২০০৮ সাল। বাংলাদেশে চলছে সেনা নিয়ন্ত্রিত কঠোর জরুরী অবস্খা। সে অবস্খা হলো ধর ধর মার মার কাট কাট। দন্ডমুন্ডের কর্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মঈনউদ্দিন আহমেদ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রধান লেঃ জেনারেল মাসুিউদ্দিন চৌধুরী, এবং দুদকের চেয়ারম্যান লেঃ জেনারেল (অব.) হাসান মাসহুদ। এক এক করে সেনাদের হাতে প্রায় সকল রাজনীতিকরা আটক হয়ে কেউ জেলে কেউবা আবার ডিজিএফআই ব্লাকহোলে (অবশ্য যারা তাদের কথায় উঠবস করছেন, তারা ব্যতীত), কাউকে ক্যাঙারু কোর্টে টানাটানি চলছে, তৈরী করা একতরফা গল্প পত্রিকায় প্রকাশ করে চলছে চরিত্র হননপর্ব।
ঐ অবস্থায় ২৫ ফেব্রয়ারি ২০০৮ তারিখে আগে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান (দন্ডমুন্ডের কর্তা) জেনারেল মইন উ আহমদর বহুল আলোচিত হাই- প্রোফাইল ভারত সফর শুরু হয়। এ সফরেই মূলত নির্ধারিত হয়ে যায় বাংলাদেশের ভবিষ্যত- বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় সামনে কে আসছে। জেনারেল মইন মূলত ভারত গিয়েছিলেন, ক্ষমতায় বসতে সেদেশের সমর্থন আনতে। কিন্তু তাঁর সে আশা দুরাশায় পরিণত হয়। বরং দেখা যায়, ভারত ঘুরে আসার পরে জেনারেল মইনের সাথে কারাবন্দী শেখ হাসিনার মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে চুক্তি হতে। ধীরে ধীরে আওয়ামীলীগের সঙ্গে সেনা নিয়ন্ত্রিত-সরকারের অন্তরঙ্গতা বাড়তে থাকে। শেখ হাসিনার সাথে লিঁয়াজো রাখার বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিজিএফআইর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডঃ আমিন নিজ হাতে কেনা টাঙ্গাইলের শাড়ি এবং উন্নতমনের খাবার নিয়েও দেখা করতেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হবার লালিত স্বপ্ন নিয়ে সেনাপ্রধান লেঃ জেনারেল মইন খুব পরিকল্পিতভাবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছিলেন। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির পরে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে সেনা গোয়েন্দা সংস্থার প্ররোচনায় অরাজকতা বা ধ্বংসাত্মক কাযর্কলাপ চালানো হয়। পরে ২২ জানুয়ারী’০৭ অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচন বানচালের মাধ্যমে রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি করা হয়। অন্যান্য বাহিনীপ্রধান ও গোয়েন্দা সংস্থার পূর্ণ সহযোগিতা নিয়ে সামরিক শাসন জারীর উদ্যোগ নেন সেনাপ্রধান মইন। এ জন্য ঢাকাস্থ প্রভাবশালী কূটনীতিকদের সমর্থন চান মইন। জাতিসংঘের ঢাকা প্রতিনিধি রেনাটা লক ডেসালিয়ন এ বিষয়ে সক্রিয় সহযোগিতা করলেও শেষ সময়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে সামরিক শাসনের পক্ষে পূর্ন সমর্থন না পেয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হয় জেনারেল মইনকে। অতঃপর নির্ধারিত দিনে ১১ ই জানুয়ারী সদলবলে বঙ্গভবনে অনূপ্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে রাষ্ট্রপতি ডঃ ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করিয়ে দেশে জরুরী আইন জারী করতে বাধ্য করেন।
জরুরী আইনের বলে বলীয়ান হয়ে সারা দেশে দুর্নীতি দমনের নামে সেনাবাহিনী দিয়ে অভিযান চালানো হয়। তালিকাভুক্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরকে আটক করে জেল, জুলুম, শারীরিক অত্যাচার, নির্যাতন চালানো হয়। একাজে জেনারেল হাসিনা মসহুদ পরিচালিত দুর্নীত দমন কমিশনকে ব্যবহার করা হয় উলঙ্গভাবে। ’মাইনাস টু’ ফর্মুলার আওতায় দেশের দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আটক করে মিথ্যা মামলা দিয়ে রাজনীতি থেকে অপসারনের উদ্যোগ নেয়া হয়। রাজনীতিকে পরিবাবেরর কবল থেকে মুক্ত করার শ্লোগান দিয়ে ‘অউন ব্রান্ড’ গণতন্ত্র চালুর কথা ঘোষনা দেন সেনাপ্রধান মইন নিজে। জেনারেল মইন নিজে রাষ্ট্রপতি হবেন- এমন খবর প্রচার করে ডিজিএফআই নিয়ন্ত্রিত পত্রিকাগুলো। তখন দরকার হয়ে পড়ে বিদেশী সমর্থনের।
মূলত রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হওয়ার জন্য বৃহৎ শক্তিধর পড়শী ভারতের সাহায্য ও সমর্থন আদায়ের জন্য জেনারেল মইনের ভারত সফরের প্রস্তুতি চলতে থাকে। প্রথম চেষ্টায় ২০০৭ সালের আগস্ট মাসে জেনারেল মইনের ভারত সফর চুড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু এনিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনা মুখে এবং ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ে ছাত্রদের সাথে সেনাবাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষে সান্ধ্য আইন জারীর করতে হয়- সব মিলিয়ে ভারত সফর বাতিল ঘোষণা করা হয়।
এরপরে ২য় দফায় প্রস্তুতি নিয়ে ২০০৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ দিন ব্যাপী হাই প্রোফাইল সফর করেন জেনারেল মইন। ভারতীয় সরকারের পক্ষ থেকে মইনকে রাষ্ট্রপ্রধনের সমান প্রটোকল দেয়া হয়। এসফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জীসহ রাজনীতিক ও সমরবিদদের সাথে একাধিক বৈঠক করেন জেনারেল মইন। জেনারেল মইনের সঙ্গে একান্তে হওয়া এসব বৈঠকে বাংলাদেশের অনেক স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কথা হয়। এসকল বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে তা নিয়ে ভারতীয় সরকারী মাধ্যম বা জেনারেল মইন কোনো পক্ষ থেকেই পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিক ভাবে ছিু প্রকাশ করা হয়নি। সূত্রমতে ভারতীয় কতৃপক্ষকে নানা রকম আশ্বাসের দিয়েও নিজে ক্ষমতায় বসার পরিকল্পনায় ভারতের কাঙ্খিত সমর্থন লাভ করেননি জেনারেল মইন।
উপরন্তু তাকে বলা হয়, ভারত চায় বাংলাদেশে একটি নির্বাচন হোক এবং তাদের স্বপক্ষো একটি শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে। সূত্র মতে, সমর্থন লাভে ব্যর্থ হয়ে জেনারেল মইন ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে আশ্বস্ত করেন যে, বাংলাদেশে পূর্ব ঘোষিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন হবে এবং সেক্যুলার ফোর্স ক্ষমতায় আসবে। তাদের ক্ষমতায় আনতে যা কিছু করা দরকার, সবই করা হবে। অন্যদিকে জেনারেল মইনকে আশ্বস্ত করা হয় – তার কোনো অসুবিধা হবে না। সেই এগ্জিট পাবেন তিনি। তবে ঐ সফরে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা চুড়ান্ত হয়- বিএনপি ও তাদের মিত্র শক্তিকে কোনোভাবে ক্ষমতায় ফিরতে দেয়া হবে না। মূলত এ সফরের মধ্য দিয়েই চুড়ান্ত হয়- বাংলাদেশের ভবিষ্যত ক্ষমতায় কে যাবে সে বিষয়টি। জেনারেল মইন ভারতে যাবার পূর্বে মিডিয়ায় ব্যাপক ভাবে পজিটিভ প্রচারণা চালানো হলেও প্রত্যাবর্তনের পরে একেবারে নীরব হয়ে যায়, কেবল আইএসপিআরের একটি প্রেস রিলিজ ছাড়া।
তবে এখানে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, জেনারেল মইনের সফরের ঠিক এক বছর পরে ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ডাকার পিলখানায় চালানো হয় মর্মান্তিক হামলা, যাতে নিহত হয় ৫৭ জন সেনা অফিসার- পুরোপুরি ধঙস হয় বিডিআর বাহিনী। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সাহায্যের আগে করা গোপন চুক্তিতে লেখা ছিল- There will be no Frontier Guards, অর্থাৎ স্বাধীন বাংলাদেশের কোনো বর্ডার ফোর্স থাকবে না। ৩৮ বছর পরে ভারত গোয়েন্দা হামলা চালিয়ে ধংস করে দেয় বাংলাদেশের বর্ডার বাহিনীকে!
দেশে ফিরেই মার্চ’২০০৮ থেকে নতুনভাবে পরিকল্পনা পূনর্বিন্যাস করেন জেনারেল মইন। মূলত মার্চের মাঝামাঝি সেনা শীর্ষ কমান্ডের সাথে আওয়ামীলীগের নের্তৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। শুধু শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং অবধারিত মুক্তিই নয় বরং আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা নিয়ে যাতে আর বাড়াবাড়ি না করা হয়- সে বিষয়ে সকল পর্যায়ের গোয়েন্দা ও আইন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়। এসময়ে ডিজিএফআইয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এটিএম আমিনকে শেখ হাসিনার জন্য টাঙ্গাইল শাড়ি কেনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। অন্যদিকে মহাপরিচালক মেজর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ সিরিজ মিটিং করেন এইচ টি ইমাম সহ আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাথে। ২০০৮ সালের এপ্রিল মাস থেকেই আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিক পরিস্থিতির ক্রমশ উন্নতি হতে থাকে। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিচালক মেজর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এটিএম আমিন জেলখানায় বন্দী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা ও সম্মানজনক ব্যবহার নিশ্চিত করেছেন। শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎকালে বেশীরভাগ সময়ে এটিএম আমিন উন্নতমানের খাবার নিয়ে যেতেন বলে গোযেন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সেনাসদরে অনুষ্ঠিত উর্ধতন সেনা কর্মর্তাদের নীতিনির্ধারনী বৈঠকে ডিজিএফআইয়ের একজন কর্মকর্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মইনকে প্রশ্ন করেন- সামনে কি ঘটতে যাচ্ছে? জেনারেল মইন দার্শনিকের মত জবাব দেন, “আমরা কি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সৈন্য তুলে আবার reorganize(পূনবিন্যাস) করি না? সেরকম কিছুই হচ্ছে।” প্রকৃতপক্ষে ভারত সফরের আগে অবধি সেনাপ্রধান ও দুই গোয়েন্দা প্রধানের মধ্যে কর্মপদ্ধতি ছিল তুলনামুলক নিরপেক্ষ, দেশপ্রেম ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিল। কিন্তু মার্চের পরেই পরিস্থিতি ক্রমশঃ আৎলীগের দিকে ঢালু হতে থাকে।
১১ মার্চ ২০০৮ শেখ হাসিনাকে ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তির পরে কড়া গোপণীতার মধ্যে কারাবন্দী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেন জেনারেল মইন। ঐ বৈঠকে শেখ হাসিনার মুক্তি, বিদেশ যাত্রার ব্যবস্থা করা, শেখ হাসিনার মুখ বন্ধ রাখা, পরবর্তীতে নির্বাচনের রকমফের, সরকার গঠন এবং ১/১১র কুশীলবদের দায়মুক্তি ইত্যাদি তাবৎ বিষয় নিয়ে আলোচনা ও মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। আলোচনা প্রলৈম্বিত হওয়ায় শেখ হাসিনার মুক্তি ও বিদেশযাত্রা কয়েকদিন বিলম্বিত করা হয়। কিন্তু বাইরে আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ বিচলিত হয়ে উঠেছিলেন। পরবর্তীতে মইন-হাসিনা চুক্তির ধারাবাহিকায় সরকারের উপদেষ্টা, অনান্য নীতি নির্ধারক এবং উর্ধতন সেনা কর্মকর্তারা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদকসহ দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাথে নিয়মিত বৈঠক করেন। হঠাৎ করে একদিন দেখা যায় সকাল-বিকালে শেখ হাসিনার চার মামলায় জামিন, পাসপোর্ট ফেরত দান, ইত্যাদি নানা কিছু ঘটতে থাকে। শেখ হাসিনাকে মুক্তি দেয়ার পরে মঈন সরকারের উপদেষ্টারা ছুটে যান তাঁর বাসায়। আ’লীগ প্রধান খুব দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রে গমনের পরে জেনারেল মইনের সহপাঠি উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমানের সাথে একান্ত বৈঠক হয় এবং এতে পরাশক্তি ও প্রতিবেশী দেশের প্রতিনিধিরা তাতে সাক্ষী হিসাবে থাকেন।
বেগম খালেদা জিয়ার আত্মীয় মেজর জেনারেল মাসুদউদ্দিন চৌধুরী ১/১১র সময় ছিলেন সাভারের জিওসি। ১১ জানুয়ারির ঘটনার সময় মিইনের সমরেএন ট্যাংক বাহিনী নিয়ে বঙ্গভবন ঘেরাও করে ক্যু সফল করেন। কিন্তু ক্ষমতা পরিবর্তনের পরে জেনারেল মাসুদকে ভয় পেতে থাকেন সেনাপ্রধান মইন। এ পর্যায়ে মাসুদকে পদোন্নতি দিয়ে লেফটেনেন্ট জেনারেল করে নবম পদাতিক ডিভিশন থেকে তুলে এনে বসানো হয় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল ষ্টাফ অফিসার করে। তাকে দায়িত্ব দিয়ে হয় ধরপাকড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত এনসিসর প্রধান সমন্বয়কের। মূলত ব্রিগেডিয়ার আকবরের নিকট থেকে মাসুদের দায়িত্ব হস্তান্তরের পর থেকে দুর্নীতি দমন ড্রাইভ আওয়ামীলীগের ক্ষেত্রে উদার হতে থাকে, অন্যদিকে বিএনপির প্রতি কঠোর এরূপ একচোখা নীতিতে চলতে থাকে। এ সময়ে তারেক রহমান, সাদেক হোসেন খোকা সহ অনেকের মামলা চার্জশীট ও মামলার গতি জোরদার হয়।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পূর্বেই ফলাফলের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিশ্ছিদ্র করতে বিগত জোট সরকারের আমলে নিয়োগকৃত ২ ব্রিগেডিয়ার বারী ও আমিনকে ডিজিএফআই হতে অপসারণ করা হয়। মূলত শেখ হাসিনা ও ভারতের চাহিদা অনুযায়ী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারীকে যুক্তরাষ্ট্রে ডিফেন্স এটাশে এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনকে পদোন্নতি দিয়ে আনসার-ভিডিপির মহাপরিচালক পদে বদলী করে সরিয়ে দেয়া হয়। কর্নেল মামুনকে বসানো হয় ডিজিএফআইতে এবং নির্বাচন সংক্রান্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পূর্ন দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট যাতে কোনোভাবেই বিজয়ী হতে না পারে সে জন্য জেনারেল মইন পর্দার আড়ালে থেকে ব্যাপক তৎপরতা চালাতে থাকেন। ডিজিএফআই সরাসরি উদ্যোগে বিএনপির নেতৃত্ব হাইজ্যাক করে সাইফুর-হাফিজ কমিটিকে বৈধ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ব্যাপক তৎপরতা চালানো হয়। ব্যাপক বাধা বিপত্তির পরেও বিভিন্ন জরিপে চার দলীয় জোটের বিজয়ী হবার সম্ভাবনা ফুটে উঠলে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার জন্য জেনারেল মইন ব্যাক্তিগত ভাবে হস্তক্ষেপ করেন। বিএনপি প্রধানকে চাপে ফেলে তাদের ফরমুলা অনুযায়ী নির্বাচনে যেতে বাধ্য করে, এতে জোটের অংশীদার জামায়াতের চাপ ছিল ব্যপক। বিএনপি নির্বাচনে না গেলে জোট ভেঙ্গে জামায়াত একক ভাবে নির্বাচ করবে এমন হুমকি প্রেক্ষিতে খালেদা জিয়া নির্বাচনে যেতে বাধ্য হন। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ন্ত্রনের জন্য সেনাগোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ব্যবহার করা হয়েছে ব্যাপকভাবে। যদিও এ পরিকলল্পনার সাথে প্রধান উপদেষ্টা ডঃ ফখরউদ্দিন আহমেদ একমত ছিলেন না। কিন্তু জেনারেল মইনের নিজস্ব কমান্ডে অবশেষে ২৯ ডিসেম্বরের নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হয়, যাকে বাইরে ভালো ভোট হলেও ফলাফল ছিল পূর্ব নির্ধারিত। সেই ফলাফল ঘোষণা করে ৪ দলীয় জোটের আসন সংখ্যা পরিকল্পনা মাফিক ৩০ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে সক্ষম হয় মইনউদ্দিন। পরে অবশ্যে শেখ হাসিনা সরল স্বীকারেক্তি করেন- চাইলে আরেকটু সিস্টেম করে খালেদা জিয়াকে বিরোধী দলের নেত্রী হতে দিতাম না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন