গোপালগঞ্জে ধর্ষণের শিকার আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহকর্মী রেশমা আক্তার (১৯) এখন প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। একদিকে সামাজিক লোকলজ্জা, অপরদিকে ধর্ষকদের হুমকি রেশমার জীবনটাকে দূর্বিষহ করে তুলেছে।
সম্প্রতি, এ ব্যাপারে সদর উপজেলার পুকুরিয়া গ্রামের বাদশা শেখের ছেলে ধর্ষক সেলিম (৩৫), মোমরেজ দাড়িয়ার ছেলে মিরাজ দাড়িয়া (৫০) ও ধর্ষণের সহযোগিতাকারী সেতু বেগমকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদাতে মামলা করেছেন ফরিয়াদি রেশমা বেগম (মামলা নং-৩/২০১৮)।
অপরদিকে, অনাগত সন্তানের স্বীকৃতি ও ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মুখ খোলাই তার জন্য যত কাল হয়ে দাড়ায়। ধর্ষকরা জোর করে ফাঁকা নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে রেশমার কাছ থেকে স্বাক্ষর করে নিয়েছে। মামলা তুলে নেয়ার জন্য তাকে হত্যা করে বস্তার মধ্যে ভরে নদীতে ফেলে দেয়াসহ নানান হুমকি দিচ্ছে তারা। এত কিছুর পরও পুলিশ নীরব থাকায় রেশমার নিরাপত্তা চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, তিন বছর আগে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার কামাইদা গ্রামের শফি মাতুব্বারের মেয়ে রেশমা বেগমকে (১৯) গৃহপরিচারিকা হিসেবে বাসায় কাজে নিয়ে আসেন তৎকালীন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানা পুলিশের এসআই কামরুল ইসলাম। দেড় বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় এসআই কামরুল মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী সেতু বেগম একমাত্র সন্তান ও গৃহপরিচারিকা রেশমাকে নিয়ে গোপালগঞ্জ সদরের পুখুরিয়া গ্রামে তার মামার বাড়িতে চলে আসেন। একপর্যায় সেখানে তারা বসবাস করতে থাকেন।
অপরদিকে, স্বামীর মৃত্যুর পর উচ্চাভিলাষী সেতু বেপরোয়া জীবন যাপন করতে শুরু করেন। ধর্ষক সেলিমসহ কতিপয় যুবকের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। ওইসব যুবকরা রাত বেরাতে সেতুর বাড়িতে যাওয়া আসা করতেন। অর্থের বিনিময়ে দেহ ব্যবসায় জড়িযে পড়েন সেতু। এরই মধ্যে একদিন সেতুর মাধ্যমে ধর্ষক সেলিম রেশমাকে তার সঙ্গে মেলামেশার প্রস্তাব দেয়। তাতে সে রাজি না হওয়ায় সেলিম তাকে টাকা দেয়ার লোভ দেখায়। এতেও সে রাজি না হলে সেলিম তাকে বিবাহ করা প্রস্তাব দেয়। এভাবে সেলিম তাকে ফুঁসলাতে থাকে।
২০১৭ সালের ৪ মার্চ রাতে সেতুর সহযোগিতায় তার মামা বাড়িতে একটি কক্ষের মধ্যে রেশমাকে আটকে ধর্ষণ করে সেলিম। এভাবে তাকে সাতদিন ওই বাড়িতে ধর্ষণ করা হয়।
এক পর্যায়ে সেতুর বাবা সৌদি প্রবাসী মিরাজ দাড়িয়া দেশে আসেন। ওইসময় গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে সেতুর মা জেসমিন বেগমের শরীরে অস্ত্রোপচার হয়। ওই কারণে মায়ের সেবা করতে দু’দিন সেতুকে হাসপাতালে থাকতে হয়। তখন রেশমা ও সেতুর বাবা মিরাজ দাড়িয়াকে ওই বাড়িতে একা থাকতে হয়। ওই সুযোগে মিরাজ দাড়িয়াও পর পর দু’দিন রেশমাকে ধর্ষণ করে। এতে এক পর্যায়ে রেশমা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে রেশমা বেগম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমার দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে ধর্ষকরা আমাকে নানান হুমকি দিচ্ছে। আমি খুব অসহায়। আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমার বৃদ্ধ বাবাকে ওরা তিন দিন ধরে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখে। পরে সেখান থেকে কৌশলে তিনি পালিয়ে এসেছেন। আসামিরা খুবই প্রভাবশালী। এছাড়া গোপালগঞ্জ থানা পুলিশের সাবেক ও বর্তমান কোটালিপাড়া থানায় কর্মরত এক এসআই’র সঙ্গে সেতু বেগমের সম্পর্ক রয়েছে। তাকে দিয়েও আমাকে ভয় দেখানো হচ্ছে। আমি কোথায় গিয়ে ওঠবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
এ সমাজে আমার ঠাঁই হবে না। আমার আত্মহত্যা ছাড়া কোনো গতি নেই। আমি আমার অনাগত সন্তানের পরিচয় চাই। চাই ধর্ষকদের বিচার।
গোপীনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হযরত আলীর সঙ্গে কথা বললে মামলাটির তদন্ত চলছে বলে তিনি জানান।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন