ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে নিয়ে রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে ব্রিফ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অাবুল হাসান মাহমুদ অালী। রোববার বিকেলে ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দুই ভাগে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করছেন তিনি। এর আগেও বেশ কয়েকবার রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফিং করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ব্রিফ শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অাবুল হাসান মাহমুদ অালী সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গারা কবে ফিরে যাচ্ছেন সেটার নির্দিষ্ট তারিখ বলা যাবে না। প্রত্যাবাসন কাজ শুরু হয়েছে। কাজ চলছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের যে কয়েকটি চুক্তি সই হওয়ার দরকার ছিল সেগুলো সব হয়ে গেছে। এখন অার কোনো ঝামেলা নেই। রোহিঙ্গাদের পাঠানো হবে পরিবারভিত্তিক। সেভাবেই ফরম বিতরণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের থাকার উপযোগী করে তৈরি করতে বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। গ্রামগুলোকে তাদের থাকার উপযোগী করা হচ্ছে।
এদিকে, রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইটস অব মিয়ানমার-এ খবরে বলা হয়েছে, অাগামী মঙ্গলবার থেকে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া শুরু করবে। আগামী দুই বছর পর্যন্ত তা চলবে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার চুক্তির আলোকে এই প্রত্যাবাসন হবে।
তবে এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অাবুল হাসান মাহমুদ অালী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে, রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ নিশ্চিত করতে রাখাইন রাজ্যে টেকসই উন্নয়নের কথা বলছেন সব দেশ।
এ বিষয়ে ব্রিফ শেষে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শিংলা সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের পুর্নবাসন করতে হলে রাখাইন রাজ্যে টেকসই করা প্রয়োজন। রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ নিশ্চিত করতে রাখাইন রাজ্যে টেকসই উন্নয়ন চাই ভারত। অার টেকসই উন্নয়ন হলেই রাখাইনে রোহিঙ্গাদের পুর্নবাসন স্থায়ী হবে।
তিনি বলনে, রাখাইন রাজ্যের উন্নয়নের জন্য ভারতের সাথে মিয়ানমারের একটি চুক্তি অাছে। কফি অানান কমিশনের রিপোর্টেও সেখানের জীবন যাত্রার উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। অামরা বিশ্বাস করি যতদ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। অার এই প্রক্রিয়ায় অান্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভূমিকার রাখতে হবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশ সরকার একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে। সেভাবেই রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা হবে। বাংলাদেশেরও উচিৎ মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। এটাকে অামরা স্বাগত জানায়।
তিনি বলেন, অামি কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে যেটা জানতে পেরেছি তারা ওই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অার ফিরে যেতে চাই না। তাই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে হলে রাখাইনে স্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা প্রয়োজন। অামরা সেটার ওপরই জোর দিচ্ছি।
প্রথম পর্বের ব্রিফিংয়ে ছিলেন অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মান, ইতালি, তুরস্ক, রাশিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এবং জাতিসংঘ, জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ফাও), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও রেডক্রসের প্রতিনিধিরা।
শেষ পর্বের ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মিশর, ইরান, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, মরক্কো, ওমান, ফিলিস্তিন, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ও চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সরা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন