সে আর নেই। যার দু:খ ছিলো জন্ম থেকে। কষ্টের অন্ত ছিলনা। কিন্তু মায়ের হাজারো স্বপ্ন ছিল তাকে ঘিরে। কিন্ত সবই যেন তছনছ হয়ে গেল। হৃদয়টা যেন খান খান হয়েছে। সেই মেয়েটির নাম বাবলী। পুরো নাম মেহিয়া আক্তার। তার বেদনায় অনেকেই কেদেঁছেন। বলেছেন এভাবে জ্বলতে খুব কমই চোখে পড়ে। জন্মের ছয় মাসের মাথায় বাবলীকে অ্যাসিড পান করিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল তার বাবা। কিন্তু সেবার বেঁচে যায় সে।
নিয়তির খেলা ১৭ বছর পরে বুধবার রাতে অবশেষে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিল সেই মেয়েটি।এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো সেই মেহিয়া আক্তার বাবলী।
বাবার সেই অ্যাসিড আক্রমণ থেকে শেষ পর্যন্ত বেঁচে গিয়েছিলেন বাবলী। তবে শারীরিকভাবে দারুণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলেন - কথা বলতেও পারত না ঠিকমত। তবে নানা মানুষের সহায়তায় ভর্তি হতে পেরেছিলেন টাঙ্গাইলের নামকরা একটি স্কুলে।
বাবলীর মুখে অ্যাসিড ঢেলে দেয়ার ঘটনা এক সময় মানুষ জেনেছিল গণমাধ্যমের কল্যাণে। আলোড়িত তুলেছিল ঐ ঘটনা। হয়েছিল ভাইরাল।
সেই সময় থেকে পেশাগত কারণে বাবলীর পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এমন একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন বাবলীর জীবনের কাহিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ সাংবাদিক জানান, কন্যাসন্তান হওয়ার তথ্য জেনে জন্মের আগে থেকেই বাবলীর মা'কে গর্ভপাত করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতেন বাবলীর পিতা।
তিনি বলেন, কন্যাসন্তান হিসেবে জন্ম হওয়ার ছয় মাসের মাথায় অ্যাসিড দিয়ে বাবলীকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়।
ঐ সময় এ নিয়ে মামলা হলে কিছুদিন পলাতক থাকেন বাবলীর পিতা। কিন্তু পরে ঐ মামলার আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। বাবলী এবং তার মা এরপর আর তার সাথে সম্পর্ক রাখেননি। অ্যাসিড হামলায় ঐ সময় বাবলীর একটি কান নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়াও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় গলা, জিহ্বা ও মুখ।
ঐ সাংবাদিক জানান বাংলাদেশ অ্যাসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশনের শিক্ষাবৃত্তির সহায়তায় পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল বাবলী। শারীরিক বিকলঙ্গতার জন্য প্রায়ই অন্যান্য ছাত্রীদের বিদ্রুপের শিকার হতে হতো তাকে।
মির্জাপুর থানার ওসি এ কে এম মিজানুল হক জানান, ভারতেশ্বরী হোমসের ছাত্রীনিবাসে থেকে পড়াশোনা করতেন বাবলী। তবে আট-দশ মাস আগে শৃঙ্খলাজনিত কারণে তাকে ছাত্রীনিবাস থেকে বহিস্কার করা হয়।
বাবলীর মা পারুল বেগম জানান বহিস্কার হওয়ায় ভারতেশ্বরী হোমসের একজন শিক্ষার্থী ও তার মায়ের সাথে মির্জাপুরে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন বাবলী। সেই শিক্ষার্থী ও তার মা বাবলীকে মৌখিকভাবে তিরস্কার করতো বলে জানান পারুল বেগম।
পুলিশ বলছে, তাদের ধারণা বাবলী আত্মহত্যা করেছেন। তবে কেন এই ঘটনা ঘটেছে, ময়নাতদন্তের পরে সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
যে কারণে আত্মহত্যা:
হলের খাবার নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন তিনি। এ কারণে শিক্ষক ও হল কর্মচারীদের সঙ্গে তর্ক হয় তার। পরে তিনি এজন্য ক্ষমাও চেয়েছেন। তার বাবা-মাকেও এজন্য ক্ষমা চাইতে হয়েছে। তবুও মন গলেনি কর্তৃপক্ষের। ওই ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়।
পরীক্ষা চলাকালে কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে চরম বিপাকে পড়েন ওই ছাত্রী। হলের বাইরে থেকেই পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়েছে তাকে। তবে এজন্য তাকে হীনমন্যতায় ভুগতে হয়েছে। অবশেষে আত্মহত্যা করেছেন ওই ছাত্রী। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ভারতেশ্বরী হোমসে ওই ঘটনা ঘটে। নিহত ছাত্রী মেহিয়া আক্তার বাবলী এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। মেহিয়ার পিতার নাম মো. বখতিয়ার রানা এবং মায়ের নাম পারুল বেগম।
জানা গেছে, বাবলী বুধবার রাতে মির্জাপুর উপজেলা সদরের বাইমহাটি গ্রামে তার বান্ধবী জয়ার সঙ্গে পরীক্ষা দিতে আসে। তার বাসাতেই বাবলী আত্মহত্যা করেন। পুলিশ রাতে ওই বাসার একটি কক্ষ থেকে গলায় ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে।
বাবলীর মা পারুল বেগম জানান, বাবলী ভারতেশ্বরী হোমস থেকে তার মেয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। সে আবাসিক হলের ছাত্রী ছিল। তিনি অভিযোগ করেন, তার মেয়ে বাবলী ভারতেশ্বরী হোমসের আবাসিক হলে থাকা অবস্থায় কিছুদিন পুর্বে হোস্টেলের ডাইনিং হলে রান্না নিয়ে প্রতিবাদ করেন। এসময় তার মেয়ের সঙ্গে শিক্ষক ও রান্নাঘরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কথা কাটাকাটি হয়।
পরে তারা হোমসে এসে প্রিন্সিপাল, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বাবলীর মাও ক্ষমা চেয়ে নেন যেন তার মেয়ে হোমস থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারে। হোমস কর্তৃপক্ষ তাকে ও তার মেয়েকে ক্ষমা না করে আবাসিক হল থেকে বের করে দেয়। এ অবস্থায় মেয়েকে নিয়ে চরম বিপাকে পরেন তারা।
বাবলী তার বান্ধবী জয়ার বাড়ি মির্জাপুর পৌর সদরের বাইমহাটি গ্রামের লোকমান মিয়ার বাসা থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিতে থাকে। বুধবার রাতে ওই বাসার একটি কক্ষে বাবলীর লাশ পাওয়া যায়।
বাবলীর পরিবারের অভিযোগ ভারতেশ্বরী হোমস থেকে বের করে দেওয়ার অপবাদ সইতে না পেরে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। তারা তদন্ত সাপেক্ষ মেয়ের হত্যার বিচার চেয়েছেন। এ ব্যাপারে ভারতেশ্বরী হোমস কর্তৃপক্ষ জানায়, বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাবলীকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন