পিলখানার হত্যাকাণ্ড মামলার রায়ে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এ মামলাকে ঐতিহাসিক রায় আখ্যায়িত করেন বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ। রায়ে আদালত পাঁচ দফা পর্যবেক্ষণ দেন। ১. বিডিআরের বিদ্রোহীরা পরস্পরের যোগসাজশে এবং অভিন্ন লক্ষ্যে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করেছেন, যার উদ্দেশ্য ছিল বিডিআরকে (বর্তমান বিজিবি) সেনা কর্মকর্তামুক্ত করা এবং বাহিনীতে নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা । ২. কোনো উসকানি, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, হতাশা বা ক্ষোভই পিলখানার ৫৭ জন চৌকস ও সম্ভাবনাময় সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার ন্যায্যতা দিতে পারে না। ৩. অপরাধের ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন ঘটনা। এই হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে জাতি কিছু প্রতিশ্রুতিশীল, উজ্জ্বল, সম্মানিত ও প্রতিভাবান সেনা কর্মকর্তাকে হারিয়েছে। এই ক্ষতি পূরণ হতে দীর্ঘ সময় লাগবে। বিডিআরের অবাধ্য বিদ্রোহীরা যে মাত্রায় নৃশংসতা দেখিয়েছে, তা কোনো সভ্য সমাজ মেনে নেবে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতার মাত্রা ছাড়িয়েছে। ৪. ঘটনা ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে এটাই বেরিয়ে আসে যে অভ্যন্তরীণ কিংবা বাইরের শক্তি নবগঠিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করতেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। ৫. এই হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য কোনো মহলের নীলনকশায় দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করা এবং গণতন্ত্রের ধারাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা।
অপারেশন ডাল-ভাতের কার্যক্রম নেয়া উচিত নয়
হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি সাত দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলো হলো, ১. এটা আমাদের আন্তরিক প্রত্যাশা (পায়াস উইশ), অপারেশন ডাল-ভাতের মতো এমন কোনো কার্যক্রম নেওয়া উচিত নয়, যা বিজিবির সদস্যদের গৌরব ও আত্মসম্মানে আঘাত হানে। এটা স্পষ্টত প্রতীয়মান যে এ ধরনের কর্মসূচি তাদের সৈনিকমূলক আচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ২. অফিসার ও সৈন্যদের মধ্যকার পেশাদারি সম্পর্ক বিজিবির আইন মোতাবেক হতে হবে। ৩. স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি কর্তৃপক্ষকে বিজিবি সদস্যদের যেকোনো সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত সমাধান দিতে হবে। ৪. বিজিবির সদস্য ও কর্মকর্তাদের মধ্যে এখনো কোনো দুঃখ-দুর্দশা থাকলে বিজিবি কর্তৃপক্ষকে তা মিটিয়ে ফেলতে হবে। ৫. বিজিবির কোনো সদস্যের ভ্রমণ ভাতা ও দৈনন্দিন ভাতা এখনো বাকি থাকলে তা দ্রুত মিটিয়ে দিতে হবে। ৬. বিজিবি কর্তৃপক্ষকে তাদের অর্জিত ছুটি এবং এ-সংক্রান্ত সব সমস্যার সমাধান করতে হবে। ৭. বিডিআরের রাইফেল সিকিউরিটি ইউনিট কেন বিডিআর হত্যাযজ্ঞের আগে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন এবং প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য বিজিবি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন আদালত।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন