প্রাণির সঙ্গে মানুষের ভয়ঙ্কর সংঘর্ষের সাক্ষী হয়ে থাকল সড়কটি। সেখানে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার এক কর্মী সাহস দেখিয়ে হাতির ছবি তুলতে গিয়েছিলেন। বিনিময়ে হাতি তাকে পায়ের তলায় পিষে মেরে ফেলেছে।
.
বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে পশ্চিবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার লতাগুড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়া ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে সবার সামনে এ ঘটনা ঘটে। খবর: এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকার।
নিহতের নাম সাদিক রহমান (৪০)। তিনি জলপাইগুড়ি ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী। সাদিকের বাড়ি রাজগঞ্জ থানার কুকুরজান এলাকায়।
জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের নগদ লেনদেনের টাকা পরিবহনের ছোটগাড়ির নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। তবে সাদিক সরাসরি ব্যাংকের কর্মী ছিলেন না, একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মী হিসেবে ব্যাংকের সঙ্গে নিযুক্ত ছিলেন তিনি।
ঘটনার সময় জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের টাকার গাড়িটি মালবাজার শাখা থেকে জলপাইগুড়ি প্রধান শাখাতে ফিরে যাচ্ছিল। মালবাজার-জলপাইগুড়ির পথেই ৬ কিলোমিটারের গভীর গরুমারার জঙ্গল পেরতে হয়।
জঙ্গলের মহাকালধাম এলাকাতে একটি হাতি বিকেল তিনটা থেকেই জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখে। সামনে হাতি দেখে জাতীয় সড়কের দুই প্রান্তেই গাড়ি-বাইক দাঁড়িয়ে যায়।
অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করে তীব্র হর্ন বাজাতেও শুরু করেন। ক্যামেরার ফ্লাশ, হর্ন, চিৎকার— কোনো কিছুতেই রাস্তা থেকে টলানো যাচ্ছিল না হাতিটিকে।
সামনে হাতি রয়েছে শুনতে পেয়েই গাড়ি থেকে নেমে যান সাদিক। গাড়ির চালক, কর্মী সকলে বারণ করলেও তা শোনেননি তিনি।
গাড়ির লাইন পেরিয়ে একেবারে হাতির সামনে পৌঁছে যান সাদিক। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকেই চিৎকার করে তাকে সরতে বলেন। সাদিক সে সব শোনেননি।
এরপর সামরিক কায়দাতেই হাতির দিকে তাকিয়ে স্যালুট দেন সিদ্দিক। অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে থাকা হাতিটি সিদ্দিকের স্যালুটের ঘোষণার আওয়াজে ঘুরে দাঁড়ায়। ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় তার দিকে।
শুঁড় দিয়ে হাতিটি এরপর সাদিককে পেঁচিয়ে ধরতে উদ্যত হলেও তিনি পালানোর চেষ্টাটুকুও করেননি। কয়েক সেকেন্ডেই সাদিককে রাস্তায় ফেলে পিষে দেয় হাতিটি।
এরপর শুঁড় দিয়ে মৃতদেহটি রাস্তার মাঝে এনে ফেলে দেয়। ঘটনার পর সবার চিৎকারে হাতিটি জঙ্গলে ঢুকলেও ঘটনাস্থলেই সাদিকের মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার ভিডিও অনেকেই মোবাইল ফোনে তোলেন। ইতোমধ্যেই তা ভাইরাল হয়ে গেছে।
বনের এক কর্মকর্তা এনডিটিভিকে জানান, এই এলাকায় হাতির চলাচল খুবই একটি সাধারণ ব্যাপার। তারা প্রত্যেক দিন এই সড়ক পার হয় এবং তারা কোনো পরিবহনকে কখনো আক্রমণ করে না। সম্ভবত সাদিক সাহস দেখাতে হাতির সামনে এসেছিল, যার দরুণ তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
বন বিভাগের তথ্যে, গত বছর এমন প্রাণি এবং মানুষের মধ্যকার সংঘর্ষে এই অঞ্চলে ৮৪ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া ট্রেনের ধাক্কায় বেশ কয়েকটি হাতি মারা যায়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন