হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার ৫৩ টি প্রাইমারী স্কুলের দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগ নিয়ে কোটি টাকা বাণিজ্যের খবরে নবীগঞ্জে তোলপাড় চলছে। প্রতিটি পদে নিয়োগে ২ লাখ টাকা থেকে শুরু করে সবোর্র্চ্চ ৫ লাখ টাকা পর্ষন্ত নেয়া হয়েছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও মিলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এ নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন বলে নবীগঞ্জ শহরসহ পুরো উপজেলাব্যাপী চলছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকসহ বিভিন্ন মাধমে চলছে ব্যাপক তৎপরতা। রাজনৈতিক দল বিশেষ করে সরকারী দল আওয়ামীলীগসহ সকল দল, সুশীল সমাজ এমনকি সাংবাদিক সমাজ নীরব থাকায় তাদের বিরুদ্ধেও চলছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা। সাধারণত এত ছোট পদে চাকুরীতে ইতিপূর্বে এ রকম নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনা কখোনও সংঘঠিত হয়নি।
জানাযায়, গত ২৯ নভেম্বর স্থানীয় একটি পত্রিকায় সভাপতি বাছাই ও নিয়োগ কমিঠি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার এবং সদস্য সচিব বাছাই ও নিয়োগ কমিঠি ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুর রাজ্জাক স্বাক্ষরিত দপ্তরী কাম প্রহরী পদে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পরই শুরু হয়ে যায় নিয়োগ বাণিজ্যের তৎপরতা। গুঞ্জন রয়েছে ৫৩টি পদের মধ্যে হবিগঞ্জ-১ আসনের এমপি এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু ১৩ টি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর চৌধুরী ১০টি, ইউএনও ১৫টি, মুক্তিযোদ্ধাদের ২টি বাকী ১৩টি সরকার দলীয় রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন নেতাদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়েছে। আর যার যার লোক দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে দপ্তরী কাম প্রহরী পদে নিয়োগ পেতে আগ্রহীদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন অংকের টাকা। উল্লেখিত ৫৩টি পদের বিপরীতে মোট ৪২৬টি আবেদন পড়ে। এর মধ্যে ১০৩টি আবেদন বাতিল হয়।
বাছাইকৃত ৩২৩ জন বৈধ প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা বুধবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে নেয়া হয়। নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে পুলিশ না থাকলেও র্যাবের একটি টিমকে টহল দিতে দেখা গেছে। মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত বিভিন্ন শর্তও মানা হয়নি। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তাবলীর (গ) তে বলা হয়েছে প্রার্থীকে নৈশ প্রহরীর উপযুক্ত ও সুঠাম দেহের অধিকারী হতে হবে এবং সাইকেল চালনায় পারদর্শী হতে হবে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানাগেছে বেশীরভাগ প্রার্থীই নৈশ প্রহরীর উপযুক্ত নন। প্রার্থীদের বেশীরভাই সুঠাম দেহের অধিকারী নয়। এছাড়া সাইকেল চালাতে পারে কিনা তাও পরিস্কার নয়। বিজ্ঞপ্তির (ঞ) তে বলা হয়েছে বিগত ১৮/০৩/২০১৫ইং তারিখের উনিঅ/নবী/২০৩/১২৫নং স্মারকে জারীকৃত বিজ্ঞপ্তি আলোকে যারা আবেদন করেছেন, তাদের পুনরায় আবেদন করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু ২০১৫ সালে ঠিক কত জন প্রার্থী আবেদন করেছিলেন তা স্পষ্ট করেনি বাছাই ও নিয়োগ কমিঠি। বিজ্ঞপ্তির (ড) তে বলা হয়েছে নিয়োগ সংক্রন্ত সকল কাজ ‘দপ্তরী কাম প্রহরী’ নিয়োগের নীতিমালা অনুসারে সম্পন্ন হবে। কিন্তু পরীক্ষা দিতে আসা অনেক প্রার্থী অভিযোগ করেছেন তা মানা হয়নি। এদিকে পরীক্ষা দিতে আসা প্রার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির ২৯নং গুজাখাইর সরকারী প্রাইমারী স্কুলের মোট প্রার্থী ছিল ৪ জন। এর মধ্যে ৩ জনের সাথে কণ্টাক করা হয়। যার চাকুরী হবে তার টাকা রাখা হবে। পরীক্ষা চলাকালে ০২ নং সোনাপুর সরকারী প্রাইমারী স্কুলের এক প্রার্থীর পিতার সাথে আলাপকালে তিনি জানান, তার ছেলের চাকুরী হবে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তিনি জানতে পেরেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সিএ সুব্রতের সাথে অপর এক প্রার্থীর ২ লাখ ২০ হাজার টাকার কণ্টাক হয়েছে। এভাবে অনেক প্রার্থী ইউএনও’র সিএ সুব্রত ও সরকার দলীয় বিভিন্ন নেতার কাছে টাকা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে তারা চাকুরী হারানোর ভয়ে তাদের নাম পত্রিকায় প্রকাশ না করারও অনুরোধ করেন। স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও মিলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এ নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন বলে নবীগঞ্জ শহরসহ পুরো উপজেলাব্যাপী চলছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা। নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আসা(যারা টাকা দিতে পারেন নি) প্রার্থীরা এবং তাদের অভিভাবকরা এ নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে জেলা প্রসাশকের তত্বাবোধানে নতুন করে পরীক্ষা নিয়ে সঠিক ও যোগ্য প্রার্থীদের চাকুরীতে প্রবেশের সুযোগ দিতে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। নবীগঞ্জ শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও একই দাবি জানিয়েছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন