রাজশাহীর তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে একজনকে পিস্তলের বাঁট দিয়ে আঘাত করার অভিযোগ উঠেছে। যাকে তিনি আহত করেছেন তিনিও মেয়রের মতোই আওয়ামী লীগেরই কর্মী। তাকে পিস্তলের বাট দিয়ে আহত করার সময় সরকারদলীয় আরও এক নেতাকে লাঞ্ছনা করার অভিযোগ উঠেছে মেয়রের সাথে আসা লোকদের বিরুদ্ধে।
পিস্তলের বাঁটের আঘাতে আহত আমান উল্লাহ ওরফে আমানকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার শিকার মাহবুবুল হক শাহীকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়নি। শাহী বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
ভুক্তভোগিরা জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে তাহেরপুর পৌর সদরের পেঁয়াজহাট এলাকার এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় তাহিরপুরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ এবং অসন্তোষ বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, রাত ১০টার দিকে পেঁয়াজহাট দিয়ে যাচ্ছিলেন মেয়র কালামসহ তার বাহিনীর ২৫ থেকে ৩০ জন সদস্য। এ সময় ওষুধের দোকানে বসেছিলেন আমান এবং শাহীসহ কয়েকজন নেতাকর্মী। আমান এবং শাহীকে দেখার পর পরই মেয়র কালাম উত্তেজিত হয়ে তাদের সামনে যান। এ সময় তিনি তাদেরকে গালি দেন।
এক পর্যায়ে মেয়র কালাম তার লাইসেন্স করা পিস্তুল বের করে এর বাঁট দিয়ে আমানের মাথার পেছনে আঘাত করেন। এছাড়া মেয়রের সঙ্গে থাকা আসাদুল কোরবান, সোহেল, এরশাদ এবং অন্য সদস্যরা আওয়ামী লীগ নেতা শাহীকে মারপিট করেন। পরে স্থানীয় নেতাকর্মীরা আমানকে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালের আট নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করে।
আমানের মা রিজিয়া খাতুন বলেন, ‘আমি আমানের সাথেই হাসপাতালে এসেছি। সে রাত থেকে দুপুর (শনিবার) পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ বার বমি করেছে। কিছুক্ষণ পর পর তার জ্ঞান থাকছে না। ডাক্তারের পরামর্শে তার সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। আমান আমার একমাত্র সন্তান। তার ওপর এ হামলার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
আমানের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন বলে জানিয়েছেন আট নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক রেজাউল হক। তিনি বলেন, ‘বমি করার লক্ষণটি ভালো না। পিস্তুলের বাঁটে আমানের মাথা থেঁতলে গেছে। এর ফলে রক্ত জমাট বেধেছে। এছাড়া তার ব্রেনে আঘাত আছে। এ কারণে মাঝে মাঝে জ্ঞান থাকছে না। অনেক সময় ভুল বকছে। সিটিস্ক্যান রিপোর্ট হাতে পাবার পর তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।’
গত ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে তাহেরপুর পৌর সদরে আলোচনার সভার আয়োজন করে বাগমারা উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগ। এ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। আর স্থানীয় সংসদ সদস্য এনামুল হক ছিলেন প্রধান বক্তা।
অনুষ্ঠানে জেলা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হলেও মেয়র কালামকে ডাকা হয়নি। এ ঘটনার পর থেকেই কালাম সমর্থকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল।
পিস্তুলের বাঁট দিয়ে মাথায় আঘাত এবং দলীয় নেতাকে লাঞ্ছিতের ব্যাপারে জানতে চাইলে মেয়র আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি ওই সময় বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। এ সময় একটি ওষুধের দোকানের পাশে কয়েকজন সর্বহারা ক্যাডারকে দেখে আমার সমর্থকরা এগিয়ে যায়। এর মধ্যে কয়েকজন পালিয়ে যায়। এ সময় ধ্বস্তাধস্তির কারণে একজন পড়ে গিয়ে সামান্য আহত হয়েছে। পিস্তুলের বাঁট দিয়ে আঘাত করার ঘটনা ঠিক না। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
মেয়র আজাদের বিরুদ্ধে গত ইউপি নির্বাচনে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি, অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে এক যুবলীগ নেতার সাথে জোর করে বিয়ে দেয়া, বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেনকে প্রাণনাশের হুমকি, দলীয় কর্মীদের মারধরসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি অবৈধভাবে সম্পদের অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মেয়র কালামের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন