পর্যটক ভিসায় এসে নিয়ম ভেঙে খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠান শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠান করলেন ভারতীয় দুই শিল্পী।
এভাবে অনুষ্ঠান করে ভিনদেশী শিল্পীরা কর ফাঁকি দিচ্ছেন অভিযোগ তুলে তা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন দেশীয় শিল্পীরা।
মঙ্গলবার ঢাকার শিল্বকলা একাডেমিতে ভারতীয় শিল্পী সৌমী ভট্টাচার্য্য ও সাহানা বক্সী সঙ্গীতানুষ্ঠান করেন। তারা পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী ও শ্যালিকা।
কলকাতার বাংলাদেশ কনস্যুলেটে খবর নিয়ে জানা যায়, তারা দুজনে বাংলাদেশে এসেছেন ট্যুরিস্ট বা পর্যটক ভিসায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা দুজনে বাংলাদেশে এসে পারফর্ম করবেন, এমন কোনো তথ্য তারা দেননি। দুজনে বাংলাদেশে এসে যদি পারফর্ম করেন, তবে সেটা বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বেআইনি।”
নিয়মানুযায়ী, আয়োজকরা বিদেশি শিল্পী আনতে গেলে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআর, এনএসআইয়ের অনুমতিপত্র আনতে হয়।
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অনুমতিপত্র পেলে তবেই একজন ভিনদেশী শিল্পী বাংলাদেশে এসে অনুষ্ঠান করতে পারেন।
বাংলাদেশের শিল্পীরাও ভারতে গিয়ে অনুষ্ঠান করতে গেলে একই ধরনের আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। মমতাজ ও জেমস অনেকদিন সে অনুমতি পাননি বলেও সংশ্লিষ্টরা জানান। তারা বলেন, অনেকে ভারতে অনুষ্ঠান করার আমন্ত্রণ পেলেও বিশেষ ভিসা না পাওয়ায় যেতে পারেন না।
নিয়ম ভেঙে দুজন ভারতীয় শিল্পীকে অনুষ্ঠানে আনার বিষয়ে কথা বলতে গেলে শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা বিভাগের পরিচালক সোহরাব উদ্দিন কথা বলতেই চাননি।
“আমরা কি নিয়ম মানি না? তোমরা এখানে গোয়েন্দাগিরি করতে এসেছ?” বলেই তিনি ফোন সংযোগটি কেটে দেন তিনি।
একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীকে ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ভেনেসা রদ্রিগেজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই শিল্পী ভারতীয় দূতাবাসে কী তথ্য দিয়ে এসেছেন, তা তো আমরা জানি না।
“আমাদের বলা হয়েছে, তাদের সরকারিভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতিপত্র নিয়ে এনবিআরে জমা দিয়েছে বলে জানি।”
ভারতীয় শিল্পীরা দূতাবাসে তথ্য গোপন করে এলে বা আয়োজকরা গোপন করলে মন্ত্রণালয় কী ভূমিকা নেবে, তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
গ্রন্থমেলায় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তিনি ‘খোঁজ নিয়ে দেখবেন’।
প্রায়ই এভাবে ভিনদেশী শিল্পী এনে অনুষ্ঠান করানো হয় বলে জানান বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি তপন মাহমুদ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দেশে এভাবে অন্য দেশের শিল্পীদের এনে ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার ব্যাপারটি সত্যি বেআইনি। ভিনদেশের শিল্পীরা অবাধে পারফরম্যান্স করে যাচ্ছে এভাবে, অথচ নজরদারি থাকা উচিৎ ছিল।”
বিদেশ থেকে আনা শিল্পীদের মান নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী তপন। এভাবে মানহীন শিল্পী নিয়ে আসা ‘নিতান্ত অর্থের অপচয়’ বলেও মনে করেন তিনি।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “ভিনদেশ থেকে আসা শিল্পীরা যদি নিয়মের ব্যতয় করেন, তবে তা বেআইনি। এ ব্যপারে নজরদারি আরও বাড়ানো উচিৎ।”
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন