পুলিশের মালামাল কেনাকাটায় চারশ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগের ঘটনায় আট মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্ত কমিটিই পূর্ণতা পায়নি। অভিযোগের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আদেশে দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। কিন্তু কমিটির সদস্য হিসেবে পুলিশের একজন অতিরিক্ত ডিআইজির নাম পুলিশ সদর দফতর থেকে এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।
দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ২০১৭ সালের ১৫ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমকে আহ্বায়ক ও পুলিশের মনোনীত একজন অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শককে (ডিআইজি) সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আট মাস পার হয়ে গেলেও এ বিষয়ে সাড়া দেয়নি পুলিশ সদর দফতর।
এ বিষয়ে জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রিয়.কমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ওই ঘটনার আর তদন্ত হয়নি। এমন-কি আমার স্থলে অন্য কাউকে দিয়ে আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছিল কিনা সে বিষয়টিও আমার জানা নেই। পুলিশের পক্ষ থেকে আমার কাছে কোনো নাম আসে নাই।’
সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ সালে দুই অর্থবছরে সারা দেশের পুলিশ বাহিনীর কাপড়, জুতা, হেলমেট, মোজা, মাল্টিপারপাস বেল্টসহ যাবতীয় মালামাল ক্রয় করা হয়। সেগুলো সংগ্রহের দায়িত্ব পান তৎকালীন পুলিশ সদর দফরের লজিস্টিক বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি রেজাউল করিম। তার নেতৃত্বে এসব মালামাল কেনা হয়। কিন্তু যেসব মালামাল কেনা হয়, তা আগের কয়েক বছরের তুলনায় দুইগুণ ও তিনগুণ বেশি দামে ক্রয় করে প্রায় চারশ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে ওঠে।
ওই সময় রেজাউল করিম দাবি করেন, পুলিশের পোশাক, জুতাসহ অন্যান্য সামগ্রীর মান আগের চেয়ে অনেক উন্নত। এ কারণে খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার পর ২০১৭ সালের ২৭ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগকে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়ে একটি চিঠি (স্মারক নং-০৩.৪৪.০০০০.০৭৯.০৪৮.০১.২০১৭-৫৭১) দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এমন নির্দেশ পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসে মন্ত্রণালয়। পরের মাসের ১৫ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ জারি করা হয়। অফিস আদেশে যুগ্ম সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম ও পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজিকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে পরবর্তী ১৪ কর্ম-দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আদেশ দিলেও তা আর এগোয়নি।
আদেশে পুলিশকর্তা রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট দশটি অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতেও বলা হয়েছিল।
তদন্ত করার জন্য কমিটিতে আট মাসেও পুলিশ সদর দফতর একজন অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়নি। ফলে বিষয়টির আর কোনো তদন্ত হয়নি।
একটি সূত্র জানিয়েছে, অভিযোগের পর রেজাউল করিমকে পুলিশের সদর দফতরের লজিস্টিক বিভাগ থেকে বদলি করে ক্রাইম উইংয়ের স্পেশাল ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট বিভাগে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটিতে পুলিশের একজন অতিরিক্ত ডিআইজির নাম কেন পাঠানো হয়নি, এই বিষয়েও কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।
তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি ) একেএম শহীদুল হক গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের একজন ডিআইজির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করাহয়েছে। কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর বিষয়টি দেখা হবে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়কেও জানানো হয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের গঠিত সেই কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন লজিস্টিক বিভাগের ডিআইজি মিলি বিশ্বাস। তবে সেই কমিটির অগ্রগতি কতদূর এগিয়েছে তা জানা যায়নি। এ বিষয়ে কথাও বলতে রাজি হননি পুলিশের কোনো কর্মকর্তা।
পুলিশের গঠিত কমিটি ও তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের লজিস্টিক বিভাগের ডিআইজি মিলি বিশ্বাস কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন