এক নারীকে অস্ত্রের জোরে তুলে নিয়ে বিয়ে করা’ এবং ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করা’ ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।
ডিএমপি কমিশনারের এমন বিরক্তি প্রকাশে সাংবাদিকরাও বিরক্ত হয়েছেন, হয়েছেন বিব্রত। বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, সাধারণ মানুষ যদি এমন গুরুতর অপরাধ করতো তখন যত্রতত্র ব্যবস্থা নিতো পুলিশ। আর এখন খোদ পুলিশের শীর্ষকর্তার ফৌজদারি অপরাধে লঘু শাস্তিতে এগুচ্ছে তারা। পাশাপাশি তদন্তের দোহাই দিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) পুরান ঢাকায় আজিমপুর গার্লস স্কুল ও কলেজে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকরা ডিএমপি কমিশনারের কাছে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানতে চান।
এ সময় পুলিশ কমিশনার বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘একথা অনেকবার বলেছি, আপনারা একটা কথা কেন বার বার জিজ্ঞাসা করেন, আমি জানি না। একটা কথা বারবার জিজ্ঞেস করার অর্থ আমি বুঝি না।’
সম্প্রতি শেষ হওয়া পুলিশ সপ্তাহের আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মিজানের বিরুদ্ধে এক নারীকে তুলে নিয়ে বিয়ে করার পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠে।
এই ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর মিজানকে প্রত্যাহার করে ডিএমপি। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল পুলিশ সপ্তাহ শেষে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছিলেন।
তবে পুলিশ সপ্তাহ শেষ হলেও মিজানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সেটা জানানো হয়নি। এই বিষয়টি নিয়েই ডিএমপি কমিশনারের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন সাংবাদিকরা।
মিজানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে- পুরনো কথা আবারও বলেন আছাদুজ্জামান মিয়া। বলেন, ‘আইনের উর্ধ্বে কেউ নয়, আমি বারবার এটা বলেছি। পুলিশ একটি পেশাদার বাহিনী। এখানে অন্যায়ভাবে কিছু করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নাই।’
ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে অতিরিক্ত আইজিপি মঈনুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার।
তদন্তে অসততা, ও আইন বহির্ভূত কাজ প্রমাণিত হলে মিজানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও নিশ্চয়তা দেন ডিএমপি কমিশনার।
‘একটি ঘটনার নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু তদন্ত করার সুযোগ আপনারা (সাংবাদিক) দেবেন’- এমন মন্তব্য করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আপনারা একটি জিনিসকে বারবার এনে যদি একটি মিডিয়া ট্রায়াল করার চেষ্টা করেন বা একটি নিরপেক্ষ, ন্যায়নিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যদি প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন, সেটাও ন্যায়বিচারের জন্য সঠিক হবে না বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।’
ডিআইজি মিজানের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তিনি দুই সাংবাদিককে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এই দুই সাংবাদিকের জিডি পুলিশ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘যদি কোনো কারণে জিডি না নেওয়া হয়, তার উপরস্থ স্তরে অভিযোগ করা যেতে পারে।’
উল্লেখ্য, মরিয়ম আক্তার ইকো নামের এক নারী ব্যাংক কর্মকর্তা সম্প্রতি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন গত জুলাই মাসে তার বাসা থেকে তাকে কৌশলে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা মিজান। পরে বেইলি রোডে তার বাসায় নিয়ে তিন দিন আটকে রাখা হয়েছিল ওই নারীকে।
আটকে রাখার পর বগুড়া থেকে তার মাকে ১৭ জুলাই ডেকে আনা হয় এবং ৫০ লাখ টাকা কাবিননামায় ডিআইজি মিজানকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়। পরে লালমাটিয়ার একটি ভাড়া বাড়িতে ওই নারীর সঙ্গে বসবাস করেছেন ডিআইজি মিজান।
নিজের ফেসবুকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে একটি ছবি শেয়ারের পর ওই নারীর ওপর ক্ষেপে যান মিজান। বাড়ি ভাঙচুরের একটি মামলায় তাকে গত ১২ ডিসেম্বর কারাগারে পাঠানো হয়। সেই মামলায় জামিন পাওয়ার পর মিথ্যা কাবিননামা তৈরির অভিযোগে আরেকটি মামলায় তাকে আটক দেখানো হয়। দুই মামলাতেই জামিনের পর ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তোলেন ওই নারী।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন