যশোরের মণিরামপুরে কলেজছাত্রীর ওপর যৌন নির্যাতন ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে। ঘটনার একদিন পর এজাহারভুক্ত চার আসামি আটক হলেও বাকিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে তাদের আটকের জন্য পুলিশ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে গত ১৬ নভেম্বর রাতে ওই কলেজছাত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালিয়ে তার ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হয় বলে ওই ছাত্রীর অভিযোগ। এ ঘটনায় গত ১৭ নভেম্বর মণিরামপুর থানায় মামলা হয়। মামলার পর পুলিশ চার আসামিকে আটক করে। আটকরা হলো- উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের নূর ইসলাম, আজহারুল, হেলাল মোল্যা ও হেলাল বিশ্বাস।
নেহালপুর পুলিশ ক্যাম্পের এসআই খায়রুল বাসার জানান, কলেজছাত্রীকে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ-ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় ভিডিও উদ্ধারসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের আটকের জন্য অভিযান চলছে।
ঘটনার শিকার কলেজছাত্রী জানান, উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের নূর ইসলাম তাকে ‘অনৈতিক প্রস্তাব’ দিত। এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তিনি ১০/১২ জন লোক ভাড়া করে এনে গত ১৬ নভেম্বর এই হামলা চালান।
মেয়েটি বলেন, ‘নিজেদের ঘরে বসে তিনি তার বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিলেন। এসময় এলাকার নূর ইসলাম, তার ছোট ভাই হেলাল মোল্যা, হেলাল বিশ্বাস, বাবুল, বাচ্চু, মামুন, আজহারুল ও রাজ্জাকসহ ১০/১২ জন এসে দরজা খুলতে বলে। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে সবাই ঘরে ঢুকে তারা আমার বন্ধুকে মারধর শুরু করে। আর আমাকে খাটের ওপর ফেলে দিয়ে দুই-তিনজন আমার গায়ের ওপর উঠে পড়ে। তারা টেনে-হিচড়ে জামা-কাপড় ছিঁড়ে বিবস্ত্র করে আমাকে কামড়াতে থাকে আর গালিগালাজ করে, মারধর করে।’
‘মা এগিয়ে এলে ওরা মায়ের মাথা দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা দেয়। পুরো ঘটনাটা তারা ভিডিও করে। রাত ৯টায় তারা আমার ঘরে ঢুকে ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করে।’
তাকে তার মা আগলে ধরার চেষ্টা করলে তাকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে আবার নির্যাতন করা হয় বলে তার অভিযোগ। এক পর্যায়ে তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে ওদের থামতে বললে তাদের একজনকে মেরে রাস্তায় বের করে দেয়। পরে পুলিশ আসলে ওরা চলে যায়। পুলিশ এসে কলেজছাত্রী ও তার বন্ধুকে নেহালপুর ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
কলেজে আসা-যাওয়ার পথে নূর ইসলাম তাকে উত্ত্যাক্ত করতেন দাবি করে কলেজছাত্রী বলেন, নূর ইসলাম আমাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিত। রাজি না হওয়ায় সে হুমকি দিত।
মেয়েটির মায়ের অভিযোগ, পুলিশ যাওয়ার পর আজহারুল, রাজ্জাক, নাসির ও হেলাল এসে জোর করে স্ট্যাম্পে সই নিয়ে বাড়ি থেকে নেমে যেতে হবে বলেও হুমকি দিয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই খায়রুল বাশার বলেন, এ ঘটনায় আটক চারজনসহ অজ্ঞাত আরও দুই-তিনজনকে আসামি করে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের আটকের চেষ্টা করছে পুলিশ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন