বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক ব্যবসায়ী আফজাল ও রিয়াল বাহিনী প্রধান রিয়াল। রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা থানার মাদক ব্যবসায়ী গডফাদার হিসেবে পরিচিত আফজাল ও রিয়ালের রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
এলাকার বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব বাহিনী। এ দুজন মাদক ব্যবসায়ী গড ফাদারের মধ্যে আফজালের নামে চারঘাট,বাঘা, লালপুর, সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু পশ্চিম থানাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় রয়েছে ১৯ টি মাদকের মামলা। কিন্তু দিব্যি এলাকায় অবস্থান নিয়ে গোপন আস্তানায় বসে মাদকের নিয়ন্ত্রণ করছেন আফজাল।
অপর দিকে রিয়াল বাহিনী প্রধান রিয়ালের বিরুদ্ধে চারঘাট ও বাঘায় রয়েছে একাধিক মাদক মামলা। তারা দুজনেই এলাকায় অবস্থান করলেও পুলিশ বলছে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চারঘাট উপজেলার রাওথা এলাকার আশরাফ আলীর ছেলে মোস্ট ওয়ানটেড মাদক ব্যবসায়ী গডফাদার আফজাল হোসেন এবং বাঘা উপজেলার মহদীপুর গ্রামের আকরাম আলীর ছেলে রিয়াল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে চারঘাট,বাঘা, লালপুর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন থানায় রয়েছে ১৯ টি মাদকের মামলা। এসব মামলার বেশীর মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও আফজালকে আটক করে না পুলিশ। অভিযোগ রয়েছে পুলিশের সঙ্গে আফজালের গভীর সম্পর্ক থাকায় তাকে আটক করা তো দুরের কথা তার মাদকের চালানসহ তার বাহিনীর কোন সদস্য আটক হলেও মামলা দেয়া হয় না আফজালের বিরুদ্ধে।
যার প্রমান হিসেবে তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, গত ২৯ ডিসেম্বর-২০১৭ তারিখ রাওথা এলাকার মাদক সম্রাট আফজাল হোসেনের নিকট থেকে ৪০০ পিস ইয়াবা নিয়ে সিরাজগঞ্জ যাচ্ছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের খেজমত আলীর ছেলে বাহাদুর রহমান। এসময় রাওথা এলাকা থেকে ৪০০ পিচ ইয়াবাসহ বাহাদুরকে আটক করে চারঘাট থানা পুলিশ।
আটক বাহাদুর রহমান আফজালের মাল বললে পুলিশ আফজালের বিরুদ্ধে মামলা দেয়নি। অভিযোগ উঠেছে আফজাল হোসেনের নিকট থেকে পুলিশ মোটা অংকের উৎকচ নিয়ে তাকে মামলায় জড়ায়নি। এমন ঘটনা অহরহ ঘটলেও পুলিশের ভুমিকা বরাবরই রহস্যময়ী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাওথা এলাকার একাধিক ব্যাক্তি জানান, আফজালের বিরুদ্ধে শুধু মাদকের মামলায় নেই, তার বিরুদ্ধে রয়েছে অস্ত্র মামলাও। তার বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধার করলেও আফজাল প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। আফজালের সঙ্গে চারঘাট মডেল থানার একাধিক অফিসারের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। তাই পুলিশ আসলেও আফজালকে আটক না করে ফিরে যায় টাকার থলে নিয়ে।
একটি নির্ভযোগ্য সুত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, আফজালের বিরুদ্ধে ১৯ টি মামলা চলমান থাকলেও বর্তমানে থানায় রয়েছে ৫ টি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা। এর মধ্যে ২ টি মামলায় তার সাজা হয়ে গেছে। কিন্তু তার পরেও তাকে আটক না করায় খোদ পুলিশের মধ্যেই রয়েছে চাপা ক্ষোভ।
অপর দিকে বাঘার আরেক ডন রিয়াল। তার বিরুদ্ধেও চারঘাট-বাঘায় একাধিক মামলা চলমান থাকলেও পুলিশ তাকে আটক করছে না। অভিযোগ রয়েছে রিয়াল প্রকাশ্যে মটর সাইকেল নিয়ে পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে দাপিয়ে বেড়ালেও পুলিশ থাকে নিরব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০ নভেম্বর-২০১৭ সকালে ফেনসিডিলসহ রিয়াল বাহিনীর সহযোগী বাঘা উপজেলার মহদীপুর গ্রামের জোবান আলীর জালাল উদ্দিন (৩০) ও একই এলাকার ওসমান গনির ছেলে জিনারুলকে (২৮) আটক করে চারঘাট থানা পুলিশ। এ মামলায় রিয়ালের বিরুদ্ধে মামলা দেয় পুলিশ।
এ মামলার ২৩ দিন পরে ৩০০ বোতল ফেনসিডিলসহ রিয়ালের সহযোগী রাওথা এলাকার নছির উদ্দিনের ছেলে মুকুলকে আটক করে। এ ঘটনায়ও মুকল রিয়ালের মাল বলে পুলিশকে জানায়।
পুলিশ ৩০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে রিয়ালসহ মুকুলের বিরুদ্ধে মামলা করে। এ সব ঘটনায় রিয়ালের বিরুদ্ধে মামলা হলেও পুলিশ রিয়ালকে আটক না করে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করে রিয়ালকে বাচানোর পায়তারা করছেন বলে একাধিক সুত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে আফজাল হোসেন ও রিয়ালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
রাজশাহী সদর সার্কেল এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত চারঘাট সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে পুলিশের কোন সদস্যের সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী গডফাদার আফজাল ও রিয়ালকে আটক করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন