আদালতের রায় অনুযায়ী ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ না পেয়ে সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন ঢাকার শাহজাহানপুর রেল কলোনির পরিত্যক্ত নলকূপের পাইপে পড়ে নিহত শিশু জিহাদের পরিবার।
সোমবার জিহাদের পরিবারের পক্ষে রিট আবেদনকারী ‘চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’র আইনজীবী মো. আব্দুল হালিম রেলওয়ে মহাপরিচালক, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ও পরিচালককে (অপারেশনাল মেইটেন্যান্স) এই নোটিস পাঠিয়েছেন।
১৪ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা না দিলে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে মামলা করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে নোটিসে।
সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় শিশু জিহাদের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তোলার পর চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ক্ষতিপূরণের দাবিতে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেছিল।
চার বছরের জিহাদ চার বছরের জিহাদ
গত বছর হাই কোর্টের দেওয়া রায়ে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
অ্যাডভোকেট হালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২২ অক্টোবর রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি তোলেন বিবাদীরা। সে হিসাবে ৯০ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধের যে সময়সীমা, তা পার হয়ে গেছে। তাছাড়া আবেদনের পরও আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত রায় স্থগিত করেনি।
“তাই ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ চেয়ে গতকাল (সোমবার) নোটিস পাঠানো হয়েছে। নোটিস পাওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে আইনি ব্যবস্থা হিসেবে আদালত অবমাননার অভিযোগে মামলা করা হবে।”
২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে পরিত্যক্ত নলকূপের কয়েকশ’ ফুট গভীর খোলা পাইপে পড়ে যায় চার বছরের জিহাদ।
প্রায় ২৩ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়েও তাকে উদ্ধার করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। পাইপে জিহাদের অস্তিত্বই নেই- এমন সন্দেহ রেখেই উদ্ধার অভিযান স্থগিত করার কয়েক মিনিটের মধ্যে কয়েকজন তরুণের তৎপরতায় তৈরি করা যন্ত্রে পাইপের নিচ থেকে তুলে আনা হয় শিশুর লাশ।
বের করে আনা হচ্ছে জিহাদের লাশ বের করে আনা হচ্ছে জিহাদের লাশ
ওই ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দুদিন পর জিহাদের মৃত্যুর জন্য ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে রিট আবেদন করা হয়।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্ট রুল জারি করে, যেখানে জিহাদের মৃত্যুর জন্য ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়।
এছাড়া সংবিধানের ৩১, ৩২ ও ৩৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী হওয়ায় শিশুটির মৃত্যুতে ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা, রেলওয়ে ও সিটি করপোরেশনের অবহেলাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়।
সারা দেশে অরক্ষিত ও উন্মুক্ত পাইপ, কূপ, টিউবওয়েল, স্যুয়ারেজ পাইপ, গর্ত এবং পানির ট্যাঙ্কের তালিকা তৈরি করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে।
স্বরাষ্ট্র ও রেলওয়ে সচিব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক, রেলওয়ের মহাপরিচালক, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেনটেইনেন্স), ওয়াসা চেয়ারম্যান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার ও শাজাহানপুর থানার ওসিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এই পাইপেই পড়ে গিয়েছিল জিহাদ এই পাইপেই পড়ে গিয়েছিল জিহাদ
ওই রুলের ওপর শুনানি শেষে এক বছর পর ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্ষতিপূরণের পক্ষে রায় দেয় আদালত। এরপর গত ৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে হাই কোর্টের রায়টি প্রকাশ পায়।
হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়, রায় হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও ফায়ার সার্ভিসকে ১০ লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
এর মধ্যে হাই কোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিলের চেম্বার আদালতে যায় ফায়ার সার্ভিস ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সে আবেদনে সাড়া না দিয়ে গত বছরেরর ৭ নভেম্বর বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের চেম্বার আদালত ৫ ফেব্রুয়ারি শুনানির জন্য রেখে আবেদনটি আপিলের নিয়মিত পাঠিয়ে দেয়।
এদিকে জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালত প্রকৌশলী ও ঠিকাদারসহ চার আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি দেওয়া ওই রায়ে শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে পানির পাম্প বসানোর প্রকল্প পরিচালক রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপ সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএসআর এর মালিক প্রকৌশলী আব্দুস সালাম, কমলাপুর রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন ও ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার আবু জাফর আহমেদ শাকির সাজার আদেশ হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন