তারা বলছে, কিশোর বয়সের এই বিষণ্নতা তাদের অনিয়ন্ত্রিত জীবনাচরণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে প্রতিবন্ধিতাসহ রম্নগ্ন স্বাস্থ্য ও সামাজিক নানা সমস্যাসহ আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে ।
রাজধানী ঢাকার মাধ্যমিকে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের শতকরা ২৫ ভাগের মধ্যে বিষণ্নতার লক্ষণ পেয়েছেন একদল গবেষক। তারা বলছেন, এই হার সারা বাংলাদেশে বয়ঃসন্ধিতে থাকা শিক্ষার্থীদের বিষণ্নতার হারের চেয়ে বেশি এবং ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের মধ্যে বিষণ্নতা বেশি।
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি ও ঢাকার আন্ত্মর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর,বি) তিন গবেষকের গবেষণার ফল সম্প্রতি 'এথনিসিটি অ্যান্ড হেলথ' জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে কিশোর-কিশোরীদের বিষণ্নতার এই চিত্র ফুটে ওঠে।
ঢাকার বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের আটটি বিদ্যালয়ের ১৩ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই গবেষণা চালানো হয়।
বিষণ্নতা পরিমাপে বহুল ব্যবহৃত সিইএসডি-১০ স্কেলের ১০টি প্রশ্ন দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের; আর এতে অংশ নেয়া ৮৯৮ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ৭৫৫ জন সিইএসডি-১০ সম্পন্ন করে।
পরবর্তীতে ওই ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে তাদের পারিপারিক পর্যায়ের তথ্যও সংগ্রহ করেন গবেষকরা।
পরে তথ্য বিশেস্নষণে দেখা যায়, জরিপে অংশ নেয়া মাধ্যমিক পর্যায়ের এই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গড়ে প্রায় ২৫ শতাংশের মধ্যে বিষণ্নতার লক্ষণ রয়েছে।
তুলনা করে গবেষণাপত্রে বলা হয়, ২০১২ সালে সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী প্রায় আড়াই হাজার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে অন্য একটি গবেষক দলের গবেষণায় ১৪ শতাংশের মধ্যে বিষণ্নতার লক্ষণ পাওয়া গিয়েছিল।
ঢাকায় চালানো নতুন গবেষণায় পাওয়া যায়, হাইস্কুল পড়ুয়া মেয়েদের মধ্যে বিষণ্নতার লক্ষণ ছেলেদের থেকে বেশি। যেখানে ৩০ শতাংশ ছাত্রীর মধ্যে বিষণ্নতার লক্ষণ দেখা গেছে, সেখানে ছেলেদের ক্ষেত্রে এই হার ১৯ শতাংশ।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বাড়তে থাকে বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে। ১৩ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মাত্র ১৭ শতাংশের মধ্যে বিষণ্নতার লক্ষণ দেখা গেলেও ১৬ বছর বয়সীদের মধ্যে এই হার ৩৭ শতাংশ।
জরিপে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের প্রায় অর্ধেক ৪৯ শতাংশ ছাত্র এবং প্রায় চার ভাগের এক ভাগের (২৪ শতাংশ) দৈহিক ওজন বেশি বা স্থূলতায় আক্রান্ত্ম। ৪৭ শতাংশ অভিভাবকের মাসিক আয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
রাজধানীর এসব শিক্ষার্থীর বিষণ্নতার পেছনে নিজেদের দৈহিক ওজন স্বাভাবিক নয় বলে আত্মপ্রসূত ধারণা, স্কুলে অনিরাপদ বোধ করা এবং যাপিত জীবন সম্পর্কে অসন্তুষ্টি কারণ হিসেবে পেয়েছে গবেষক দল।
এ ছাড়া শারীরিক পরিশ্রম না করা, বাবার পেশা ও অনেকের পারিবারিক আয় তাদের বিষণ্নতায় ভূমিকা রাখছে।
বয়ঃসন্ধিতে থাকা এসব শিক্ষার্থীর বাবা-মায়েরা তাদের ঘুমে ব্যাঘাতের যে তথ্য জানিয়েছেন, তাকেও বিষণ্নতার একটি কারণ বলে মনে করছে গবেষক দলটি।
তারা বলছে, কিশোর বয়সের এই বিষণ্নতা তাদের অনিয়ন্ত্রিত জীবনাচরণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে প্রতিবন্ধিতাসহ রম্নগ্ন স্বাস্থ্য ও সামাজিক নানা সমস্যাসহ আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
গবেষণাপত্রের প্রথম লেখক কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির স্কুল অব হেলথ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সায়েন্সের আসাদুজ্জামান খান বলেন, 'আমাদের স্বাস্থ্যসেবা খাতে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রয়োজনীয় মনোযোগের যে অভাব,বিশেষত এই নির্দিষ্ট বয়স শ্রেণির (১৩ থেকে ১৬ বছর বয়সী), তা কিছুটা ভয়ানক।'
শিক্ষার্থীদের বিষণ্নতা উসকে দিতে পারে এমন কতগুলো কারণ যেমন ওজন ব্যবস্থাপনা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যকর খাবার ও ঘুমে ওপর মনোযোগ দেওয়ার কথা বলছেন গবেষকরা।
বাংলাদেশি আসাদুজ্জামান খান ছাড়াও আইসিডিডিআরবি'র হেলথ সিস্টেম অ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিজ বিভাগে কর্মরত রম্নশদিয়া আহমেদ এবং কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির স্কুল অব হিউম্যান মুভমেন্ট অ্যান্ড নিউট্রিশান সায়েন্সের নিকোলা ডবিস্নউ বার্টন যৌথভাবে গবেষণাটি পরিচালনা করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন