ফসলের মাঠে নারীদের না যেতে ফতোয়া, ইমামসহ গ্রেফতার ৩
মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে নারীদের খেত-খামারে যাওয়ার ব্যাপারে ফতোয়া জারির ঘটনায় এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এ ঘটনায় কল্যাণপুর মসজিদ কমিটির সভাপতি আলতাফ হোসেন, সেক্রেটারি মতিউর রহমান ও ইমাম আবু মুসাকে মঙ্গলবার রাতে আটক করেছে পুলিশ।
খেতের ফসল নষ্ট ও অসামাজিক কার্যকলাপের অজুহাত তুলে শুক্রবার উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুর জামে মসজিদের ইমাম ও কতিপয় মুসল্লি নারীদের খেত-খামারে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে বিভিন্ন মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই এলাকার অনেক নারী খেতে কাজ করার পাশাপাশি গরু-ছাগল চরানো এবং পশু খাদ্যের জন্য ঘাস কাটতে মাঠে যান। কেউ কেউ দুপুরে শ্রমজীবী স্বামী-সন্তানের খাবার সরবরাহের জন্যও খেত-খামারে যান। কিন্তু মাইকে ঘোষণা দিয়ে মাঠে যেতে বারণ করার পর থেকে নারীরা আর ফসলের মাঠে যেতে সাহস পাচ্ছেন না। এতে মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন তারা।
তবে এ ঘোষণার পক্ষে এখনও অনড় কল্যাণপুর মসজিদের ইমাম ও মুসল্লিরা। ইমাম আবু মুসার দাবি, তারা এলাকার ভালোর জন্য মসজিদে বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে নারীদের খেত-খামারে যাওয়া বন্ধ করেছেন।
কারণ হিসেবে তারা বলেন, নারীরা খেতে গিয়ে ফসল চুরি করেন। কেউ কেউ অসামাজিক কাজ করেন। এছাড়া নারীদের পর্দায় রাখা মুসলমান হিসেবে আমাদের ঈমানি দায়িত্ব।
তবে ওই মসজিদের খতিব আব্দুল মালেক বলেন, ওই ঘোষণার সময় আমি মসজিদে ছিলাম না। পরে ঘোষণার বিষয়টি শুনেছি। তিনি ইমামের বিরোধীতা করে বলেন, নারীদের কর্মক্ষেত্রে যেতে বাধা দেয়া যাবে না, ইসলাম এমন কাজ সমর্থন করে না।
এ ঘটনার পর স্থানীয় শ্রমজীবী নারী ও নারীবাদী সংগঠন তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। ওই গ্রামের বাসিন্দা আলো খাতুন বলেন, আমি বাড়িতে ছাগল পালন করি। প্রতিদিন ছাগলের জন্য মাঠ থেকে ঘাস সংগ্রহ করতাম। কিন্তু মসজিদে ঘোষণার পর ভয়ে ঘাস কাটতে যেতে পারছি না। এখন বাজার থেকে খাবার কিনে এনে আমার মতো গরীব মানুষের পক্ষে ছাগল পালন করা সম্ভব নয়।
স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য জাহানারা খাতুন বলেন, খেতের ফসল তো কেবল নারীরা চুরি করে না, পুরুষরাও করে। সুতরাং যে অপরাধ করবে তার সাজা হবে। তা না করে ঢালাওভাবে নারীদের খেত-খামারের কাজ যেতে বারণ করা মেনে নেয়া যায় না।
স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থার প্রকল্প সমন্বয়কারী জায়েদুল হক মতিন বলেন, মসজিদের মাইকে এমন ঘোষণা দুঃখজনক। এটা নারীদের ঘরে বন্দি করে রাখার একটা চক্রান্ত। এ ধরনের চেষ্টা নারী তথা বাংলাদশের অগ্রযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করবে।
এ বিষয়ে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনুজ্জামান (ইউএনও) মঙ্গলবার রাতে বলেন, কল্যাণপুর মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি মতিউর রহমান ও ইমাম আবু মুসাকে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে রাতে আমার দফতরে ডেকে আনা হয়। পরে কুমারখালী থানার এসআই রাজিবকে ডেকে ওই দুইজনকে তার হাতে তুলে দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে কুমারখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল খালেক জানান, এ ঘটনায় মসজিদ কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ইমামকে আটক করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন