পৌষের ঠান্ডা হাড় কাঁপাচ্ছে যান্ত্রিক শহর রাজধানীর মানুষদেরও। উত্তরের হিমেল হাওয়া দক্ষিণেও জোর শীত নামিয়েছে। একাধিক গরম কাপড় শরীরে জড়িয়েও উষ্ণতা বাড়ানো যাচ্ছে না ঢাকায়। শীত তাড়াতে দিনের মধ্যবেলাতেও ঘরে অবস্থান করছেন নগরবাসী।
এমন শীতেও হামাগুড়ি দিয়ে মাটিতে প্রায় গড়াগড়ি করছেন মোসলেম। প্যান্ট ভাঁজ করা হাঁটুর ওপরে। হাফ হাতা গেঞ্জির বোতমও খোলা। গামছা আছে বটে, তবে তা কোমরে বাঁধা। তাপমাত্রা আর কত নিচে নামলে ওর শরীরে শীত স্পর্শ করতে পারবে, তা দেখে বলার জো নেই। তবে বেঁচে থাকার সংগ্রামে শীত তাড়াতে যে তার বেগ পোহাতে হয় না, তা সহজেই বোঝা যাচ্ছে।
দেহে পা আছে ঠিক, তবে তা নামমাত্র। জন্মের পর পা ফেলে হাঁটার সুযোগ হয়নি কখনও। হাড্ডিসার পা দুটি পেছনেই থাকে ওর। হাঁটু ফেলে হাঁটলে পায়ের বাকি অংশ পেঁছনে নড়বড় করে। এ নড়বড় পা’ই এখন মোসলেমের বেঁচে থাকার পাথেয়। আর সন্তানের অকার্যকর পায়েই ভর করে বেঁচে আছেন মোসলেমের মা’ও।
বিশ্ব ইজতেমার মাঠে আখেরি মোনাজাতের দিন বিশেষ প্রস্তুতি নিয়ে ভিক্ষার আস্তানা গড়বেন এ প্রতিবন্ধী। এজন্য একটি বাটি, এক ফালি পলিথিন, একটি কুপি আর সামান্য কেরোসিন কিনতে কিছু ব্যয়ও করতে হবে মোসলেমকে।
শনিবার বিকেলে ইজতেমা মাঠে কথা হয় জন্ম প্রতিবন্ধী মোসলেমের সঙ্গে। বাড়ি নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার কাঠালি গ্রামে। পাঁচ ভাই, দুই বোন। দ্বিতীয় ভাই মারা গেছেন বহু আগে। বাবাও গত হয়েছেন শৈশবে।
পরিবারের ছোট মোসলেমের সবার আদর পাওয়ার কথা থাকলেও প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে শৈশবেই বোঝা হয়ে ওঠে। সক্ষম সাবালক ভাইয়েরা একে একে মুখ ফিরিয়ে নেন ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে। অসহায় সন্তানকে কোলে-পিঠে আগলে রেখে বড় করেছেন মা।
মায়ের ভালোবাসার প্রতিদান দিতেও কার্পণ্য করেননি মোসলেম। জীবনের ঘানি টানতে আট বছর আগে ঢাকায় পাড়ি জমালেও মাকে এক মুহূর্তের জন্য ভুলে যায়নি। ভিক্ষা করেই মাসে ৫ হাজার টাকা মাকে পাঠান। সংসার ভালো চললেও অন্য ভাইয়েরা দুখী মায়ের আর খবর রাখে না। এমনকি ভাবিদের বাঁকা চোখের কারণে ভাইয়েরা মায়ের সঙ্গে কথাও বলেন না এখন।
জীবনকে এভাবে টেনেও সুখী- এমনটি জানিয়ে মোসলেম বলেন, মায়ের সেবা করতে পারছি, এর চেয়ে ভালো কাজ আর কি আছে! ভাইদের সবই আছে। শুধু মায়ের জায়গা নেই তাদের কাছে। বিয়ে করছি না, মায়ের দিক চিন্তা করেই। ভাইদের সচল পা, তবুও মায়ের ভরসা আমার খোঁড়া পায়েই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন