আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজে হাত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড ও উপজেলা এলাকার সীমানা অক্ষুন্ন রেখে এবার অর্ধশতাধিক আসনের সীমানায় রদবদল আনতে চাচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। বাকি আসনগুলোর সীমানা অপরিবর্তিত থাকবে। এরকম খসড়া তৈরি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বধীন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপে সীমানা নির্ধারণে বিদ্যামান আইন পরিবর্তন করে নতুন আইনে সীমানা বিন্যাসের ঘোষণা দিয়েছিল। তবে সময় স্বল্পতায় সেই ঘোষণা থেকে সরে এসে বিদ্যমান ‘ডিলিমিটেশন অর্ডিন্যান্স-১৯৭৬’ এর আওতায় সীমানা বিন্যাস করতে যাচ্ছে ইসি।
এতে একাদশ সংসদে জেলার আসনসংখ্যায় কোনো পরিবর্তন আসবে না। শুধুমাত্র জেলার ভেতরের আসনগুলোর আয়তন বাড়বে বা কমবে। শনিবার এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
একই সঙ্গে সীমানা পুনর্নির্ধারণের তালিকা তৈরির জন্য দু’টি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিয়ে চলতি সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কোন কোন আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসবে ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পরই কমিশন চূড়ান্ত করবে।
সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন সংক্রান্ত কমিটির প্রধান নির্বাচন কশিমনার মো. রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা সার্বিক দিক বিবেচনা করে সীমানা নির্ধারণের কাজ এগিয়ে এনেছি। নতুন ছিটমহল যুক্ত হওয়া ও প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের কারণে কিছু আসনের পরিবর্তন করতে হচ্ছে। তবে এর সংখ্যা এখনই বলা যাচ্ছে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কুমিল্লার একটি আসনের সীমানা নিয়ে হাইকোর্টের রায় রয়েছে। কমিশন ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। আপিলের রায় পাওয়ার পর তিনশ’ সংসদীয় আসনের সীমানা চূড়ান্ত করতে পারব।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, কমিশন সভায় সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া অনুমোদন করলে তা খসড়া তালিকা হিসেবে গেজেট আকারে প্রকাশ করবে ইসি। ওই তালিকার উপর দাবি-আপত্তি জানানোর সুযোগ দেয়া হবে। ওই সব দাবি-আপত্তির উপর শুনানির আয়োজন করবে কমিশন। শুনানির পরই তিনশ’ আসনের চূড়ান্ত সীমানা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। আগামী মার্চ বা এপ্রিলের মধ্যে এসব কার্যক্রম শেষ করতে চায় কমিশন।
বিদ্যমান সীমানা পর্যলোচনা করে দেখা গেছে উপজেলা অখণ্ডতা রাখা হলে দেশের ৬৩টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসবে। কিন্তু সংসদীয় আসনের অখণ্ডতা ধরে রাখা ও ভোটার সংখ্যার ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে কমবেশি ১০টি আসনের উপজেলার অখণ্ডতা রক্ষা করা সম্ভব হবে না। সেগুলোর মধ্যে যশোর-৩ ও ৪, নড়াইল-১ ও ২ এবং চুয়াডাঙ্গা-১ ও ২ সহ কয়েকটি আসন রয়েছে।
কমিটি এসব আসনের ভৌগলিক অখণ্ডতা, জনসংখ্যা ও অন্যান্য দিক বিবেচনা করে এতে পরিবর্তন না করার বিষয়ে একমত হয়েছে। আর সিটি করপোশনের ওয়ার্ড অখণ্ড রাখতে গিয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার কয়েকটি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। নতুন ছিটমহল যুক্ত হওয়ায় লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের কয়েকটি আসনের সীমানায়ও পরিবর্তন আসবে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, উপজেলা অখণ্ড রাখার কারণে অর্ধশত সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন আসতে পারে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঠাকুরগাঁও-২ ও ৩, নীলফামারী ৩ ও ৪, রংপুর- ৩ ও ৪, কুড়িগ্রাম- ৩ ও ৪, সিরাজগঞ্জ- ১ ও ২, পাবনা-১ ও ২, চুয়াডাঙ্গা-১ ও ২, ঝিনাইদহ-২ ও ৪, মাগুরা-১ ও ২, এবং খুলনা-৩ ও ৫। একই অবস্থা সাতক্ষীরা- ৩ ও ৪, জামালপুর- ৪ ও ৫, মানিকগঞ্জ-২ ও ৩, ঢাকা-২, ৩, ১৪ ও ১৯, গাজীপুর-১, ৩ ও ৫, নরসিংদী-১ ও ২, ফরিদপুর-২ ও ৪, গোপালগঞ্জ-১ ও ২, মাদারীপুর-২ ও ৩, সিলেট-২ ও ৩, মৌলভীবাজার- ২ ও ৪, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ ও ৬, নোয়াখালী-১, ২, ৪ ও ৫, এবং চট্টগ্রাম-৭, ৮, ১৪ ও ১৫ আসন।
সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির একাধিক সদস্য জানান, কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সঙ্গে নয়টি ইউনিয়ন পরিষদ যুক্ত হবে। এসব ইউনিয়ন পরিষদ লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে বেরিয়ে যাবে। এ জেলার জন্য এটি বড় পরিবর্তন।
এবার সাভার উপজেলার ইউনিয়নগুলো একই আসনের আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর ফলে ঢাকা-২, ৩, ১৪ ও ১৯ আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা আরও জানান, কুমিল্লার দুটি থেকে চারটি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসতে পারে। ইতোমধ্যে কুমিল্লার-১০ সংসদীয় আসনের বর্তমান সীমানা অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে কমিটি। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছে কমিশন। আপিল বিভাগের রায়ের পর কতটি আসনের সীমানা পরিবর্তন আসবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
তারা আরও জানান, ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকাইল উপজেলা খণ্ডিত অবস্থায় দুটি আসনের মধ্যে ছিল। নতুন খসড়ায় একত্রিত করে একটি আসনে আনা হবে। কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর ও চিলমারী উপজেলাও বর্তমানে খণ্ডিত রয়েছে। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী খণ্ডিত অবস্থায় দুটি আসনেও থাকলেও এখন একত্রিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, এবার সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণে একটি গাইডলাই অনুসরণ করছে সীমানা নির্ধারণ কমিটি। গাইডলাইনের রয়েছে- উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডের যথাসম্ভব অখণ্ডতা বজায় রাখা হবে। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌর এলাকার ওয়ার্ড একাধিক সংসদীয় আসনে বিভাজন না করা। যেসকল নতুন প্রশাসনিক এলাকা সৃষ্টি হয়েছে বা সম্প্রসারণ হয়েছে বা বিলুপ্ত হয়েছে তা স্ব স্ব আসনের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা।
এছাড়া ২০১৩ সালের সীমানা নির্ধারণের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যেসব ছিটমহল বিনিময় হয়েছে তা অন্তর্ভূক্ত করা। ভৌগলিক বৈশিষ্ট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা যথাযথ বিবেচনা করা।
সংবিধান অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন