মায়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরাতে অং সান সু চি ও আবুল হাসান মাহমুদ আলীর মধ্যে ‘ইতিবাচক’ আলোচনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে দেশটির রাজধানী নেইপিদো’তে তাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৪৫ মিনিট বৈঠক চলে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। স্থানীয় সময় দুপুর ২টার মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে। এরপর তারা ব্রিফিং করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাষ্ট্রীয় প্রধান উপদেষ্টা অং সান সু চির সাথে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের বৈঠকের পর চুক্তিটি সই হওয়ার কথা রয়েছে।
বর্তমানে মায়ানমার সফরে আছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। বুধবার মায়ানমারের রাজধানী নেইপিদোয় দুই দেশের সচিব ও মন্ত্রী পর্যায়ে দিনভর বৈঠকের পর সন্ধ্যায় এই চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এদিন চুক্তির একটি খসড়া মায়ানমারের কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ। পরে এ নিয়ে দুদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়।
প্রত্যাবাসন চুক্তির অগ্রগতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। নেইপিদোয় সদ্য সমাপ্ত আসেম বৈঠকে ইউরোপ ও এশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় এই চুক্তি সইয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। আন্তর্জাতিক ফোরামে মায়ানমারের জোরালো সমর্থক চীন উদ্বাস্তু সঙ্কট নিরসনে যে তিন দফা প্রস্তাব দিয়েছে, প্রত্যাবাসন চুক্তি তার অন্যতম।
গত ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংঘাত শুরু হয়। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্যসহ শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হন। সহিংসতার হাত থেকে বাঁচতে প্রায় ৬লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। শরণার্থীর স্রোত এখনো অব্যাহত আছে। বিভিন্ন সময়ে আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ ছড়িয়ে গেছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঢাকার বিপক্ষে যারা
মায়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের থার্ড কমিটিতে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। এতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভিযান বন্ধ, তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন এবং নাগরিকত্ব দেয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক সময় সকালে ভোটাভুটির পর এই প্রস্তাব গৃহীত হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ১৯৩ সদস্যে মধ্যে ১৭১ সদস্য বৈঠকে উপস্থিত, এবং ২২টি দেশ অনুপস্থিত ছিল।
ভোটাভুটিতে অংশ নেয়া ১৩৫টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ১০টি দেশ। আর উপস্থিত থেকেও কোনো পক্ষেই ভোট দেয়নি ২৬টি দেশ। এর অর্থ, বিরত থাকা দেশগুলো মায়ানমারের গণহত্যাকে সমর্থন করে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে চক্ষু লজ্জায় সরাসরি সেটার সাফাই গাইতে পারছে না। তাই মায়ানমারের বিপক্ষে দাঁড়ানো থেকে বিরত থেকেছে।
বিপক্ষে ভোট দেয়া ১০টি দেশ হলো- রাশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, সিরিয়া, জিম্বাবুয়ে, কম্বোডিয়া, লাউস এবং বেলারুশ।
এছাড়া মায়ানমারের বিপক্ষে ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল বাংলাদেশের প্রতিবেশি ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা। সার্কভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষে ভোট দিয়েছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও মালদ্বীপ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন