এ টু জেড কোয়ালিটি প্রোডাক্ট। এগ্রো ফার্ম। এ ফার্মে তৈরি হয় মূল্যবান বিভিন্ন হারবাল ওষুধের কাঁচামাল। বিদেশে এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা। তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা বায়ো কলি অর্গানিক সিড-এর। আমেরিকা ও ইউরোপে পণ্যটির চাহিদা অত্যধিক।
প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষ নিজেরা বিপুল পরিমাণ এই পণ্য যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে এসব তথ্যের সবই ভুয়া। ভুয়া তথ্য দিয়ে প্রতারণা করে যাচ্ছে তারা। সম্প্রতি প্রতারক চক্রটির সন্ধান পেয়েছে
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সম্প্রতি তাদের এক নারী সদস্যসহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৭ই ডিসেম্বর রাজধানীর পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করেন বদরুল হুদা নামে এক ব্যবসায়ী। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, গত বছরের ২৭শে জুলাই সামছুদ্দিন পরিচয়ে এক ব্যক্তি তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেন। ওই ব্যক্তি জানান, সিলেটের কানাইঘাটে ‘এ টু জেড’ নামের এগ্রো ফার্মের মালিক তিনি। তার ফার্মে বিভিন্ন ধরনের হারবাল ওষুধের কাঁচামাল তৈরি হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন বায়ো কলি অর্গানিক সিড। আমেরিকা ও ইউরোপে পণ্যটির চাহিদা অত্যধিক। প্রচুর লাভের কথাও বলেন। সামছুদ্দিনের কথামতো তিনি রাজি হলে, একটি বিদেশি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ড. রামেলা লিচুপা পরিচয়ে বদরুল হুদাকে গত ১১ই আগস্ট একটি ই-মেইল করেন। ই-মেইল বার্তায় ওই বিদেশি পরিচয়ধারী ব্যক্তি ব্যবসায়িক আলোচনার বিভিন্ন পর্যায়ে প্রোফর্মা ইন ভয়েস, অফার লেটার, মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (এমওইউ) এবং পরবর্তীতে ওই কোম্পানির পরিচালক পরিচয়ে মিস লুচি বেনেট নামে আরেকজন আরো একটি ই-মেইল করেন। ই-মেইলে তার সঙ্গে বদরুল হুদার পণ্যের কোটেশন, পারচেজ অর্ডারসহ বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান হয়। এছাড়া কথিত এ টু জেড প্রডাক্টের মালিক সামছুদ্দিনও এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি ই-মেইল বার্তা পাঠায়। বিদেশি কোম্পানির গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী তিনি ৬ প্যাকেট পণ্যের অর্ডার করতে গত ২৪শে আগস্ট সামছুদ্দিনের মোবাইলে কল করেন। কলটি রিসিভ করেন সামছুদ্দিনের স্ত্রী পরিচয়ে মিসেস ফাতেমা বেগম। ওই নারী জানান, তার স্বামী বিদেশে আছেন চিকিৎসার জন্য। তবে ব্যবসায়ের ব্যাপারে তিনি সব জানেন। তিনি নিজেই ওই পণ্য সরবরাহ করতে পারবেন। তাকে প্রতি প্যাকেট ২৯ হাজার টাকা দরে ৬ প্যাকেট পণ্যের দাম এ টু জেড কোয়ালিটি ফার্মের প্রতিনিধি শাহাদাত সরদারের একাউন্টে দিতে বলেন। তার কথামতো গত ২৯শে আগস্ট সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের প্রিন্সিপাল শাখা থেকে ভাটারা শাখায় শাহাদাত সরদারের একাউন্টে ৮৭ হাজার টাকা দেন। পরদিন বদরুল হুদার রমনা ভবনের অফিসে পণ্য ডেলিভারি দিতে আসলে শাহাদাতকে নগদ আরো ৮৭ হাজার টাকা দেন। গত ১০ই সেপ্টেম্বর ড. স্টিফেন উইলিয়ামস পরিচয়ে ব্যক্তি বদরুল হুদাকে ফোন করে উত্তরা ১ নং সেক্টরের রিচমন্ড হোটেল অ্যান্ড সুইটস-এ পণ্যের নমুনা নিয়ে যেতে বলেন। ৬টি প্যাকেটের এই নমুনা দেখে তিনি সঠিক রয়েছে বলে মতামত দেন। পরদিন ই-মেইলে অর্ডারের ৬০০ প্যাকেটের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৬০ প্যাকেট নেবে বলে জানায়। প্রতিটির প্যাকেট দাম ৮৫০ পাউন্ড বা বাংলাদেশি টাকায় ৯৬ হাজার টাকা। এরপর সরবরাহকারী কোম্পানির মালিক সামছুদ্দিনের কথিত স্ত্রী মিসেস নুসরাত ফাতেমা বেগম বদরুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করে ৫৪ প্যাকেট পণ্যের অর্ডার নেন। একইদিন কোম্পানির কথিত প্রতিনিধি শাহাদাত ওই ৫৪ প্যাকেট ‘বায়ো কলি অর্গানিক সিড’ নিয়ে বদরুল হুদার অফিসে নিয়ে যায়। এ সময় বদরুল হুদা ওই পণ্যবাবদ নগদ ১৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকা প্রদান করেন। শাহাদাত টাকা নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার পর তিনি স্টিফেন উইলিয়ামসকে প্যাকেটগুলো সরবরাহের জন্য ফোন করেন। এ সময় স্টিফেন তাকে উত্তরায় যেতে নিষেধ করলে তিনি কথিত ‘এ টু জেড’ কোম্পানির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পান। পরে তিনি উত্তরার ওই হোটেলে গিয়েও স্টিফেনকে পাননি। এমনকি তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ পান। তিনি বুঝতে পারেন এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সকলেই একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের সদস্য। এ ঘটনায় বদরুল হুদা রমনা থানায় একটি প্রতারণার মামলা করেন। গুরুত্ব বিবেচনায় মামলাটি পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এ হস্তান্তর করা হয়। পিবিআই হেডকোয়ার্টার মামলাটি তাদের বিশেষায়িত টিম এসআইঅ্যান্ডও (অর্গানাইজড্ ক্রাইম)কে দায়িত্ব দেয়। এ টিমের এসআই বদরুল আলম মামলাটি তদন্ত করেন। তদন্তে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসে। গ্রেপ্তার করা হয় ফাতেমা ও তার স্বামী সামছুদ্দিনকে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন