সরকারের শেষ সময়ে প্রশাসনের দেড় শতাধিক কর্মকর্তাকে (যুগ্মসচিব) অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার কার্যক্রম চলছে। কিন্তু পদোন্নতির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা, মেধা ও দক্ষতার মূল্যায়ন না হওয়ায় এসব কর্মকর্তার মধ্যে আতঙ্ক, ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রশাসনের তিন স্ত্মরে (উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব) পদোন্নতির জন্য গত সেপ্টেম্বর থেকে অন্ত্মত ১৫ দফা বৈঠক করে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)। পরে সে চিন্ত্মা বাদ দেয়া হয়। শুধুমাত্র অতিরিক্ত সচিব পদেই পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত্ম হয়। সে অনুযায়ী ১৭৮ জনের নাম চূড়ান্ত্ম করে এসএসবি। তবে এদের অনেকে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১৭৮ জনের নাম পাঠানোর সার-সংক্ষেপ প্রস্তুত করেও তা আর পাঠানো হয়নি। পরে আবারও এসএসবির বৈঠক বসে গত মাসে। ওই বৈঠকে ১০ থেকে ১৫ জনের নাম সংযোজন-বিয়োজন করে নতুন সার-সংক্ষেপ পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য।
সরেজমিন দেখা যায়, পদোন্নতি প্রক্রিয়া এবার বিলম্বিত হওয়ায় সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক, ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। অনেকে বিভিন্ন সূত্রে নিজে বঞ্চিত হওয়ার খবর শুনে কাজে মনোযোগ দিতে পারছে না। আর যারা তালিকায় রয়েছেন বলে জেনেছেন তাদের মাঝেও সারাক্ষণ অস্থিরতা কাজ করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি অনুবিভাগ) শেখ ইউসুফ হারম্নন যায়যায়দিনকে বলেন, এবার শুধু অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হবে। এজন্য এক মাস আগে ফাইল প্রস্তুত করে জনপ্রশাসন সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। পদোন্নতি প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বলেন, কেন বিলম্বিত হচ্ছে সে বিষয়ে কিছুই জানেন না। তবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। বিজয় দিবসের আগেই অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির আদেশ জারি হতে পারে। সংযোজন-বিয়োজন বিষয়েও তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন শেখ ইউসুফ হারম্নন।
জানা যায়, ৪৩০টি যুগ্মসচিব পদে এখন কর্মকর্তার সংখ্যা ১ হাজার ১৫২ জন। এদের মধ্যে বেশিরভাগ কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। অনেকে রাজনৈতিক নেতাদের পেছনে পেছনে ঘুরছেন। কেউ কেউ এমপি-মন্ত্রীদের কাছে ডিও লেটার নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী যুগ্মসচিব যায়যায়দিনকে বলেন, বৃহস্পতিবার এলেই ভয় পান। না জানি কখন পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি হয়। আবার শুনছেন অনেকের নাম সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন আগে তারা জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। উনি (সচিব) বললেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো তালিকা থেকে কয়েকজনের নাম বাদ পড়েছে। এজন্য তারও খারাপ লাগছে। কিন্তু গোয়েন্দা রিপোর্ট খারাপ আসায় করার কিছুই নেই।
সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গোয়েন্দা রিপোর্টের অজুহাতে অনেক যোগ্য কর্মকর্তাকে তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে।
একাধিক কর্মকর্তা (যুগ্মসচিব) নাম প্রকাশ না করার শর্তে যায়যায়দিনকে বলেন, ছাত্রজীবনে রাজনীতির ধারেকাছেও ছিলেন না। চাকরিকালীন সময়েও সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি মেনে রাজনীতিও করেননি। সবসময় নিরপেক্ষ থেকে সরকারি দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছেন। এখন পদোন্নতি না দিয়ে তাদের রাজনৈতিক দলের পক্ষভুক্ত করে বঞ্চিত করছে সরকার। যা খুবই দুঃখজনক।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসএসবির এক সদস্য যায়যায়দিনকে বলেন, জনপ্রশাসনে এক সময় পদোন্নতি হতো জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে। বিভাগীয় মামলা, দুদকের মামলা বা এ ধরনের গুরম্নতর কোনো সমস্যা না থাকলে জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী সবাই পদোন্নতি পেতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। এতে অনেক মেধাবী, যোগ্য ও সৎ কর্মকর্তার পদোন্নতির স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে। যা তাদের মাঝে অসন্ত্মোষ ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন