চলতি সালের হজ মৌসুমে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন নজরদারি বাড়িয়ে দিয়েছেন। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে পাসপোর্ট অধিদপ্তর। পাসপোর্টের জন্য আবেদনকারীদের এখন তিন দফা পরীক্ষা করা হচ্ছে। একই সাথে কড়াকড়ি ব্যবস্থাও আরোপ করা হচ্ছে পুলিশ ভেরিফিকেশনে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও কক্সবাজার পাসপোর্ট কার্যালয়ে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ১৫০ থেকে সাড়ে ৪০০ আবেদন জমা হয়, আর বিলি করা হয় অন্তত সাড়ে ৩০০ নতুন পাসপোর্ট। একইভাবে আঞ্চলিক কার্যালয়ে ৪০০ আবেদন জমা পড়ার বিপরীতে ৩০০ নতুন পাসপোর্ট দেয়া হয়।
কিন্তু পবিত্র হজের আগে এই সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। আর হজের গুরুত্ব বিবেচনা করে নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট তৈরি করে দিতেও তড়িঘড়ি করতে হয় পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে। এই সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে রোহিঙ্গারা।
ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর সংগঠন আটাব-এর সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক শুক্কুর সরকারি সংস্থার এ ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেন যাচাই-বাছাই করে পাসপোর্ট দেয়। কারণ এই পাসপোর্টে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন দেশে গিয়ে অপকর্মে লিপ্ত হয়।
হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হাব চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘আমি পাসপোর্ট দেখে চিনব না কে বাংলাদেশি আর কে রোহিঙ্গা। তাই পাসপোর্ট দেওয়ার জায়গা থেকে এটি ঠিক করে নিতে হবে।
বাংলাদেশে গত ছয় মাসে রোহিঙ্গার সংখ্যা অন্তত তিন গুণ বেড়েছে। গত বছর পবিত্র হজ চলাকালে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ছিল ৪ লাখ। এসব রোহিঙ্গার মধ্যে একটি অংশ চেষ্টা চালিয়েছিল বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব চলে যাওয়ার। গত বছরের ২৪ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযানের মুখে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসে আরও আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা। বর্তমানে নিবন্ধিত পৌনে ১১ লাখসহ প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে বলে জানা যায়। ফলে এবার ওই শঙ্কা আরও বেড়েছে।
তবে সবকিছু শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার আশা করছেন বিভাগীয় পাসপোর্ট কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু নোমান মো. জাকির হোসাইন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু বারবার ভেরিফিকেশন হচ্ছে, আশা করছি হজ মৌসুমের আগেই সবকিছু শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে পারব।’
জাল নথিপত্র দিয়ে পাসপোর্ট নেয়ার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা খুব সহজে পুলিশ ভেরিফিকেশন পার হয়ে যায় বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আগে রোহিঙ্গারা শুধু কক্সবাজার উপজেলার টেকনাফ ও উখিয়ার পরিচয় ব্যবহার করত, বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলার ঠিকানা ব্যবহার করছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে পাসপোর্টের আওতায় না আসতে পারে সে জন্য সব থানায় নির্দেশনা দেয়া আছে। গত দুই মাসে চট্টগ্রামের দুটি পাসপোর্ট কার্যালয়ে বাংলাদেশি পরিচয়ে পাসপোর্ট করাতে গিয়ে অন্তত ২৫ জন রোহিঙ্গা আটক হয়েছে। কক্সবাজার থেকে সম্প্রতি ডজনের বেশি রোহিঙ্গাকে আটক করা হয় বলে জানান তিনি।
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন