পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে নানামুখী সমালোচনার জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তবে প্রশ্ন ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বদলে, বিষয়টি ‘যুগ যুগ ধরে চলে আসছে' বলে যেন দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন তিনি৷
সাম্প্রতিক ইটালি সফর নিয়ে সোমবার সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তবে সংবাদ সম্মেলনে শুধু ওই সফর নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং প্রশ্ন ফাঁসসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি৷ বর্তমানে প্রায় সব পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন আগেই ফাঁস হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘দেখুন, প্রশ্নপত্র ফাঁস, এটা কোনো নতুন কিছু না, এটা কিন্তু সব সময় যুগ যুগ ধরেই চলে এবং কখনও প্রচার হয়, কখনও প্রচার হয় না, এটা হলো বাস্তবতা৷''
প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দিলে তাদের শাস্তি দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব জনগণের বা সাংবাদিকদের নয়, সেটা পুলিশের দায়িত্ব৷ আর এক্ষেত্রে সরকারের সক্রিয় হওয়া জরুরি৷
বর্তমানে একটি বেসরকারি উন্নয়নসংস্থায় কর্মরত সাংবাদিক শরিফুল হাসান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কথায় আমি হতবাক৷ প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে আপনি আজ যা বলেছেন, তাতে আমি বিস্মিত৷ জানি না কারা আপনাকে কী বুঝিয়েছে৷ বাম থেকে আসা এই শিক্ষামন্ত্রী আর অর্থমন্ত্রী আপনার সব অর্জনকে ডুবিয়ে দেবে৷ আপনি কী করে সাংবাদিকদের বলেন, প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দেন, তাদের শাস্তি দেবো? এই কাজটা তো আপনার করার কথা৷''
শিক্ষার্থীদের চোখে শিক্ষকদের মর্যাদা
অনন্ত সাদ
ঢাকা নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী অনন্ত সাদ একজন শিক্ষকের ছেলে৷ তাঁর মতে, ‘‘মাতা-পিতার পরেই যাঁদের স্থান তাঁরাই হলেন শিক্ষক৷ আর এটা আমরা শিখেছি পরিবার থেকেই৷ শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে যতই রাগারাগি করেন না কেন সেটা আমাদের ভালোর জন্যই করে থাকেন৷ আমার বাবাও একজন শিক্ষক এবং তিনিই আমাকে শিখিয়েছেন কীভাবে শিক্ষকদের সম্মান করতে হয়৷’’
তিনি লিখেছেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বারবার দেশে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে৷ কোথায় সমস্যার সমাধান করবেন, না পারলে নিদেনপক্ষে ‘স্যরি' বলবেন, তা না, উল্টো দায় এড়াচ্ছেন৷''
প্রসঙ্গত, ক্রমাগত প্রশ্ন ফাঁস রুখতে ব্যর্থ হওয়ায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পদত্যাগের দাবিও উঠেছে নানামহল থেকে৷ তবে প্রধানমন্ত্রী সেই দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে উল্টো প্রশ্ন করেছেন, ‘‘মন্ত্রী কি নিজে প্রশ্ন পত্র ফাঁস করতে গেছে, নাকি সচিব গেছে?''
পরীক্ষার অল্প কিছু সময় আগে প্রশ্ন ফাঁস হয় দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘ওই সময়ে বই খুলে উত্তর বের করা, ওখানে বেশ কয়েকশ' উত্তর থাকে, সেখান থেকে কয়েকটা আসে৷ উত্তরটা সে খুঁজে বের করে কীভাবে? এ কথাটার উত্তর কেউ দিতে পারবে কিনা, তা জানার আছে৷ এত ট্যালেন্ট এমন ফটোজেনিক (ফটোগ্রাফিক) মেমোরি কার আছে?'' বলাবাহুল্য, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য অনেকের পক্ষেই গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি৷ সালাউদ্দিন চৌধুরী কচি নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী এ সংক্রান্ত খবর শেয়ার করে লিখেছেন, ‘‘এটা গ্রহণ করতে পারছি না, প্রধানমন্ত্রী৷ আমি আপনাকে এবং আপনার নেতৃত্বকে অত্যন্ত পছন্দ করি৷ কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থা একেবারে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে৷ দয়া করে দেশটিকে তথাকথিত জিপিএ ৫ এবং অন্যান্য অপরাধ থেকে বাঁচান৷''
সৈকত রুশদী নামের আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘‘‘শিরে হৈলে সর্পদংশন তাগা বাধিবি কুথা?' লিখেছিলেন, তারাশংকর বন্দোপাধ্যায়৷ স্পষ্টতই পচন যখন মাথায় ধরে তখন দেহ বাঁচানোর আর কোনো উপায় থাকে না!''
সাহিত্য, বিজ্ঞান ও গণিত চর্চার ক্ষেত্রে ওইসিডি দেশগুলোর মধ্যে জাপানের বেশ নামডাক আছে৷ সেখানকার শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে ছয় বছর৷ তারপর তিন বছর জুনিয়র হাইস্কুলে পড়ালেখা শেষ করে আরও তিনবছর হাইস্কুলে যায়৷ এরপর আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়৷
আর এস এম উত্তম মনে করেন, ‘‘ প্রশ্ন ফাঁস কোনোব্যাপার না!!! ভোটে পাশ করতে যেমন যোগ্যতা লাগে না, পরীক্ষায় পাশ করতেও তেমনি মেধা লাগে না!!!''
শেখ হাসিনা প্রশ্ন ফাঁস রোধে ব্যবস্থা নেয়ার বদলে দৃশ্যত সেটিকে গুরুত্বহীন এক বিষয় হিসেবে তুলে ধরায় অনেকে আতঙ্কিতও হয়েছেন৷ সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজা এই বিষয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন ফাঁস বিষয়ক বক্তব্যে একই সঙ্গে বিস্মিত এবং আতঙ্কিত হয়েছি৷ বিস্মিত এ কারণে যে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে, তার কাছে হয়ত প্রশ্ন ফাঁসের সঠিক সংবাদ পৌঁছাচ্ছে না৷''
‘‘প্রশ্ন যে শুধু ২০ মিনিট বা ১ ঘন্টা আগেই ফাঁস হচ্ছে না, একদিন বা আরও আগে ফাঁস হচ্ছে- সেই তথ্য প্রধানমন্ত্রী জানছেন না৷ একাত্তর টেলিভিশন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম যে আগের রাতে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন প্রকাশ করে দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী তা-ও জানছেন না৷''
তিনি লেখেছেন, ‘‘আতঙ্কিত এ কারণে যে, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রশ্ন ফাঁসসহ শিক্ষাক্ষেত্রের যাবতীয় অপকর্ম জাস্টিফাই করা হলো৷''
ডয়চে ভেলে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন