২০১৭ সালে সারা দেশে চার হাজার ৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৩৯৭ জন নিহত ও ১৬ হাজার ১৯৩ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি নামের একটি বেসরকারি সংস্থা।
১৩ জানুয়ারি শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট-২০১৭ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ তথ্য তুলে ধরেন।
মোজাম্মেল জানান, ২০১৬ সালে চার হাজার ৩১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় হাজার ৫৫ জন নিহত ও ১৫ হাজার ৯১৪ জন আহত হয়েছিল। অন্যদিকে ২০১৭ সালে চার হাজার ৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৩৯৭ জন নিহত ও ১৬ হাজার ১৯৩ জন আহত হয়েছে। এতে দেখা যায়, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে মোট দুর্ঘটনা, নিহত ও আহতের পরিমাণ যথাক্রমে ১৫ দশমিক ৫, ২২ দশমিক ২ ও ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সংগঠন ফুয়ারার সভাপতি ইকরাম আহমেদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ, সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আইনজীবী হুমায়ন কবির হিরু, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ খোকন, মুক্তিযোদ্ধা ও সমাজসেবক মো. হারুন অর রশিদ প্রমুখ।
দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রচারিত প্রতিবেদনের আলোকে দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করে সংস্থাটি। তাদের হিসাবে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে ছোট-বড় চার হাজার ৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এতে সর্বমোট ২৩ হাজার ৫৯০ জন যাত্রী, চালক ও পরিবহন শ্রমিক হতাহত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে হাত, পা বা অন্য কোনো অঙ্গ হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়েছে এক হাজার ৭২২ জন। এসব দুর্ঘটনায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় দেড় থেকে দুই শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বছর এক হাজার ২৪৯টি বাস, এক হাজার ৬৩৫টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ২৭৬টি হিউম্যান হলার, ২৬২টি কার, জিপ, মাইক্রোবাস, এক হাজার ৭৪টি অটোরিকশা, এক হাজার ৪৭৫টি মোটরসাইকেল, ৩২২টি ব্যাটারিচালিত রিকশা, ৮২৪টি নছিমন-করিমন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সংগঠিত দুর্ঘটনার ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ পথচারীকে চাপা, ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১১ দশমিক ৯ শতাংশ খাদে পড়ে, ২ দশমিক ৮ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে সংগঠিত হয়।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, রাস্তা-ঘাটের নির্মাণ ক্রটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, মহাসড়ক ও রেলক্রসিংয়ে ফিডার রোডের যানবাহন উঠে পরা এবং রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকায় রাস্তার মাঝপথে পথচারীদের যাতায়াত।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ট্রাফিক আইন, মোটরযান আইন ও সড়ক ব্যবহার বিধিবিধান সম্পর্কে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য, মসজিদ, মন্দির, গির্জায় জনসাধারণের জন্য ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা, টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে হাট-বাজার অপসারণ করা, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা।
সুপারিশের মধ্যে আরও রয়েছে- জেব্রাক্রসিং অঙ্কন, চালকদের পেশাগত প্রশিক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা, যাত্রীবান্ধব সড়ক পরিবহন আইন ও বিধিবিধান প্রণয়ন, গাড়ির ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে আধুনিকায়ন, জাতীয় মহাসড়কে স্বল্প গতি ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা।
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন