নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরি সংক্রান্ত শৃঙ্খলাবিধি গেজেট প্রকাশ করার বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন দেশের শীর্ষ আইনজীবীরা। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এম. আমির উল ইসলাম বলেন, প্রকাশিত গেজেটের গোড়াতেই গলদ রয়েছে। কিন্তু সিনিয়র এই আইনজীবীর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। তিনি বলেন, এখানে গলদ থাকার কথার সঙ্গে একমত হতে পারছি না।
শফিক আহমেদ বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছি, মাসদার হোসেন মামলার পরে অধস্তন আদালতের নিয়োগ পদ্ধতিটা একেবারেই সুপ্রিম কোর্টের হাতে। অন্যদিকে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম শৃঙ্খলাবিধি সংবিধান সম্মতভাবে হয়েছে বলে দাবি করলেও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির যে শৃঙ্খলাবিধি সরকার তৈরি করেছে তা সম্পূর্ণ আত্মঘাতী, অর্থহীন এবং অসাংবিধানিক।’
ব্যারিস্টার এম . আমির উল ইসলাম বলেন, ‘গেজেটের বিষয়ে আমি কিছু বলছি না। কি রুলস তৈরি করেছে সেটাও আমি দেখিনি। আমার বিষয়টা হচ্ছে প্রক্রিয়া নিয়ে। আমাদের সংবিধানে যে প্রক্রিয়ার কথা ১১৬ অনুচ্ছেদে আছে, যেটা বলছিলাম, সেটা এ রকম, ‘বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনে রত ম্যাজিষ্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল- নির্ধারণ, পদোন্নতি দান ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলাবিধান রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত থাকিবে এবং সুপ্রিম কোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তাহা প্রযুক্ত হইবে। অতএব এটা সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে ন্যস্ত করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রপতি পরামর্শ করবেন সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে। এখানে কোন মন্ত্রণালয় আসার স্কোপ নেই। ১১৬ অনুচ্ছেদটি হচ্ছে ব্যতিক্রম। ৪৮ (৩) এ যেমন বলা আছে ‘এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্টপতি তাঁহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন। এটা হচ্ছে তার এক্সেপশন।’
তিনি বলেন, এই এক্সেপশনটাতে ১১৬ এ নিম্ন আদালদের বিচারকদের কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি এবং ছুটি মঞ্জুরির যে রুলস তৈরি করবেন সেটা সুপ্রিম কার্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে হলে এটাকে বোঝায় যে, সুপ্রিম কোর্ট বারের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। অর্থাৎ কালেক্টিভ উইল থাকতে হবে সুপ্রিম কোর্টের এবং সেই বিষয়টা ইতোমধ্যে কোর্টে পেন্ডিং রয়েছে, তাই কোর্টে সেটি আলোচিত হওয়ার দরকার ছিল এবং সুপ্রিম কোর্টের সকল বিচারপতি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বা তাদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রধান বিচারপতি তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা এগুলোর প্রয়োজনীয়তা থাকে এখানে। আইন মন্ত্রণালয় এখানে মূল ভূমিকা পালন করেছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যে পরামর্শ করার বিষয়টা উপস্থিত থাকেনি। অর্থাৎ বিষয়টা যে প্রক্রিয়ায় হয়েছে তা সাংবিধানিকভাবে বৈধ প্রক্রিয়ায় নয়। এখানে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে প্রাধান্য দিতে হবে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে।
বাংলাদেশের নির্বাহী বিভাগের অধীনস্ত করে ফেলেছেন এই গেজেটের মাধ্যমে। তারা ১৩৩ অনুচ্ছেদের অধীনে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে নিয়ে গেছে এবং তাদের কর্মস্থল, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুর, শৃঙ্খলা বিধান শর্তাবলী প্রণয়ন করিয়াছেন। যেটা করা দরকার সেটা হচ্ছে ১১৬ অনুচ্ছেদে রুলস করবার কথা। কিন্তু ১১৬ অনুচ্ছেদে রুলস না করে ১৩৩ অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে যে যে রুলসের রেফারেন্সের কাজ করছেন তাতে যাওয়ার ফলে আমি যেটা লক্ষ্য করছি সেটা হচ্ছে যে, ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এখানে কোনো কাজ সম্পাদন করেছেন বলে লেখা নেই। কিন্তু ১১৬ অনুচ্ছেদের অধীনেই রুলসটি করার কথা। অর্থাৎ সংবিধান যে ক্ষমতাটা রাষ্ট্রপতির উপর অর্পণ করেছেন এবং রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সে রুলস তৈরি করবেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় ১৩৩ অনুচ্ছেদের বয়ান দিয়ে যে রেফারেন্স দিচ্ছেন, অর্থাৎ গোড়াতেই গলদ রয়ে গেছে। বিষয়টা নিশ্চই আদালতের নোটিশে আসবে। আমি মনে করি এটা সংশোধন করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রপতির ভূমিকা আইন মন্ত্রণালয় পালন করতে পারে না। অতএব রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আলোচনার বিষয়টা ১১৬তে উল্লেখ আছে।
আমরা যখন সংবিধান তৈরি করেছিলাম তখন বিচার বিভাগের পৃথককরণের বিষয়টাতে প্রাধান্য দিয়েছিলাম এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বৈশিষ্ট অক্ষুণ্ন রেখে। এজন্য অধস্তন আদালতের উপরে ১১৪, ১১৫, ১১৬ পরিচ্ছেদ আমরা দিয়েছিলাম। অর্ধাৎ অধস্তন আদালত কিন্তু আমাদের সংবিধানের একটি প্রতিষ্ঠান। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বলা যেতে পারে। এখন তাদের যদি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিধি-বিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় সেটা হবে খুবই দুর্ভাগ্যজনক এবং এটি মাসদার হোসেন মামলার পরিপন্থী। আইনমন্ত্রীর ভূমিকা দিয়ে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা রিপ্লেস করা যায় না। এটা করাতে বিচার ভিাগের স্বাধীনতা, বৈশিষ্ট, পৃথককরণ খর্ব করা হয়েছে।
এ বিষয়গুলো অবশ্যই সুপ্রিম কোর্টের নজরে আনা হবে। আমি ইতোমধ্যেই দু-তিনদিন কোর্টকে বলেছি। ভেতরে ভেতরে কি আলোচনা হচ্ছে কেউই জানতে পারছি না। আমি উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। কার সঙ্গে কি আলোচনা হচ্ছে, আইনমন্ত্রীর সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির। এখানে রাষ্ট্রপতিও অনুপস্থিত প্রধান বিচারপতিও অনুপস্থিত। প্রধান বিচারপতিকে সবসময়ই থাকতে হবে। ভারপ্রাপ্ত হয় যখন প্রধান বিচারপতি অসুস্থ হন বা কাজ পরিচালনা করতে পারছেন না তখন। কিন্তু রিজাইন দেয়ার পরে প্রধান বিচারপতি অবিলম্বে করা উচিৎ।
শফিক আহমেদ
অন্যদিকে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, অনেক দিনের একটা দাবি ছিল, নিম্ন আদালতের বিচারকদের যারা ম্যাজিস্ট্রেসি করছে তাদের শৃঙ্খলাবিধি এবং আচরণবিধি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হোক। বিলম্বে হলেও এটা প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষ করে বিচার বিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগের কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল আমার মনে হয়। বিধি প্রকাশের পর ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই। এই বিধি অনুযায়ী, নিম্ন আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে কোনো রকম অসদাচরণ বা অভিযোগ তোলা হয় তাহলে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবে, সেটা বিস্তারিত আছে এখানে। আগে যে বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল এই গেজেটে কতটুকু সুরাহা করা হয়েছে? তিনি বলেন, আমার তো মনে হয় এই বিধিতে সবকিছু কাভার করা হয়েছে। শুরুতেই আমাদের জানতে হবে মাসদার হোসেন মামলাটি যখন হয় এবং ২০০৭ সাল থেকে কিন্তু নির্বাহী বিভাগ বিচার বিভাগ থেকে আলাদা। এটা হয়েছে সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী।
তিনি বলেন, ২২ অনুচ্ছেদে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, ‘রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গসমূহ হইতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন৷’ সেই প্রেক্ষিতেই কিন্তু বিচার বিভাগ স্বাধীন। এখন প্রশ্ন হলো বিচার বিভাগে যারা কর্মরত বিশেষ করে অধস্তন আদালতে আচরণের শৃঙ্খলা বিধিটা এতদিন লিখিত আকারে ছিল না। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আমাদের আইনমন্ত্রীর কয়েকটা সিটিং দিয়ে সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্ট একমত হয়েছে এবং সে আলোকেই কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব এটা, তিনি যখন অনুমতি দিয়েছেন এটা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। ১১৬ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রম কোর্টের সঙ্গে আলোচনা করে তা করার কথা। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির আলোচনা হয়েছে এ বিষয়ে?
জবাবে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, বিধি অনুযায়ী অধস্তন আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, অদক্ষতা যাই থাকুক কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে তাহলে বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই প্রসেসটা কমপ্লিট করার পরে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এই অদেশটি দেবেন। সরাসরি কোনো ফাইল রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে পারবে না। এটার প্রসেসটা হলো, সুপ্রিম কোর্ট থেকে কোনো ফাইল ইনিশিয়েট হলে আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভার্বেল দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। এই মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমির উল ইসলাম বলেছেন, এই গেজেটর মাধ্যমে সরকারিকরণ করা হয়েছে পুরোপুরি এবং একই সঙ্গে মাসদার হোসেন মামলার নির্দেশনা দিয়েছিল তার প্রতিফলন হয়নি। আপনি কি মনে করছেন?
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি দেখছি আমাদের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সঙ্গে দফায় দফায় বসে এই বিধিটা কিন্তু অ্যাপ্রোভ করা হয়েছে। কেউ বলতে পারবে না যে, উনাদের সঙ্গে বসে যেটা স্থির হয়েছিল তা বদলে দেয়া হয়েছে। এতে কিন্তু শুধু আচরণ বা শৃঙ্খলাবিধি না, নিয়োগের পদ্ধতি তো বললামই একেবারে আলাদা হয়ে গেছে। তাহলে আমরা পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছি মাসদার হোসেন মামলার পরে অধস্তন আদালতের নিয়োগ পদ্ধতিটা একেবারেই সুপ্রিম কোর্টের হাতে। আর সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বলতে এই না প্রধান বিচারপতির সঙ্গে। সুপ্রিম কোর্ট কি এখন চলছে না? আইন বা বিধি তো বাইবেল না যে, পরিবর্তন করা যাবে না। এটার কার্যকারিতা আছে, যদি এখনও মনে হয় অসুবিধা আছে তাহলে সংশোধন করা যেতে পারে। যদি এমন বিধান থাকে যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তবে সেটা সংশোধন করা যেতে পারে। আইনও তো বাতিল হচ্ছে। আর এটা তো বিধি। আরেক প্রশ্নের জবাবে শফিক আহমেদ বলেন, আমি তো মিনিস্ট্রিতে ছিলাম। আমি দ্বৈত শাসনের কিছু দেখিনি। কোনো কাজই সুপ্রিম কোর্টের মতামত ছাড়া করা হয়নি।
অ্যার্টনি জেনারেল
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গেজেট প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধিমালার গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে বিব্রতকর অবস্থার পরিসমাপ্তি হয়েছে। তিনি বলেন, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মাঝখানে আমাকেই অবস্থান নিতে হয়, যাকে বলে সেতুবন্ধন। বারেবারে আমাকে সময় নিতে হয়েছে। সেটা আমার জন্য নিশ্চয় বিব্রতকর ছিল। আমার সেই বিব্রতকর অবস্থার পরিসমাপ্তি হয়েছে।
তিনি বলেন, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জুডিশিয়াল সার্ভিস রুল বিধিমালা প্রণয়ন হয়েছে। এর বিভিন্ন পর্যায়ে অর্থাৎ বিচারকদের অভিযোগ, অনুসন্ধান কীভাবে হবে তারপর এটার অনুসন্ধানের পরে এদের সাময়িক বরখাস্ত কীভাবে হবে এবং এদের অপরাধের তদন্ত কীভাবে হবে সব ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে এই বিধিমালায় উল্লেখ করা আছে। বিভিন্ন পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ এটা সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে। সেটারই প্রতিফলন এই বিধিমালায় ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি যেকোনো পদক্ষেপই নেন না কেন সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে হবে। এটা স্পষ্টভাবে বলা আছে, যখন কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হবে, কারও বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া দরকার, অভিযোগ অনুসন্ধান করা দরকার বা বিচার বিভাগীয় তদন্ত দরকার সেখানেও রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হবে তখনও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শ করবেন।
আগের খসড়া এবং এখনকার গেজেটের মধ্যে মূল তফাতটা কি ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূল তফাতটা ছিল প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি যেটা চেয়েছিলেন, আমি যতদূর বুঝতে পেরেছি সেটা হলো সমস্ত ক্ষমতাটা সুপ্রিম কোর্টের হাতেই থাকবে। সেটা তো সংবিধানবিরোধী একটা অবস্থান ছিল। সংবিধানে আছে রাষ্ট্রপতি করবেন কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে করবেন।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির যে শৃঙ্খলাবিধি সরকার তৈরি করেছে তা সম্পূর্ণ আত্মঘাতী, অর্থহীন এবং অসাংবিধানিক।’তিনি বলেন, ‘এই শৃঙ্খলাবিধি সম্পূর্ণভাবে সংবিধানের ২২ নম্বর অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। এর মধ্য দিয়ে নিম্ন আদালতের বিচারকগণ সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেল।’মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের হল রুমে অপরাজেয় বাংলাদেশ আয়োজিত ‘মহান বিজয় দিবস ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান’শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মওদুদ বলেন, ‘এই শৃঙ্খলাবিধির মাধ্যমে প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণের মৃত্যু ঘটেছে। মাজদার হোসেন মামলায় বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণ করা সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের যে নির্দেশ ছিল তার পরিপন্থী। সুতরাং এখন বলা যাবে না যে, বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক একটি প্রতিষ্ঠান।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার সঙ্গে বিচার বিভাগের মতবিরোধ ছিল। কারণ তিনি এর বিরোধিতা করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ন রাখতে চেয়েছিলেন। সরকার তাকে বিতাড়িত করে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করেছে।’ শৃঙ্খলাবিধি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উপর একটি রাজনৈতিক আঘাত এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই বিধিমালা আইনজীবী সম্প্রদায়সহ দেশের কোনো শ্রেণির মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।’ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক এবং নিম্ন আদালতের বিচারকরা এই শৃঙ্খলাবিধি প্রত্যাখ্যান করবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, এই গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের মামলার স্পিরিট ধ্বংস হয়েছে। গেজেটের মাধ্যমে বিচার বিভাগ আইন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই শীর্ষ আইনজীবী। প্রসঙ্গত, দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে সোমবার নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ করে সরকার।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন