‘পুলিশ ভাই আমি প্রতিবন্ধী ভিক্ষা না করে রিকশা চালিয়ে খাই, দয়া করে আমার রিকশা যেখানে-সেখানে ঠেকিয়ে সমস্যার সম্মুখীন করবেন না।’ এ কথা সামনে লাগিয়ে রিকশা চালান প্রতিবন্ধী আবদুস সামাদ। তার এক পা অচল।
পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তিনি ব্যাটারিচালিত রিকশায় ওই কথা লাগিয়ে রেখেছেন। কারণ নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিষেধ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে উত্তরা এলাকায় রিকশা চালান।
আবদুস সামাদ সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থানার ঝাউর গ্রামের মোসসের আলীর ছেলে। মাত্র ১১ মাস বয়সে তিনি তার বাবাকে হারান। আবদুস সামাদ চার ভাই এক বোনের মধ্যে সবার ছোট। আবদুস সামাদের অন্য কোনো ভাই-বোনের শারীরিক সমস্যা নেই।
চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন তিনি। জন্ম থেকেই আবদুস সামাদের এক পা কাজ করে না। এক পায়ের ওপর ভর করে তিনি রিকশা চালান। দীর্ঘদিন তিনি ঢাকাতে রিকশা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি তুরাগের ভাটুলিয়া এলাকার গ্যারেজ থেকে দৈনিক ৩০০ টাকা জমা দিয়ে রিকশা ভাড়া করে সারা দিন চালান।
কথা হয় প্রতিবন্ধী রিকশাচালক আবদুস সামাদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, আল্লাহ কেন যে আমাকে অন্য আট-দশজন মানুষের মতো সুস্থ করে দুনিয়াতে পাঠালেন না। আমি আমার বাবাকে খুব ছোট সময় হারিয়েছি। আমাদের আর্থিক অবস্থা একেবারেই খারাপ। পড়ালেখা মোটেও করতে পারিনি।
প্রতিবন্ধী বলে অনেকই আমার দিকে আড়চোখে তাকায়, তখন আমার খুব খারাপ লাগে। কিন্তু আমি কখনও ভিক্ষা করি না। আমার চেয়ে অনেক ভালো মানুষ আছে যারা ভিক্ষা নামের লজ্জাজনক পেশাকে বেছে নিয়েছে। কিন্তু ভিক্ষা পেশাটা আমার কাছে অনেক লজ্জার মনে হয়, তাই আমি ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে না নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।
আবদুস সামাদ বলেন, আমাদের নবীজী ভিক্ষাবৃত্তিকে কখনও পছন্দ করতেন না। নবীর শিক্ষা করিও না ভিক্ষা। এক পা দিয়ে রিকশা চালাতে কষ্ট হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কষ্ট তো হয়ই, কিন্তু কী আর করার আছে।
আমার ভাগ্যে হয়তো এটাই লেখা আছে। তা না হলে আমার অন্য ভাই-বোনের কোনো সমস্যা নেই, আমার কেন?
আবদুস সামাদ বলেন, প্রতিদিন আমার জমা ৩০০ টাকা, এটা বাদে আমার ৩০০-৪০০ টাকা প্রতিদিন আয় হয়। এই টাকা দিয়ে কোনো রকম জীবন কাটাচ্ছি।
আপনি রিকশার সামনে পুলিশের উদ্দেশে কেন এ কথাগুলো লিখেছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, লিখে রেখেছি কারণ ব্যাটারিচালিত রিকশা যদি পুলিশ সেক্টরের মধ্যে পায় তাহলে ডাম্পিংয়ে দিয়ে দেয়। তাই পুলিশ যাতে আমাকে কোনো রকম হয়রানি করতে না পারে- তাই কথাগুলো আমি রিকশার সামনে লিখে রেখেছি।
রিকশা গ্যারেজ মালিক বলেন, আবদুস সামাদ একজন খুব ভালো মানুষ। লেনদেন ভালোভাবে করে। সবচেয়ে বেশি তাকে আমার ভালো লাগে কারণ সে ভিক্ষা করে না। তার চেয়ে অনেক সুস্থ মানুষ আছে যারা ভিক্ষা পেশাটাকে বেছে নিয়েছে। আবদুস সামাদ ২০০২ সালে বিয়ে করেন।
এক কন্যা ও ছেলে সন্তানকে নিয়ে খুব কষ্টে জীবন অতিবাহিত করছেন। তার পরও তিনি ভিক্ষা করেন না। তিনি বলেন, আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন সৎ ভাবে জীবনযাপন করতে পারি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন