিস নামে একজনের বাসায় দিয়ে দেন। সেখানে মনিবের শিশুর কাপড় শুকাতে যায় গ্যাসের চুলায়। রুপায় মা সুফিয়া বলেন, কাপড় শুকানোর সময় তাঁর মেয়ের গায়ে থাকা শীতের পোশাকে গ্যাসের চুলা থেকে আগুন ধরে যায়। ওল জাতীয় পোশাকের কাপড়ে আগুন ধরে কোমরের নিচ ও পেটের অংশ ঝলসে যায় রূপার।
সুফিয়া আরও বলেন, বাড়ির মালিক তার মেয়েকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আগুনে পোড়া রোগীদের যেখানে চিকিৎসা করা হয় (বার্ন ইউনিট) সেখানে নিয়ে ভর্তি করে। টানা চারমাস চিকিৎসার পর ক্ষতস্থান কিছুটা টান (শুকানো) ধরে। কিন্তু শারীরিকভাবে দুর্বল থাকায় হাসপাতালের চিকিৎসক রূপার শল্যচিকিৎসা (সার্জারী) করতে চায়নি। অজ্ঞান করলে জ্ঞান না-ও ফিরতে পারে বলে চিকিৎসকের আশঙ্কা। ফলে রূপাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন তিনি। তবে যে বাড়িতে তার মেয়ে কাজ করতো সেই বাড়ির মালিক মাঝেমধ্যে কিছু টাকা পাঠান।
আজ বুধবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রূপা বাড়ির পাশে একটি পুকুর পাড়ে বসে অন্য শিশুদের খেলা দেখছে। আর সে দগ্ধ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকাচ্ছে এবং আহ উ করছে। বেদম চুলকানির কারণে মেয়েটি চোখমুখ বিকৃত হয়ে আসছে। ক্ষতস্থানের চামড়ায় টান পড়ায় সোজা হয়ে দাড়াতে পারে না। খেলার সাথীদের সাথে যোগ দিলেও যন্ত্রণায় কাতর শরীর নিয়ে খেলতে পারছে না সে। এভাবেই প্রতিটা দিন কাটছে শিশু রূপার। রূপা জানায়, সে সবসময় মশারির নিচে থাকে। কিছুক্ষণ আগে সে এখানে এসেছে। কিন্তু কিছুই তাঁর ভালো লাগে না।
রুপার নানী জরিনা বেগম (৬৫) বলেন, ‘আমরার কিছুই নাই। পরের ভিডায় বসবাস করছি। ছেড়িডার (শিশু রুপা) বাপও নাই। আয় রোজগারের অন্য লোকও নাই। তার মা ছেড়িডারে লগে লইয়্যা নানা জায়গায় গিয়া মাইগ্যা (ভিক্ষা) আনে। তা দিয়াই কোনে মতে জীবনডা চলছে। ওষুধ খাওয়ানোর টেহা নাই। জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের এক কবিরাজ ঝাঁড়ফুক ও একটু মলম লাইগ্যা দেয়। এতেই চলছে চিকিৎসা।
শিশুটির গ্রামের লোকজন জানান, রুপা আগের চেয়ে অনেক ভালো। কিন্তু পেটের অংশ এখনো শুকায়নি। সঠিক একটুখানি চিকিৎসা হলেই রূপা পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু হতদরিদ্র ওই পরিবারটি চিকিৎসা করাতে না পেরে চিকিৎসকের কোনো পরামর্শ ছাড়াই ক্ষতস্থানে নারিকেল তেল মেখে রাখছে। আর চুলকানির ট্যাবলেট কিনে খাওয়াচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
Ama k kono oi a laker vai soho jogita korl a ami kick help kortam ai coto bassa tI k.447852514207 London
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন