র্জিনা আক্তার (২৭)। বাড়ি উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থানায়। নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা তিনি। আর মাস খানেক পরই অনাগত সন্তান পৃথিবীর আলো দেখবে। কিন্তু আগুন পোহাতে গিয়ে ৫০ শতাংশ দগ্ধ শরীর নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের বি-১৪ নং বেডে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি। অসহায় কৃষক স্বামী তাকে ও অনাগত সন্তানকে বাঁচাতে কতই না আকুতি করছেন। মর্জিনার শয্যা পাশে আছেন তার নিকট আত্মীয় খাদিজা বেগম।
খাদিজা বেগম পরিবর্তন ডটকমকে জানান, গত শুক্রবার সকালে প্রচণ্ড শীত সহ্য করতে না পেরে খড়-খুটা জ্বালিয়ে ঠাণ্ডা নিবারণ করতে চেয়েছিলেন মর্জিনা। কিন্তু তার অজান্তেই পরনের কাপড়ে আগুন লেগে যায়। দ্রুত তার শরীরের অনেকাংশ ঝলসে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে ভাদুরগাঁও হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত রংপুর মেডিকল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এখানে আনার পর ডাক্তার চেষ্টা করছেন তাকে ও তার পেটের শিশুটিকে কিভাবে রক্ষা করা যায়।
তিনি আরো জানান, মেয়েটি খুবই অসহায়। আগে আরেক জায়গায় বিয়ে হয়েছিল। ছাড়াছাড়ির পর দেবীগঞ্জ থানার কৃষক মোস্তার সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসার ভালই চলছিল। তাদের কিছু দিন পরই নতুন সন্তান আসবে পৃথিবীতে। পরিবারের সবাই সেই খুশিতে আত্মহারা ছিল। কিন্তু খুশির মাঝেই সকল স্বপ্ন ভেঙে শেষ হয়ে গেল। এখন জীবন বাঁচানোই দায়।
মর্জিনার স্বামী মোস্তফা পরিবর্তন ডটকমকে জানান, গত শুক্রবার সকালে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ছিল। সকাল ৭টায় মর্জিনা ঘুম থেকে উঠে খড়ে আগুন জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে যায়। এক সময় তার অজান্তেই কাপড়ে আগুন লেগে পুরো শরীরে ছড়িয়ে যায়। তার চিৎকারে বাড়ির অনেকেই এসে গায়ের আগুন নিভাতে পারলেও তাৎক্ষণিকভাবে তার শরীরের পা থেকে বুক পর্যন্ত পুড়ে যায়। পরে পঞ্চগড় সদর হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসেন। ডাক্তাররা তার শারীরিক ব্যাপারে তেমন কিছু বলছেন না। শুধু বলছেন, চিকিৎসা চলছে। পেটের সন্তান ও রোগী দুইজনকে কিভাবে রক্ষা করা যায় সে চেষ্টাই করছেন তারা। অনাগত সন্তানের মুখ আর দেখতে পারবেন কি না সেই চিন্তা করে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন মোস্তফা।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক নূর আলম সিদ্দিকী পরিবর্তন ডটকমকে জানান, মর্জিনার শরীরের ৫০ শতাংশ পুড়ে গেছে। শরীরের নিচের অংশে বেশি ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। গলার অংশটুকু ভাল আছে। এই ধরনের রোগীকে বাঁচানো খুবই কঠিন কাজ। তাছাড়া তার পেটে যে সন্তান রয়েছে সোমবার থেকে কোনো নড়াচড়া করছে না। এই সময়টা অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল মনে হচ্ছে। বাচ্চার নড়াচড়া না করাতে অনেকটা রিস্কের মধ্যে আছে রোগী। তাই চিকিৎসকরা চেষ্টা করছেন তাকে সেভ করার। চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত ৫৫ জন নারী, শিশু ও বৃদ্ধ চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের বেশির ভাগই শীত থেকে রক্ষা পেতে আগুন পোহাতে গিয়ে আহত হয়েছে। নারী রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন