বাংলাদেশের ডেইলী অবজারর্ভার এবং অনলাইন পোর্টাল বাংলা ইনসাইডার-এর পর ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ডেইলী ও-তে জিয়া পরিবারের দুর্নীতির ভূয়া সংবাদ ছাপা হলো। একটি কানাডিয়ান সংবাদ মাধ্যম “দ্যা গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স মিডিয়া নেটওয়ার্ক” নামক একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এই সংবাদ ছাপা হয়। বিডি ফ্যাক্টচেক-এর অনুসন্ধানে “দ্য গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স মিডিয়া নেটওয়ার্ক” নামক কোনো সংবাদ মাধ্যমের অস্তিত্ত্ব পাওয়া যায়নি।
দ্য ইন্ডিয়া টুডে গ্রুপের মালিকানাধীন একটি সংবাদ মাধ্যম হচ্ছে ডেইলী ও। গতকাল ৯ ডিসেম্বর ”হোয়াই র্যাডিকাল ইসলামিস্ট ইন বাংলাদেশ আর প্রোটেস্টিং অ্যাগেইনস্ট ট্রাম্পস্ ডিসিশন অন জেরুজালেম” শিরোনামের সংবাদটিতে এই ভূয়া তথ্যটি ছাপানো হয়।
শান্তনু মুখার্জী নামের একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক এই লেখাটি লিখেন। এতে তিনি বলেন, “কানাডার সংবাদ মাধ্যম “দ্য গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স মিডিয়া নেটওয়ার্ক” এবং সৌদি কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে অভিযোগ এনেছে তাতে করে দলটি চাপে আছে। এই অভিযোগের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবের বিভিন্ন মার্কেট এবং অবকাঠামোগত প্রকল্পে জিয়া পরিবারের ১২ মিলিয়ন ডলারের পাচারের অভিযোগটিও।”
উল্লেখ্য, এখানে কানাডার যে সংবাদ মাধ্যমটির কথা বলা হয়েছে গুগল সার্চ করে এবং কানাডায় কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে কথা বলে এই নামের কোনো সংবাদ মাধ্যমের অস্তিত্ত পাওয়া যায়নি। এখানে সংবাদ সূত্র হিসেবে “সৌদি কর্তৃপক্ষ”-এর কথা বলা হয়েছে। সচেতন পাঠক মাত্রই জানেন, সাংবাদিকতায় সংবাদ সূত্রটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদ সূত্র উল্লেখ করার ক্ষেত্রে নিজের জীবনের ঝুকি না থাকলে যতটা সম্ভব সূত্রের নাম-ধাম উল্লেখ করা জরুরি। অন্যথায় তা পাঠকের কাছে ভূয়া সংবাদ সূত্র হিসেবে বিবেচিত হয়।
এর আগে জিয়া পরিবারের দুর্নীতি নিয়ে যে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিলো তাতে তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিলো “গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক (জিআইএন)” এবং “দ্য ন্যাশনাল”। বিডিনিউজ২৪ডটকম এবিষয়ে অনুসন্ধান করে জানালো, “প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী সম্পাদিত দ্য ডেইলি অবজারভারে এই সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছিল গত ১ ডিসেম্বর। প্রতিবেদনের সংবাদের উৎস বলা হয়েছিল গ্লোবাল ইন্টিলিজেন্স নেটওয়ার্ক (জিআইএন) এবং কানাডার টিভি চ্যানেল দ্য ন্যাশনাল এই খবর দিয়েছে। ইন্টারনেট ঘেঁটে দ্য ন্যাশনাল নামে কানাডার কোনো টিভি চ্যানেলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কানাডার রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে দ্য ন্যাশনাল নামে একটি নিউজ প্রোগ্রামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তবে সেখানে সার্চ দিয়ে খালেদা সংক্রান্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আর “গ্লোবাল ইন্টিলিজেন্স নেটওয়ার্ক” নামে কোনো গণমাধ্যম ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায়নি।”
এছাড়াও আরব নিউজকে তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সাপ্তাহিক-এর সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা “জিয়া পরিবারের টাকা পাচার এবং” শিরোনামে পরিবর্তন-এ লিখেন,
“আরব নিউজ’র ওয়েবসাইটে ঢুকে জিয়া পরিবারের দুর্নীতির সংবাদটি বের করার উদ্যোগ নিলাম। “জিয়া পরিবারের দুর্নীতি” “খালেদা জিয়ার দুর্নীতি” “তারেক জিয়ার দুর্নীতি” “বাংলাদেশের একটি পরিবারের দুর্নীতি” ইত্যাদি বাক্য লিখে অনুসন্ধান করলাম বারবার। খালেদা জিয়ার মামলা, কোর্টে হাজির, খালেদা জিয়ার উপর আক্রমণ, খালেদা জিয়ার জনসভা, তারেক রহমানের কিছু সংবাদের লিংক পাওয়া গেল। কিন্তু দুর্নীতি বা টাকা পাচারের কোনো সংবাদ লিংক পাওয়া গেল না।
সৌদি গেজেট, আল রিয়াদ, ওকাজ, গালফ নিউজ- প্রভৃতি পত্রিকার ওয়েবসাইটে ঢুকেও এ বিষয়ক কোনো সংবাদের লিংক খুঁজে পেলাম না। সৌদি আরব এবং দুবাইয়ে কর্মরত কয়েকজন বাংলাদেশি যারা সংবাদপত্র এবং চ্যানেলের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের ৩ জনের সঙ্গে কথা বললাম। জানতে চাইলাম, খালেদা জিয়া বা জিয়া পরিবারের দুর্নীতি, টাকা পাচারের সংবাদ বিষয়ে তারা কিছু জানেন কিনা। আরব নিউজ বা অন্য কোনো পত্রিকায় এমন কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে কিনা। তারা এমন কোনো সংবাদ জানেন না। দেশের সংবাদ মাধ্যম থেকে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর তারা জেনেছেন।”
সূত্র ঃ http://www.bdfactcheck.com/factcheck/36
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন