ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাভুক্ত সড়কগুলো সবুজায়নের পাশাপাশি সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলতে ২০১৬ সালের জুনে ১২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর দ্বীপে বাগান বিলাস ফুলগাছ রোপণ করার কথা। বছরমেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ দেড় বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও শেষ হয়নি। যতটুকু হয়েছে, সে টুকুর অবস্থাও করুণ। অনেক স্থানে ফুল ফোটা তো দূরের কথা, গাছই মরে গেছে। আবার কোথাও এ পর্যন্ত রোপণই করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রকল্পের অর্থ নয়-ছয় করার। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কয়েকবার কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েই ঢাকা সিটি করপোরেশনের কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের দায় সারার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে বাগানবিলাস রোপণের প্রকল্প ব্যর্থ ও বিলাসী এক প্রকল্পের নজির।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকল্প শুরুর আগে বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছিল বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে। এর পর প্রায় আট কিলোমিটার রাস্তায় বাগান বিলাস ফুলগাছ রোপণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সড়কগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ বঙ্গবাজার থেকে শেরাটন হোটেল, মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ মোড়, গোলাপশাহ মাজার থেকে কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড়, রমনা থানার সামনে থেকে সবজি বাগান এলাকা এবং মতিঝিলের বলাকা চত্বর এলাকা।
প্রকল্পের আওতায় সড়কজুড়ে ফুলগাছ লাগানোর পাশাপাশি এসব সুরক্ষায় লোহার গ্রিল ও মিডিয়ান দেওয়ারও কথা ছিল। তবে সরেজমিন গিয়ে দেখা বেশিরভাগ রাস্তায় বাগানবিলাস ফুলগাছই লাগানো হয়নি।
বঙ্গবাজার থেকে শিক্ষা ভবন পর্যন্ত রাস্তায় দেখা গেছে অনেক স্থানে ফুলগাছ মরে গেছে। কোথাও কোথাও গাছগুলো উপড়ে পড়ে আছে। অনেক স্থানে শুকিয়ে মরার পথে এসব গাছ। একই চিত্র দেখা গেছে কাকরাইল মসজিদের সামনের রাস্তায়। বড় একটা অংশজুড়েই মরে গেছে গাছ। আর গোলাপশাহ মাজার থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত বাগানবিলাস গাছ চোখে পড়ছে না।
নগর ভবনের এক কর্মকর্তা জানান, কোনোরকমে গাছগুলো লাগানো হয়েছে। মাটি ও সারের ব্যবহার করা হয়নি। এমনকি গাছ লাগানোর পর আর এসব গাছের খবরও নেওয়া হয়নি। ফলে অধিকংশ গাছই মরে গেছে। অন্যগুলো শুকিয়ে মৃতপ্রায়। জানা গেছে, স্বল্পমূল্যে নিম্নমানের গাছ সরবরাহ আর যথাযথ পরিচর্যার অভাবে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।
নগর ভবন সূত্র জানায়, এ প্রকল্প সফল করতে বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালানো হয়। কনসাল্টেন্সি ফার্মও নিয়োগ করা হয়। এসব খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হলেও তখন বলা হয়েছিল এসব গাছ লাগালে ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে রাজধানীর রাজপথ। কিন্তু প্রকল্প শুরু হওয়ার দেড় বছর পার হয়ে গেলেও কোনো গাছেই ফুল ফোটেনি।
ফুল না ফোটার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ভূঁইয়া অ্যান্ড কোং-এর স্বত্বাধিকারী নুরু ভূঁইয়াও। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, গাছে ফুল ফোটে না এটা সত্যি। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। বিশেষজ্ঞদের এনে বিভিন্নভাবে টেস্ট করানো হয়েছে। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। তবে আমরা আশাবাদী ফুল ফুটবে। ফুল না ফোটায় প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ করা হয়নি। এসব গাছে ফুল ফুটলেই সব কাজ শেষ করব। তিনি বলেন, ফুল না ফোটার অন্যতম কারণ গাড়ির ধোঁয়া। এ ছাড়া ধুলা-ময়লার আস্তরণ তো রয়েছেই। এখনো ফুল না ফোটায় আমরা সব কাজ শেষ করিনি। আরও কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখছি ফুল ফোটে কিনা। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা নিয়ে শুরুর আগে নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তখন তো সব ঠিক ছিল। বিষেজ্ঞরা সবাই প্রকল্পের পক্ষেই মত দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন আর ফুল ফুটছে না।
প্রকল্পের ব্যর্থতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ডিএসসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অফিশিয়ালি নোটিশ করেছি। আশা করছি ফুল ফুটবে। এখনো আমরা প্রকল্পের পুরো টাকা পরিশোধ করিনি। আড়াই কোটি টাকার মতো বিল দেওয়া হয়েছে। কাজ সমাপ্তির পরেই বাকি টাকা পরিশোধ করব।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল আমাদের সময়কে বলেন, প্রায় দিনই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমরা বসছি। ফুল না ফোটার বিষয়ে তাদের নোটিশ করা হয়েছে। কিন্তু সফলতা মিলছে না। তবে কাজ চলমান।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন