চট্টগ্রাম বন্দরে পচে গলে নষ্ট হচ্ছে কয়েকশ’ কোটি টাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রসুন-পিয়াজ, কাঁচামরিচ, মাছ ও ফল। আর বাজারে দামের আগুনে এসব পণ্যে হাত দিতে পারছেন না সাধারণ ক্রেতারা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। চট্টগ্রামে হতদরিদ্রদের নিয়ে কাজ করে বেসরকারি সংস্থা ‘বন্ধু’। বন্ধুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক হামিদুর রহমান বলেন, দেশের লাখ লাখ গরিব মানুষ বাঁচার জন্য খেতে পাচ্ছেন না। আর বিত্তবান ব্যবসায়ীরা নিত্য খাদ্যপণ্য অপচয় করছেন।
ব্যবসার জন্য আনা শত কোটি টাকার পণ্য খালাস না করে পচিয়ে নষ্ট করছেন। তিনি বলেন, বাজারে দামের আগুনে পিয়াজ ও কাঁচামরিচ কিনতে পারছেন না গরিব মানুষ। কিন্তু বন্দরে পিয়াজ আর কাঁচামরিচসহ নানা ফলমূল নষ্ট হলেও সহনীয় দামে বিক্রি করছে না। এ জন্য তিনি ব্যবসায়ীদের সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানান। বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা কয়েকশ’ কোটি টাকার কমলা, আপেল, আঙুর, মাছ, রসুন-পিয়াজ, কাঁচামরিচ পচে-গলে নষ্ট হয়ে গেছে। ১০৯ কন্টেইনার ভর্তি এসব খাদ্যপণ্য নষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাতে বায়ু দূষণে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, শিপিং এজেন্টরা এসব খাদ্যপণ্য আমদানি করলেও ব্যবসায়ীরা তা খালাস করে নিয়ে যায়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে কন্টেইনারে পড়ে থাকায় পচনশীল এসব খাদ্যপণ্য ক্রমেই পচে-গলে নষ্ট হয়ে খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মিয়া মো. নাজমুল হক জানান, আমদানি করা এসব খাদ্যপণ্যের মধ্যে রয়েছে কন্টিনেন্টাল ট্রেডার্সের ১১টি কন্টেইনার, মার্সক বাংলাদেশ লিমিটেডের ৬৬টি, কে লাইন বাংলাদেশ লিমিটেডের ১২টি, এপিএল বাংলাদেশ লিমিটেডের ৮টি, ইয়াংমিন লাইন্সের ৩টি, ইন্টারমডাল প্রা. লিমিটেডের ২টি এবং পিআইএল বাংলাদেশ লিমিটেডের ৭টি কন্টেইনার ভর্তি পণ্য। তিনি বলেন, নিলামযোগ্য এসব পণ্য খালাসের ব্যবস্থা নিয়ে তাদের কন্টেইনারগুলো খালি করে দেয়ার জন্য শিপিং এজেন্টরাও দীর্ঘদিন ধরে আহ্বান জানিয়ে আসছেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে যথাসময়ে এ ব্যাপারে কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরো বলেন, যথাসময়ে খালাস করে না নেয়া পণ্যভর্তি কন্টেইনার শুধু যে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমে সমস্যা তৈরি করছে তা নয়, শিপিং কোমপানিসমূহকেও মহাবিপাকে ফেলে। বিশেষত পচনশীল পণ্যভর্তি কন্টেইনার তাদের জন্য বড় সংকটের। সূত্র জানায়, পচনশীল মালামাল খালাস না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সংযুক্ত বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যায় না রিফার কন্টেইনার থেকে। খালাস না করা রিফার কন্টেইনার জাহাজ থেকে নামানো হতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার তারিখ পর্যন্ত ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিল পরিশোধের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ এমএলও এজেন্টের কাছে পেশ করে। এই বিল পরিশোধ করে এমএলও এজেন্টদের বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। কারণ আমদানিকারক কর্তৃক মালামাল ডেলিভারি না নেয়ায় তাদের কাছে থেকে এমএলও এজেন্টদের এই বিদ্যুৎ বিল আদায়ের কোন সুযোগ নেই। অপরদিকে, কন্টেইনারে থাকা পচনশীল পণ্য ব্যবহারের অনুপযোগী কি না তা ঘোষণার দায়িত্ব কাস্টম হাউসের। তাই এই ঘোষণা আসা পর্যন্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যায় না।
রিফার কন্টেইনারে সংযোগ বাবদ ব্যবহৃত বিদ্যুৎ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে নিয়ে। তাই বিল মওকুফ করার কোনো অবকাশ নেই। নিলামযোগ্য পণ্যভর্তি কন্টেইনার বছরের পর বছর পড়ে থাকার ফলে সবচেয়ে সমস্যা তৈরি করেছে বন্দরের জন্য। বন্দর পরিচালনা পরিষদের সদস্য (মিডিয়া ও প্রশাসন) মো. জাফর আলম বলেন, বন্দরে কন্টেইনার রাখতে অনেকদিন ধরে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। অথচ কন্টেইনার রাখার জায়গা আটকে আছে নিলামযোগ্য পণ্যভর্তি কন্টেইনারে। এই সমস্যাটি বিরাজ করছে বছরের পর বছর ধরে। তা নিয়ে বন্দর এবং কাস্টমস এর মধ্যে বৈঠক, কথা হয়েছে অনেক। বর্তমানেও প্রতি সপ্তাহে বৈঠক হয় দুই সংস্থার মধ্যে। তিনি বলেন, শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন থেকে কাস্টম হাউস এবং বন্দর প্রশাসনকে খালাস না নেয়া পণ্য নিলামে উঠিয়ে তাদের কন্টেইনার ফেরতের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে অনেকবার। জাহাজ থেকে নামানোর পর ৩০ দিনের মধ্যে আমদানিকারক কর্তৃক মালামাল সরবরাহ নেয়া না হলে বিধান মোতাবেক নিলামের জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয় কন্টেইনার।
আর এ ব্যাপারে বর্তমান কমিশনার অব কাস্টমস ড. এ কে এম নুরুজ্জামান দৈনিক মানবজমিনকে বলেন, এসব কন্টেইনারে পচে যাওয়া খাদ্যপণ্য ধ্বংসের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এনবিআর থেকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা পাওয়া গেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন