রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানিতে জটিলতা তৈরিসহ নানা কারণে বাংলাদেশী পণ্যের বড় বাজার হতে পারে নেপাল। বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, আগামী দিনগুলোতে হিমালয়ান রাজ্য নেপালের বাজার খুব শীঘ্রই আরো সম্প্রসারিত হবে। তাই সুযোগ বিবেচনায় ব্যবসায়ীদের দেশটিতে পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ নেয়া উচিৎ।
পাশাপাশি তারা এটাও বলছেন, এ জন্য বাংলাদেশকে কিছু সমস্যার সমাধান ও ব্র্যান্ডিংয়ের উদ্যোগ নিতে হবে। ইতিমধ্যে ওষুধ, খাদ্য, ইলেক্ট্রনিক ও অটোমোবাইলসহ মোট ৭৮ ধরনের পণ্য বাংলাদেশ থেকে নেপালে রপ্তানি হচ্ছে। এর বাইরেও প্রি ফেব্রিকেট নির্মাণ সামগ্রি, হোম টেক্সটাইল ও ফার্নিচারসহ আরও সাত ধরনের পণ্যের চাহিদা লক্ষ্য করা গেছে দেশটির বাজারে। এসব পণ্য নেপালের বাজারে বেশ ভাল চলবে বলে জানা যায়।
সূত্র মতে, ইতিমধ্যে নেপালে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে চাহিদা অনুসারে পণ্য আমদানির জন্য উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন। এর অংশ হিসেবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নেপালে একটি ট্রেড ফেয়ারের আয়োজন করা হচ্ছে। ট্রেড ফেয়ারে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য প্রদর্শন করবেন এবং বি টু বি রপ্তানি আলোচনা করবেন। নেপালের বাজারগুলোতে ঘুরে ও দেশটির সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয় জানা যায়।
ভৌগলিক ও রাজনৈতিকভাবে দেশটি পণ্য আমদানিতে ভারত ও চীনের ওপর নির্ভরশীল। আমদানির ৭০ শতাংশই আসে ভারত থেকে। বাকিটা চীন ও অন্যান্য দেশ থেকে আসে। ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য কলকাতা হয়ে নেপালে প্রবেশ করে। কিন্তু সম্প্রতি নানা করণে কলকাতা হয়ে দেশটিতে পণ্য আমদানিতে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ফলে আমদানি নির্ভর নেপাল এখন বিকল্প বাজার খুঁজছে। এ জন্য কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তিও করেছে দেশটি। এর মধ্যে চীন অন্যতম। তবে তারা বাংলাদেশের বিষয়টিও মাথায় রেখেছে বলে সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল।
নেপালের জনসংখ্যা ও মাথা পিছু আয় কম হলেও পণ্যের বাজার খুব ছোট নয়। কারণ এদিকে চাহিদার প্রায় শতভাগ পণ্যই তারা আমদানি করে। অর্থাৎ দেশটির প্রায় চার কোটি মানুষের চাহিদার পুরোটাই রপ্তানিকারক দেশগুলোর জন্য সম্ভাবনা। আমদানি পণ্যের ৭০ শতাংশ বা ছয় বিলিয়নের উপরে ভারত থেকে আসে বলে জানা গেছে। বাকি পণ্য আসে চীনসহ অন্যান্য দেশ থেকে। এছাড়া দেশটিতে নিজের জনসংখ্যা ছাড়াও বছরের প্রায় ১২ মাসই ব্যাপকহারে পর্যটক অবস্থান করে। যা দেশটির ভোগে অংশ নেয়।
অপর দিকে নেপালের মানুষের মাথাপিছু আয় বাংলাদেশর অর্ধেকের কিছু বেশি (৮৩৭ ডলার) হলেও এর পিছনে গত ১০ বছর ধরে চলে আসা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকেই দায়ী করা হয়। এখন এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়ায় মাথাপিছু আয়ও খুব দ্রুত বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়া দেশটিতে বিভিন্ন দেশের পর্যটক এসে জড়ো হওয়ায় বাংলাদেশী পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ের বড় সুযোগ হতে পারে। পণ্যের মান ও দাম ভাল পেলে যেসব দেশের মানুষ নেপালে আসছে তারাও সন্তষ্ট হবে। যার সুফল ওই পর্যটকটির দেশের বাজারেও পাওয়া যাবে।
এই বিষয়ে দেশটির সাবেক শিল্পমন্ত্রী এবং নবনির্বাচিত এমপি মহেশ বাসনেতের বলেন, ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ভারতের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। আমাদের সব পণ্য আনতে হতো কলকাতা হয়ে। কিন্তু গত বছর কলকাতা হয়ে পণ্য আনতে সমস্যা তৈরি হয়। এরপর আমরা অন্য পথ খুঁজতে থাকি। চীনের সঙ্গেও আমরা এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। আটলান্টিক মহাসাগর দিয়েও পণ্য আনা হচ্ছে। আমাদের এটা নলেজে আছে, বাংলাদেশও হতে পারে আমাদের আরেক বিকল্প। বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা হয়ে আমাদের এখানে পণ্য আসছে। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স। ৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে প্রতি বছর। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য হয় ৬ বিলিয়ন ডলারের। চীন থেকে আমাদের দেশে ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য আসে। আর দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য আসে ভারত থেকে। পাশাপাশি অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস ও খাদ্যপণ্য এখানে আসছে। আরও বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমরা ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকেও আমদানি করতে পারি।
উল্লেখ্য ইতিমধ্যেই নেপালে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের নানা উদ্যোগে নেপালে ৭৮ ধরনের পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে।
ব্রেকিংনিউজ/
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন