আমার আগে আরও চার নারীর সর্বনাশ করেছে নাসির। বিয়ের নামে তাদের সঙ্গেও প্রতারণা করেছে। তাদেরকে নিয়ে বাসাভাড়া করে থেকেছে। সেসব মেয়েরা এখন নাসিরকে ছেড়ে নিজেদের অবস্থানে ফিরে গেছে। নাসির এখন আরেকটি মেয়ের পেছনে লেগেছে। তাকে বিয়ে করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাকে নিয়ে এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একসঙ্গে ইয়াবাও খায়।
রোববার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসে এসব কথা বলেন শ্যামনগর উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের মাটি শ্রমিক আবুবকর সিদ্দিকের মেয়ে মাছুরা খাতুন।
স্বামী নাসির এখন আরেকটি বিয়ের পাঁয়তারা করছে জেনে মাছুরা ছুটে আসেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে। তিনি বলেন, ‘আমি আমার স্বামীর ঘর চাই।’
মাছুরা জানান, নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাড়ে তিন বছর আগে তার বিয়ে হয়। তিনি এখন অন্তঃসত্ত্বা।
তিনি বলেন, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নাসির আমাকে ছেড়ে কোনো কিছু না বলেই চলে গেছে। এর পর আমাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। বলছে- ওকে আর নেব না।
মাছুরা জানান, বছর চারেক আগে তাদের পরিচয়। নাসির কালিগঞ্জ উপজেলার দুদলি গ্রামের মো. বাসারতুল্লাহর ছেলে। কালিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। নানা কারণে নাসির ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর থেকে নানা অনৈতিক কাজে নামেন তিনি।
এই গৃহবধূ বলেন, দু’পক্ষের অভিভাবকের অমতেই নাসিরের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এরপর নাসির তাকে সাতক্ষীরায় এনে ভাড়া করা বাসায় থাকতেন।
মাছুরা দাবি করেন, নাসিরের সঙ্গে কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সুসম্পর্ক ছিল। সে নিজেই একজন ইয়াবাসেবী। ইয়াবা ও ফেনসিডিল কেনাবেচাও করে। প্রায়ই রাতে তাদের বাসায় আসতো ফিরোজ ও আমিনুর নামের পুলিশের দুই সদস্য। সঙ্গে থাকতো ইটাগাছার সাইফুল নামের আরও এক যুবক।
মাছুরা তার দেহের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে বলেন, নাসির তাকে নির্যাতন করতো।
তিনি জানান, তার প্রথম সন্তান সাড়ে চারমাস পর গর্ভপাতের মাধ্যমে নষ্ট করায় নাসির। দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে আসার পর থেকে নাসির আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে সে আরেকটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। তাকে ঘরে নিয়ে আসতো। বোন পরিচয়ে ঘরে রাখতো। তার সঙ্গে বসে ইয়াবা খেতো। আর আমি প্রতিবাদ করলে আমাকে মারধর করতো।
মাছুরা অভিযোগ করে বলেন, গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য আমাকে কাঠ দিয়ে কোমরে আঘাত করেছে নাসির। গলায় ওড়না পেঁচিয়ে খুন করারও চেষ্টা করেছিল। কিন্তু প্রতিবেশীরা এসে তাকে রক্ষা করেন।
তিনি দাবি করেন, এভাবে আরও চার নারীর সর্বনাশ করেছে নাসির। তাদের নাম জানান মাছুরা (প্রকাশ করা হলো না)। নতুন করে যে মেয়েটির সর্বনাশ করতে যাচ্ছে নাসির তারও নাম জানান মাছুরা।
মাছুরা বলেন, আমাদের প্রথম বিয়ের স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরযুক্ত কাগজপত্র চাইতাম আমি। কিন্তু নাসির দিতে চাইতো না।
তিনি বলেন, শহরের কাটিয়ায় বাসা পাল্টালে বাড়িওয়ালা আমাদের দুজনকে পুলিশে সোপর্দ করেন। সাতক্ষীরার কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক মো. বাহারুল ইসলামের সহায়তায় গত ১ নভেম্বর শরীয়ত মোতাবেক তাদের বিয়ে পড়ান ম্যারেজ রেজিস্ট্রার মাওলানা আবদুর রাজ্জাক। বিয়ের সেই নিকাহনামা নিয়ে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছেন মাছুরা।
তিনি বলেন, এখন আমাকে রাস্তাঘাটে মারধর করার পরিকল্পনা করছে নাসির। এরই মধ্যে তিন যুবককে পাঠিয়েছিল তার কাছে। কিন্তু মাছুরা পালিয়ে রক্ষা পান।
এই অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ বলেন, এতোকিছুর পরও আমি তার ঘর ছাড়তে চাই না। আমি আইনগত সহায়তা চাই।
তিনি জানান, নাসির মাঝে মাঝে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেয়। নিজেকে সাংবাদিক দাবি করে ভয় দেখায়।
জানতে চাইলে ঢাকাস্থ ‘মানবাধিকার প্রতিদিন’ পত্রিকার সম্পাদক শহিদুল ইসলাম জানান, নাসিরকে তার অনৈতিক কাজের অভিযোগে পত্রিকা থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে কালিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাওন আহমেদ সোহাগ জানান ‘সংগঠন বিরোধী নানা অভিযোগে নাসির উদ্দিন এক বছর আগে বহিষ্কৃত হন।’
এসব বিষয়ে জানতে নাসির উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে মাছুরার বিয়ের একটা ঝামেলা আছে সত্য। তবে সে বিষয়ে পরে বলব। এক সপ্তাহ পর বাড়ি এসে বলব। এখন ঢাকায় আছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মাছুরাকে তো পরিত্যাগ করিনি।’
একাধিক বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে নাসির বলেন, ‘আমি ২০টা বিয়ে করেছি। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখুন।’
আরও চার নারীর সর্বনাশ করা এবং ইয়াবা ব্যবসাসহ অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নাসির মুখ খোলেননি। একপর্যায়ে তিনি ফোন বন্ধ করে দেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন