চলমান এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এক বিষয়ের প্রশ্নপত্র পুরোপুরি ফাঁসের প্রমাণ পেয়েছে প্রশ্নফাঁস মূল্যায়ন কমিটি। বাকি কিছু বিষয়ে আংশিক ফাঁসের প্রমাণ মিলেছে।
গতকাল সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে বৈঠক শেষে কমিটির আহ্বায়ক কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর একথা জানান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, ‘একটি বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পেয়েছি। কোন বিষয় সেটা এখনই বলা যাবে না। আমরা আগামী ২৫ তারিখ মিটিং করে ২৬ তারিখে চূড়ান্ত যে সুপারিশ দেব সেখানে দেখতে পাবেন।’
সচিব বলেন, ‘প্রশ্নফাঁস নিয়ে পত্র-পত্রিকায় যেসব রিপোর্ট এসেছে এসব আমরা মিলিয়ে দেখছি। একইসঙ্গে ফাঁসের সময়ের বিষয়টিও আমরা মিলিয়ে দেখব। সুপারিশে থাকবে প্রশ্ন ফাঁসের সুবিধা কতজন পেয়েছে। কতক্ষণ আগে এবং কত নম্বরের প্রশ্নফাঁস হয়েছে।’
অধিকাংশ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন কি না- জানতে চাইলে মো. আলমগীর বলেন, ‘দেখুন, আমরা এই বিষয়গুলোই দেখছি। এখনই পরিষ্কার করে বলা যাচ্ছে না। একেক পত্রিকায় একেক রকম করে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো আমরা মিলিয়ে দেখছি। মিলিয়ে দেখার পর দেখা যাচ্ছে কোনোটা হয়তো অর্ধেক মিলেছে আবার কোনোটা হয়তো তারও কম।’
সচিব বলেন, ‘পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে গণিতের সব সেটই ফাঁস হয়েছে। অথচ আমরা মিলিয়ে দেখেছি একটা সেটও মেলেনি। ইংরেজি বিষয়ের ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা মিল পেয়েছি। এজন্য আমরা আরও খতিয়ে দেখছি। এরপর সিদ্ধান্ত নেব এবং সুপারিশ করব।’
পরীক্ষা বাতিলের বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘যদি দেখা যায় কোনো প্রশ্নপত্র হুবহু মিলে গেছে তাহলে তো বাতিলের সুপারিশ আমরা করব। আর বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তো নেবে মন্ত্রণালয়। আবার ধরুন কোনো বিষয়ে আংশিক যেমন বহুনির্বাচনী অংশ ফাঁস হয়েছে, তাহলে শুধু ওই অংশের বাতিলের সুপারিশ আমরা করব। যদি ওই প্রশ্ন পরীক্ষা শুরুর এক-দুই ঘণ্টা বা আগের দিন ফাঁস হয়ে থাকে।’
সচিব বলেন, ‘আর যদি পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে থাকে, তাহলে তো তা থেকে সুবিধা নিয়েছে সামান্য কিছু শিক্ষার্থী। ফলে ওই পরীক্ষা বাতিলের কোনো কারণ নেই। তাতে বিষয়টি অনেক বেশিসংখ্যক ছাত্রছাত্রীর জন্য কষ্টের কারণ হয়ে যাবে।’
প্রশ্নফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণার পর কাউকে ধরা গেছে কিনা জানতে চাইলে মো. আলমগীর বলেন, ‘না, এমন কাউকে ধরা যায়নি। তারা এমন কিছু বলেনি। তবে তারা ৩০০ মোবাইল নাম্বার যে নির্ধারণ করেছে, সেটা নিয়ে এখনো কাজ করছে।’
এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের মধ্যে গত ৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় মনিটরিং এবং আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির জরুরি সভায় ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও বিটিআরসি প্রতিনিধি, আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধিদের ওই কমিটিতে রাখা রয়েছে।
বাতিল হচ্ছে না পরীক্ষা : চলমান এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পাওয়া গেলেও পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ করা হচ্ছে না। তবে পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন ও পরীক্ষা কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা জোরদারসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ প্রতিবেদন আকারে শিক্ষামন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে গতকাল বিকেলে পরীক্ষা মূল্যায়ন কমিটি দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বসবে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘প্রশ্নফাঁসের বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত আমরা যাচাই-বাছাই করেছি। তিন শতাধিক মোবাইল ও ফোন নম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেওয়া হয়েছে। তারা সেসব বিষয়ও যাচাই-বাছাই করে দেখছে। এ কারণে কোনো পরীক্ষা বাতিল করার সুপারিশ করা হচ্ছে না।’ খোলাকাগজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন