বিশিষ্ট সঙ্গীত সাধক, গীতিকার ও বংশীবাদক বারী সিদ্দিকীর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোক বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, বারী সিদ্দিকীর মৃত্যুতে দেশের মানুষ একজন জনপ্রিয় বাংলা লোকসঙ্গীত শিল্পীকে হারালো।
.
তিনি আরও বলেন, যতদিন লোকসঙ্গীত থাকবে, ততদিন বারী সিদ্দিকী বেঁচে থাকবেন।
শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
প্রসঙ্গত, প্রায় এক সপ্তাহ লাইফ সাপোর্টে থাকার পর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী বারী সিদ্দিকী।
১৭ নভেম্বর দিবাগত রাত ১টার দিকে হার্ট অ্যাটাক করলে অচেতন অবস্থায় প্রথমে তাকে ঝিগাতলার ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে স্কয়ার হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে লাইফ সাপোর্ট দেন।
বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও বংশীবাদক বারী সিদ্দিকী। তিনি মূলত গ্রামীণ লোকসংগীত ও আধ্যাত্মিক ধারার গান করেছেন। তার গাওয়া ‘শুয়া চান পাখি’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘সাড়ে তিন হাত কবর’, ‘তুমি থাকো কারাগারে’, ‘রজনী’ প্রভৃতি গানের জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।
বারী সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোণা জেলায় এক সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পরিবারের কাছে গান শেখায় হাতেখড়ি হয়। মাত্র ১২ বছর বয়সেই নেত্রকোণার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে তার আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ অসংখ্য গুণী শিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন। ওস্তাদ আমিনুর রহমান একটি কনসার্টের সময় বারী সিদ্দিকীকে অবলোকন করেন এবং তাকে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন। পরবর্তী ছয় বছর ধরে তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন।
সত্তরের দশকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হন বারী। ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ক্লাসিক্যাল মিউজিকের ওপর পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন ও বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নেন। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সাথে ক্লাসিক মিউজিকের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন।
দীর্ঘদিন সংগীতের সঙ্গে জড়িত থাকলেও সবার কাছে বারী সিদ্দিকী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পান ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর। এই ছবিতে তার গাওয়া ছয়টি গানই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন