বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রে আওয়াজ তুলবার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান ডোনাল্ড এস বেয়ার। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে সম্পৃক্ত করতে বিশ্ববাসীর এগিয়ে আসার কথাও জানান তিনি।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমেরিকা বাংলাদেশ কাউন্সিল ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত সেমিনার সিরিজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী রীতা রহমানের সঞ্চালনায় আয়োজিত সেমিনারের উদ্বোধনী সেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভার্জিনিয়া হাউস অব ডেলিগেটের মেম্বার মার্ক ডি সিকলেস।
সেমিনারে তিনটি উপস্থাপন করা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও মানবাধিকার কর্মী রীতা রহমান। সেমিনারে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ঝুঁকি ও বিশ্বাসহীনতার উপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অস্টিন পি স্টেইট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তাজ হাসমি, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের পারস্পরিক আস্থাহীনতার উপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আমেরিকান পাবলিক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. সাইদ ইফতেখার আহমেদ।
এছাড়ও প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. ফয়সাল আহমেদ, মর্গান স্টেইট ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের অধ্যাপক ড. আশরাফ আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল একাডেমির অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. কামরুল ইসলাম, জাস্ট নিউজ বিডির সম্পাদক মুশফিকুল ফজল আনসারী, মুসলিম কমিউনিটি টিভির সিইও সাংবাদিক কাজী শামসুল হক ও সাউথ এশিয়ান সলিডারিটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ইমরান আনসারী, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট আলী ইমাম প্রমুখ।
উদ্বোধনী সেশনে কংগ্রেসম্যান ডোনাল্ড এস বেয়র জুনিয়র বলেন, ‘আমি যতটুকু জানতে পেরেছি বাংলাদেশে জাতিগতভাবে বিভক্ত করা হয়েছে। যে প্রক্রিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও শুরু হয়েছে। এর পরিণতি কোনো জাতিরাষ্ট্রের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না। এজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তার মূল জায়গায় ফিরিয়ে আনতে আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উত্তরণে আওয়াজ তুলবার যে প্রক্রিয়া ওয়াশিংটনে শুরু হয়েছে। তা অব্যাহত রাখতে হবে।’
শক্তিশালী গণতন্ত্রের জন্য মুক্ত গণমাধ্যমের কথা তুলে ধরতে গিয়ে বেয়র বলেন, ‘একটি অবাধ ও মুক্ত গণমাধ্যম গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এটি সবাইকে মনে রাখতে হবে।’
বাংলাদেশের বিরাজমান সংকটগুলোর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করেন এই কংগ্রেসম্যান। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে আর এই প্রভাব স্পষ্টতই অনুভূত হচ্ছে বাংলাদেশে। এতে হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে।’ এবিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সম্পৃক্ত করতে তিনি নিজে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান ডোনাল্ড এস বেয়র।
মার্ক ডি সিকলেস বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দুনিয়া জুড়েই আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে শক্তিশালী গণতন্ত্র বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে।
রীতা রহমান তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা দিনের পর দিন যেভাবে ক্ষমতাসীন দল কুক্ষিগত রেখেছে তা নজিরবিহীন। মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতি বিশেষ করে গুম খুন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, গত নভেম্বরে গুম হয়েছে অন্তত ৫০০ জন মানুষ। তিনি বাংলাদেশে নির্বাচনী ব্যবস্থার দুর্বল দিকগুলো প্রবন্ধে তুলে ধরেন।
ড. তাজ হাসমি বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতিরাষ্ট্রকে অত্যন্ত সুপরকল্পিতভাবে বিভক্ত করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধীদলকে পাকিস্তানি হিসেবে আখ্যায়িত করে। অথচ বিরোধী দল তথা বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী সরাসরি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছে, নেতৃত্ব দিয়েছে। সরকারি দল চাইছে বিরোধীদলকে চিরতরে রাজনীতি থেকে উৎখাত করতে।’
ড. ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল তাদের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারেনি। এর অন্তর্নিহিত কারণগুলো আমাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক আস্থাহীনতা এ জাতিরাষ্ট্রটিকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।’
এছাড়া বাংলাদেশের মানুষের পরিচয় বাংলাদেশি না বাঙালি এ বিতর্ক জিইয়ে রেখে রাষ্ট্রব্যবস্থার জাতীয় সংহতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন