রাজধানীর চকবাজারে এক ডাক্তার দম্পতির বিরুদ্ধে লোনা (১৪) নামের এক গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মেয়েটি শারিরীকভাবে এখনো পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেনি। লোনা এখন তার মায়ের সঙ্গে আছে।
নারায়ণগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. আবু মোহাম্মদ সায়েম ও পুরান ঢাকার চিকিৎসক ডা ইয়াসমিন শাহনাজ দম্পত্তির পরিবারে লোনা গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে ধরে কাজ করছিল। গত শুক্রবার এই ডাক্তার দম্পতির সন্তানের প্রস্রাব পরিষ্কার না করার অপরাধে লোনাকে ব্যাপক মারধার করে বলে অভিযোগ করেছেন মেয়েটির মা জায়েদা।
তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, মারধরের পর লোনাকে বাথরুমে অটকে রাখা হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার ডাক্তার সায়েম ও তার স্ত্রী মিলে অামার মেয়েকে বেধরক মেরেছে। মেরে বাথরুমে অাটকে রেখেছিল। পরে দুজন লোক অামার মেয়েকে উদ্ধার করেছে।
জায়েদা অারো বলেন, এরা দুজনই সরকারি ডাক্তার। শিক্ষিত মানুষ হয়ে অামার মেয়েকে এমন নির্যানত করলো কিভাবে। অামি এর বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে ড. সায়েমের কাছে জানতে চাইলে তিনি পূর্বপশ্চিমকে বলেন, আমি শুক্রবার লোনাকে মেরেছি এটা সত্যি। এরজন্য আমি অনুতপ্ত। মেয়েটির চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছি। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে ডা. সায়েম বলেন শুক্রবার দুপুরে আমি লোনাকে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেই দেখি টিভি দেখছে। ওই সময় আমার ছোট সন্তান ঘুমাচ্ছিল। টিভি দেখতে দেখতে লোনা ঘরের মধ্যেই প্রসাব পায়খানা করেছিল। আমাকে ঘরের মধ্যে ঢুকতে দেখেই তরিঘরি করে সে তা পরিষ্কার করার কাজে নেমে পরে। তখন আমি লোনার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠি। তখনো তাকে মারা হয়নি। এর দুই দিন আগে থেকেই লোনা খুব বিরক্ত করছিল যে সে আর ঢাকা থাকবে না। টিভি দেখতে বাধা দেয়ায় রাগ করার কারণে বুধবার না খেয়ে ছিল। তখন তাকে ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়ে খাইয়েছি।
শুক্রবার তাকে বাথরুমে আটকে রাখা হয়েছিল কেন এমন প্রশ্নের উত্তেরে ডা. সায়েম বলেন, আমি এবং আমার স্ত্রী অতিষ্ঠ হয়ে তাকে চলে যেতে চলি এবং তার বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাদের সঙ্গে কথা বলেই লোনার আত্নীয় ওয়াহিদকে ডেকে পাঠানো হয় যেন তিনি এসে নিয়ে যায়। কিন্তু বাথরুমে যাওয়ার পর ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকে লোনা। পরে ওয়াহিদ দরজা ভেঙে লোনাকে বের করে নিয়ে আসে। এরপর লোনাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
সায়দাবাদ বাসস্ট্যান্ডে ওয়াহিদ এবং লোনার সঙ্গে দেখা হয় মোহাম্মদ মনিরের সঙ্গে। নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অসুস্থ লোনাকে নিয়ে কে কেন কিভাবে মেরেছে এসব নিয়ে ওয়াহিদের কাছে জানতে চান। এরপর ঘটনার বিবরণ শুনে ডাক্তার সায়েমের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন এবং আকার ইঙ্গিতে বিষয়টি তার মাধ্যমে সমঝোতা করার প্রস্তাব দেন। তাহলে বিষয়টি নিয়ে থানা পুলিশ হবে না বলেও হুমকি দেন মনির।
শনিবার বিষয়টি নিয়ে মোহাম্মদ মনিরের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তার কাছে কোন পত্রিকায় কাজ করেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সাংবাদিকতা করি না। আমার স্ত্রী সালমা লিজা মাসিক নাট্যজগতের সম্পাদক। এ কথা বলেই তিনি ফোনটি লিজাকে ধরিয়ে দেন। লিজা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং বলেন যে, আমরা মেয়েটার ওপর ডাক্তার ও তার স্ত্রী নির্যাতন করেছে। এর বিচার করতে পুলিশের কাছে যাচ্ছি। সাক্ষী হিসাবে লোনাকে বাথরুম থেকে বের করে আনা ওয়াহিদকে সাথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মনিরের ফোন থেকে লিজার মাধ্যমে প্রতক্ষদর্শী ওয়াহিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি মেয়েটিকে কিভাবে উদ্ধার করেছিলেন, বাথরুমের দরজা কি ভেতর থেকে না বাইরে থেকে বন্ধ ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দরজা ভিতর থেকে আটক ছিল। আমি এবং আমার বন্ধু মিলে দরজা ভেঙে লোনাকে বের করে নিয়ে আসি। তারপর সিলেটের বাস ধরার জন্য সায়দাবাদে গেলে মনিরের সঙ্গে দেখা হয়। তার পরামর্শেই এখন আমরা লোনাকে নিয়ে হাসপাতলে ও থানায় যাচ্ছি।
এদিকে, চক বাজার থানা পুলিশ জানিয়েছে আমাদের কাছে এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। করলে তা খতিয়ে দেখা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন