বায়তুল মোকাররমে সাদ বিরোধী বিক্ষোভ বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন না দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্দলভি। গতকাল বিকালে তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সর্বসম্মত এ সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাওলানা সাদ সুবিধাজনক সময়ে ঢাকা ছেড়ে যাবেন। তার আগ পর্যন্ত কাকরাইল মসজিদে অবস্থান করবেন। এ সমঝোতা সিদ্ধান্তের পর কয়েক দিন ধরে মাওলানা সাদকে নিয়ে চলা উত্তেজনার অবসান হলো। এর মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা ঘিরে যে সংকট তৈরি হয়েছিল তাও দূর হয়েছে বলে দাবি করেছেন আয়োজকরা।
ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে সমঝোতা হওয়ার পর স্বস্তি ফিরে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে। আজ থেকে শুরু হচ্ছে দুই পর্বের ইজতেমার প্রথম পর্ব। এজন্য ইজতেমা ময়দানে সব ধরনের প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। মাওলানা সাদের ইজতেমায় অংশ নেয়া নিয়ে কিছুদিন ধরে তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে টানাপড়েন চলে আসছিল। গত কয়েক বছর ধরে ইজতেমার আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করে আসা মাওলানা সাদ কিছু বিতর্কিত বক্তব্য রেখেছেন দাবি করে তার বিরোধী পক্ষ তাকে ইজতেমায় না আসার জন্য বলে। সর্বশেষ জোড় ইজতেমায় এ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে উঠে। একটি পক্ষ মাওলানা সাদকে ইজতেমায় আনার পক্ষে অবস্থান নেন। তাদের দাবি বিশ্ব তাবলীগ জামাতের মুরব্বি সাদ ইজতেমায় না এলে এটি বিশ্ব ইজতেমা হবে না। অন্যপক্ষ মাওলানা সাদকে ঠেকানোর ঘোষণা দেন। সর্বশেষ বুধবার মাওলানা সাদ কান্দলভি থাই এয়ারের একটি ফ্লাইটে ঢাকা আসছেন জেনে সকাল থেকেই বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করেন তাবলীগ জামায়াতের কওমী মাদরাসা ও হেফাজতে ইসলামসমর্থিত পক্ষ। কয়েক হাজার মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অবস্থানের কারণে ব্যস্ততম এই মহাসড়কে অন্তত সাত ঘণ্টা যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। এ কর্মসূচি থেকেই মাওলানা সাদকে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার (বেফাক) নেতারা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল তারা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বিক্ষোভ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সকালেই ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় মাওলানা সাদ ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন না। সার্বিক করণীয় ঠিক করতে বিকালে তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিকাল তিনটায় শুরু হওয়া বৈঠক চলে সন্ধ্যা সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ইজতেমা যথারীতি শুক্রবার থেকে শুরু হবে। যাদের নিয়ে বিতর্ক তারা সবাই সমঝোতায় এসেছেন। মাওলানা সাদ সুবিধামতো সময়ে দিল্লিতে ফিরে যাবেন, টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে যাবেন না। তিনি কাকরাইলে অবস্থান করছেন। বর্তমানে যে বিরোধ চলছে আগামীতে তা আরো ভালোভাবে মিটে যাবে। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, ধর্ম সচিব (ভারপ্রাপ্ত) আনিছুর রহমান, পুলিশের আইজিপি একেএম শহীদুল হক, র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান জাবেদ পাটওয়ারী, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার (ডিএমপি) মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি আল্লামা আশরাফ আলী, গুলশান আজাদ মসজিদের খতিব মাওলানা মাহমুদুল হাসান, আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ আবদুল্লাহ, বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ, জামিয়া রাহমানিয়ার মুহতামিম মুফতি মাহফুজুল হক, লালবাগ মাদরাসার মুফতি ফয়জুল্লাহ ও আফতাবনগর মাদরাসার মুহতামিম মুফতি মোহাম্মদ আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে তাবলীগ জামাতের শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, মাওলানা আবদুল হামিদ মাসুম, খান মুহাম্মাদ শাহাবুদ্দীন নাসিম, মাওলানা জিয়া বিন কাসেম, ইউনুছ শিকদার, মাওলানা মোশাররফ হোসাইন ও আনওয়ার হোসাইন অংশ নেন।
সকাল থেকেই বিক্ষোভের চেষ্টা: বুধবার রাত থেকেই মাওলানা সাদ অবস্থান করেন রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে। তাকে নিরাপত্তা দিতে মসজিদ ঘিরে রাখে পুলিশ। অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে সাদ বিরোধীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। রমনা জোনের ডিসি মারুফ হোসেন জোয়ার্দার জানান, সকাল ১০টার দিকে তাবলীগ কর্মীরা প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থানের চেষ্টা করে। তবে পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভেতর ঠেলে দেয়। পরে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সাদ বিরোধীরা সমাবেশ করেন। সমাবেশে অংশ নেন কওমীপন্থি আলেম ও তাবলীগ জামাতের একাংশ। সমাবেশ থেকে তারা মাওলানা সাদ কান্দলভিকে বিশ্ব ইজতেমায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
সমাবেশে কওমী আলেম ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেন, মাওলানা সাদ থাকলে কেউ ইজতেমায় অংশ নেবেন না। ইজতেমায় সাদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। তিনি বলেন, ইজতেমাকে নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেয়া হবে না। তাবলীগের জিম্মাদার মাওলানা লোকমান বলেন, মাওলানা সাদের উপস্থিতিতে কোনো ইজতেমা হবে না। আর এক্ষেত্রে পুলিশ যদি আমাদের বাধা দেয়, তাহলে ঘরে ঘরে আগুন জ্বলবে। অপ্রীতিকর সকল ঘটনার দায় মাওলানা সাদকেই নিতে হবে।
এদিকে, কাকরাইল মসজিদের সামনের পরিস্থিতি ছিল শান্ত। মৎস্য ভবন ও কাকরাইল মোড়ে ছিল পুলিশের সতর্ক পাহারা। পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক দল এ দু’স্থানে দায়িত্ব পালন করছিল। পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে তারা কাউকে কাকরাইল মসজিদ এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়নি।
সাদ না যাওয়ায় স্বস্তি
মহিউদ্দিন অদুল ও এমএ হায়দার সরকার, টঙ্গী থেকে জানান, দিল্লির মাওলানা সাদ কান্দলভীকে নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের তেমন রেশ পরেনি বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে। টঙ্গীর তুরাগ তীরে ইজতেমায় নেমেছে মুসল্লিদের ঢল। গত বুধবার সকালে বাংলাদেশে পৌঁছে আয়োজকদের একাংশের বিক্ষোভে পড়ে ইজতেমায় যাওয়া হয়নি মাওলানা সাদের। তিনি গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করে আসছেন। মাওলানা সাদ ইজতেমায় যাবেন না বৃহস্পতিবার এমন বার্তা আসার পর ইজতেমা ময়দানে অনেকটা স্বস্তি ফিরে আসে। ইজতেমা মাঠে নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও ইজতেমা অপরিচ্ছন্নতাসহ আয়োজনের ব্যবস্থাপনায় কিছুটা ঘাটতি দেখা গেছে। আজ শুক্রবার শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। গতকাল সকালে বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এতে বক্তব্য রাখেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্ণেল আনোয়ার লতিফ খান। মানবজমিনের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মাওলানা সাদ সম্ভবত ইজতেমা মাঠে আসবেন না। এই বিতর্কের কোনো প্রভাবও মাঠে পড়েনি। তার বিষয়ে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে কথা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে র্যাব ইজতেমা মাঠে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। মাঠে সার্বক্ষণিক থাকছে আড়াই’শ র্যাব সদস্য। তারা স্থল, জল ও আকাশ পথে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন। ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে র্যাব। বিদেশি অতিথিদের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হবে। বিশৃঙ্খলা ও যানজট এড়াতে সচেষ্টতা থাকবে। এই সঙ্গে স্ট্রাইকিং ফোর্স, বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ও মেডিকেল টিম রয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি।
ইজতেমার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে পুলিশ। পোশাক ও সাদা পোশাকে পুলিশের ৭ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করবে বলে জানান গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, এর আগে না থাকলেও এবার ইজতেমার নিরাপত্তায় নৌ-পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দ্বিগুণ করা হয়েছে স্থায়ী সিসিটিভি ক্যামেরা। বসানো হয়েছে ৫০টির বেশি সিসি ক্যামেরা। থাকছে পুলিশের ১৫টি ওয়াচ টাওয়ার। মূলত বিশ্ব ইজতেমা মাঠ পুলিশ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। আশপাশের বস্তিতে চালানো হয়েছে অভিযান। এছাড়া বিদেশি অতিথিদের অবস্থান ঘিরে যথেষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
মাওলানা সাদের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, তার আসা-না-আসা নিয়ে ইজতেমা ময়দানে কোনো প্রভাব পড়েনি। কোনো গ্রুপের আলাদা প্রভাবও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তবে যেকোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশ সজাগ রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমার শুরুর আগের দিন। সকাল থেকে ইজতেমা অভিমুখে দেখা গেছে মুসল্লিদের ঢল। বেলা বাড়ার সঙ্গে তা ক্রমেই বাড়তে থাকে। ইজতেমার সামনের প্রধান সড়কে একে একে আসতে থাকে বাস, মিনিবাস, ট্রাক, মিনিট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন। তাতে মালামাল নিয়ে আসেন মুসল্লিরা। একে একে তা গাড়ি থেকে নামতে থাকে। দল বেঁধে ঢুকেন ইজতেমা ময়দানে। নিজেদের নির্ধারিত স্থান খুঁজে নিয়ে সেখানে অবস্থান নেন। এরপর নেমে পড়েন তাঁবু টানানো, রান্না-বান্নাসহ নানা কাজে। আজান দিতেই নামাজে দাঁড়িয়ে পড়েন। নামাজ শেষে আবার প্রত্যহিক কাজ, ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব থেকে বয়ান শুরু হয়। গতকাল বেলা ১২টার দিকে ৫ নম্বর ফটক দিয়ে ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করেন মো. সুজন মিয়া ও তার ভাতিজা মো. হিরু মিয়া। আগের দিনরাত ১০টায় বাসে চেপে গাইবান্ধার বিসিক শিল্পপাড়ার বাসা থেকে ইজতেমায় পৌঁছেন তারা ১০ জন। কাঁধে ও মাথায় শীতের কাপড় ও লেপ-তোশকের বোঝা। সেই সঙ্গে রান্নার হাঁড়ি-পাতিল। তারা বলেন, তিন দিন থাকা-খাওয়ার সব প্রস্তুতি নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় এসেছি। সংবাদপত্রে মাওলানা সাদকে নিয়ে কিছুটা বিতর্কের কথা শুনেছি। আমরা আল্লাহর রাস্তায় এসেছি। তাতে কান দেব কেন? আমাদের মধ্যে নেতৃত্বের কোনো দ্বন্দ্ব থাকবে কেন?
ওই প্রবেশ পথের যেখানে-সেখানে পড়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। ধূলা-বালি। তা ছড়িয়ে গেছে বহুদূর পর্যন্ত। মাঠের ভেতরের দিকে দেখা গেছে ময়লা। এছাড়া ওই গেটের প্রবেশ পথে একটা বড়সড়ো ম্যানহোলে ঢাকনা নেই। মুসল্লিদের ভিড় শুরু হলে সেখানে পড়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে। ওই ফটকে ফোর্স সঙ্গে নিয়ে ৮মবারের মতো ইজতেমায় দায়িত্ব পালন করছিলেন টঙ্গী সদর থানার উপপরিদর্শক মো. কুদ্দুস মৃধা। তিনি বলেন, গত বুধবার রাত থেকেই মুসল্লিরা আসতে শুরু করেছেন। এখন মানুষের ঢল নেমেছে। মুসল্লিদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কিছুই প্রকাশ পায়নি। এবার অন্যবারের চেয়ে বেশি মুসল্লি আসছেন বলে ধারণার তার। এখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তা স্বীকার তিনি বলেন, আয়োজকদের দৃষ্টি অন্যদিকে সরে যাওয়ার হয়তো তারা এ বিষয়টির দিকে খুব একটা নজর দেওয়ার সুযোগ পায়নি। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানও তা এড়িয়ে গেছে।
অপরিচ্ছন্নতা ও খোলা ম্যানহোলের বিষয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জোন-১ টঙ্গী অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ঘাটতি থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। এরপর চার নম্বর গেটের কাছে গিয়ে দেখা যায় একটা বড় কাফেলা গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা ধরেন। তাদের একজন আবদুল করিম। তিনি বলেন, আমরা দলে ১৬০ জন। এসেছি নাটোর থেকে। আল্লাহর ওয়াস্তে এসেছি। সবার সঙ্গে মোনাজাত করবো। কোনো দ্বন্দ্বের কথা জানি না। ওই সময় ৪ নম্বর গেটেও ময়লা-আবর্জনা চোখে পড়ে। বিদেশিদের অবস্থান সংলগ্ন প্রথম গেটে গিয়ে দেখা যায় তা বন্ধ। দ্বিতীয় গেট দিয়ে ঢুকে দেখা যায়, একটার পর একটা বিদেশি অতিথির গাড়ি আসছে। গাড়ির ছাদে ও ভেতরে মালামাল। নেমেই ঢুকে যাচ্ছেন তাদের জন্য নির্ধারিত শেডে। এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অতিথি মুসল্লিরা এসে উপস্থিত হয়েছেন।
শেডের সামনে দায়িত্ব পালন করছিলেন, মো. শহীদুল্লাহ। তিনি বলেন, গত কয়েক দিন ধরেই বিদেশি মুসল্লিরা আসছেন। একজন একজন করে ইজতেমায় ঢুকছেন। আমি পাসপোর্ট ও ভিসা দেখে ভেতরে নিচ্ছি। ভেতরে প্রতিটি দেশের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তারা নিজ নিজ দেশের জন্য পৃথক স্থানে চলে যাচ্ছেন। আজ শুক্রবার শুরু হওয়া বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামী রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে। ইজতেমা ময়দানে আজ অনুষ্ঠিত হবে দেশের সর্ববৃহৎ জুমার জামাত। মাঝখানে চারদিন বিরতি দিয়ে আগামী ১৯শে জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। তা শেষ হবে ২১শে জানুয়ারি। এবার প্রথম পর্বে অংশ নিচ্ছে ১৭ জেলার মুসল্লিরা। এগুলো হলো, ঢাকা, শেরপুর, নারায়ণগঞ্জ, নীলফামারঢ, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, গাইবান্ধা, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, নড়াইল, মাদারীপুর, ভোলা, মাগুরা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পঞ্চগড়, ঝিনাইদহ, জামালপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, নরসিংদী, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, ফেনী, ঠাকুরগাঁও, সুনামগঞ্জ, বগুড়া, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা এবং পিরোজপুর। দুরের মুসডল্লরা এরই মধ্যে ইজতেমা মাঠে জমায়েত হলেও কাছে-দূরের অনেকে আসছেন আজ। তারা বাস ও ট্রেনের বিশেষ সার্ভিসে টঙ্গী আসছেন। এদিকে ইজতেমার মুসল্লিদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা। এর মধ্যে রয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন, গাজীপুর জেলা প্রশাসন, র্যাব, পুলিশ, আনসার ভিডিপি, ডেসকো, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, চিকিৎসকসহ নানা সংস্থা ও পেশাজীবী টিমের সদস্যরা।
সিলেটে ওলামাদের মিছিল
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে জানান, বিশ্ব মুসলিম ২য় বৃহত্তর ধর্মীয় জমায়েত টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশে আগমন করায় দিল্লির মাওলানা সা’দ কান্দলভীর অংশগ্রহণ করার প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে সিলেটের কওমি আলেম-উলামা ও তাবলীগের সাথীরা। বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে ছাত্র শিক্ষকরা মিছিল নিয়ে কোর্ট পয়েন্টে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, মাওলানা সা’দ যে বক্তব্য দিয়েছেন তা কোরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী। তাই আমরা কোনো অবস্থাতে তাকে বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে দেবো না। অবিলম্বে তাকে ফেরত পাঠাতে হবে। বক্তারা আরো বলেন, আমরা অত্যন্ত ভারাকান্ত হৃদয়ে প্রতিবাদ সভা করতে যাচ্ছি। মাওলানা সা’দ দেওবন্দ ও বাংলাদেশের শীর্ষ আলেম ও তাবলীগের সাথীদের অমান্য করে বাংলাদেশে আগমন অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা তাকে এদেশে আগমনের সুযোগ করে দিচ্ছে তারা তাবলীগ ও আলেম-উলামা বিরোধী। মাওলানা সা’দকে অবিলম্বে শীর্ষ আলেম উলামাদের কাছে তার অপকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় দেশের আলেম উলামাসহ সকল দীনদার মুসল্লিদেরকে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তাকে প্রতিহত করা সকল মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব। সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্টে সভাপতিত্ব করেন জামেয়া ক্বাসিমুল উলুম দরগাহ্ মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী। জামেয়া ভার্থখলা মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা শামসুদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াছ এর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন জামেয়া ফরিদাবাদ সিলেটের পরিচালক হাফিজ ফখরুয্যামান, জামেয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর মাদ্রাসার প্রতিনিধি মাওলানা মাসরুর আহমদ, দরগাহ্ মাদ্রাসার প্রতিনিধি মাওলানা আজিজুর রহমান, সুবহানীঘাট মাদ্রাসার প্রতিনিধি মাওলানা আহমদ সগীর, ফরিদাবাদ মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা লোকমান হাকীম, দারুস সালাম মাদ্রাসার প্রতিনিধি মাওলানা উমায়েদ আহমদ, জামেয়া দারুল হুদা মাদ্রাসার প্রতিনিধি মাওলানা কামাল উদ্দিন, শিবগঞ্জ মাদ্রাসার প্রতিনিধি মাওলানা রুহুল আমিন, মাদানী কাফেলা বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সালেহ আহমদ শাহবাগী, মাওলানা সালিক আহমদ, হাফিজ কবির আহমদ প্রমুখ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন