আজ রোববার শেষ হচ্ছে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত চার দিনব্যাপী বেসিস সফটএক্সপো ২০১৮। দর্শনার্থী সমাগম ছাড়াই ও অংশগ্রহণকারীদের বাজে অভিজ্ঞতা নিয়ে এবারের প্রদর্শনী বেসিস সফটএক্সপোর ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যর্থ আয়োজন বলে জানাচ্ছেন অংশগ্রহণকারীরা। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে বড় এই আয়োজনের অ্যাসাইনমেন্ট পালনে তাহলে কি বেসিসের নতুন নেতৃত্বের ব্যর্থতা? এমনটাই বলেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি তড়িঘড়ি করে বেসিসের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে। বেসিসের সভাপতি মোস্তাফা জব্বার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ায় এই পরিবর্তন আসে। তবে নির্বাচিত জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও দুইজন সহ-সভাপতিকে বাদ দিয়ে পরিচালক সৈয়দ আলমাস কবীরকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। যা নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতসহ বিভিন্ন মহলের অনেকের মনেই যোগ্য নেতৃত্বের প্রশ্ন উদয় হয়েছে।
নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব নেয়ার পর তাদের সবচেয়ে বড় অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে সামনে আসে বেসিস সফটএক্সপো। একদিকে সদস্যদের দাবি হিসেবে এটি আয়োজন করা যেমন জরুরী ছিল তেমনই সামনের নির্বাচনে একটি সফলতা হিসেবে দেখানোর সুযোগ তৈরি হয়। তাই অন্য বছরগুলোতে অন্তত ৬ মাস আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু হলেও এবার অনেকটা তড়িঘড়ি করেই বেসিস সফটএক্সপো আয়োজন করা হয়।
মেলার প্রথম দিন থেকেই দর্শনার্থীদের উপস্থিতি নিয়ে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মনে ক্ষোভ তৈরি হয়। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, মূল ফটকের সামনে নিবন্ধন বুথ ছিলো ফাঁকা। ভেতরে পুরো মেলাটি হাহাকার করছে। দর্শনার্থীদের কোনো ভিড় নেই। প্রায় সব স্টলেই বসে অলস সময় কাটাচ্ছিলেন সংশ্লিষ্টরা। সামনে একটু ভিড় দেখা গেলেও জানা গেছে স্টলের লোকেরাই অন্য স্টলে ঘোরাঘুরি করছেন।
মেলার সেমিনারগুলোতেও ছিল একই অবস্থা। অন্যবার ডেভেলপার কনফারেন্স, আউটসোর্সিং কনফারেন্সে উপচে পড়া ভিড়ে অনেকেই হলে প্রবেশ করতে না পারলেও এবার ছিল ভিন্নরুপ। শনিবার ছিল ডেভেলপার কনফারেন্স; সেটাও ছিলো গোটা কয়েক লোক। অন্যান্যবারের মতো ঝাঁপিয়ে পরতে দেখা যায়নি ডেভেলপার কনফারেন্সে।
স্টল থেকে ডেকে এনে, গিফট ও খাবার দিয়ে আগ্রহী করেই এগুলোতে লোক আনা হয়। তারপরেও কোনও সেমিনার ও কনফারেন্সে আসনগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন আয়োজকরা। মেলার তৃতীয় দিনেও ভিড় না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেন পণ্য ও সেবা প্রদর্শনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রতিবছর এই প্রদর্শনী নিয়ে আগ্রহের কমতি না থাকলেও এবার মেলার প্রচারণা সেভাবে চোখে পড়েনি অনেকেরই। বিপরীতে মেলার ‘নাতিবাচক’ সংবাদগুলো ছড়িয়ে পড়েছে বেশি। সাংবাদিকদের উপস্থিতি না থাকা ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রীর পদবী নিয়ে ভুল তথ্য থাকায় বিষয়টি নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে।
এবারের মেলাকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। ছিল সফটওয়্যার সেবা প্রদর্শনী জোন, উদ্ভাবনী মোবাইল সেবা জোন, ডিজিটাল কমার্স জোন, আইটিইএস ও বিপিও জোন। কিন্তু কোনও জোনেই দর্শনার্থীর উপস্থিতি সন্তোষজনক ছিল না।
মেলায় আইএসপিএবির নেতৃত্বে একাধিক ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াইফাই সেবা দিলেও সেটির সুফল অধিকাংশই পায়নি। বাধ্য হয়ে প্রতিটি স্টলই নিজস্ব মডেম কিংবা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে ব্যবহার করছে।
কিছু সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আসলে আমরা বুঝতে পারেনি বেসিসের এমন খারাপ দিন আসবে। টাকা দিয়ে স্টল পেভিলিয়ন নিয়ে ভালোভাবে প্রচার করতে পারলাম না। তাছাড়া প্রচার করতে গেলেও দর্শনার্থী দরকার। সেই দর্শনার্থীরাইতো বেসিস সফটএক্সপোতে আসেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি জানান, এবার মেলায় অংশগ্রহণ করাটাই আমাদের বোকামি হয়েছে। এর আগেও প্রায় প্রতিবারই আমরা বেসিস সফটএক্সপোতে অংশ নিয়ে থাকি। অনেক ভালো সাড়াও পাই। এবার ক্ষতিই হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘ডিজাইনিং দ্য ফিউচার’ স্লোগান নিয়ে বেসিস যে আয়োজন করেছে সেটাকে ব্যর্থতাই বলা চলে। কর্তৃপক্ষ জানেই না একটা মেলা কিভাবে সাজাতে হয়। কিভাবে মেলায় দর্শনার্থী টানতে হয়।
মেলায় উপস্থিত কয়েকজন বেসিস সদস্য বলেন, এরকম ব্যর্থ ইভেন্ট বেসিসের নেতৃত্বে হয়নি। শুধু বেসিস সফটএক্সপো নয়, ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড, ইন্টারনেট উইক কিংবা অন্য মেলাগুলোতেও বেসিস সফল ছিল। তাহলে কেন পূর্বের অভিজ্ঞতা কাজে লাগলো না?
প্রতিবছর বেসিস সফটএক্সপোতে কয়েকজন মন্ত্রী ও সচিব উপস্থিত থাকলেও এবার এখন পর্যন্ত মাত্র দুইজন মন্ত্রী ও একজন সচিব অংশ নিয়েছেন। ফলে পলিসিগত দিক থেকেও এবারের সফটএক্সপোর প্রাপ্তি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে ইন্ডাস্ট্রির লোকজনের মধ্যে। প্রায় সব সেমিনার ও কনফারেন্সে আয়োজক কমিটির সদস্যদের আলোচক হিসেবে রাখা হয়েছে, যা অনেকের কাছেই দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে।
তাহলে কি শুধুমাত্র অ্যাসাইনমেন্ট পালনের জন্য এই মেলা আয়োজন করা হয়েছে, যা পালনে তারা ব্যর্থ হয়েছেন? এমন অভিব্যক্তি করেছেন প্রকাশ করেছেন অনেকেই। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতি ছাড়াই এমন আয়োজনকে ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন।
এমনকি নতুন নেতৃত্ব আসার পরেই রাজধানীর কয়েকটি স্থানে সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করা হলেও এমনটাই দেখা গেছে। প্রতিটি বৈঠকেই সদস্যদের উপস্থিতি ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে নির্বাচনকে সামনে রেখে কাজ দেখাতেই এসব আয়োজন করে অংশগ্রহণকারীদের ব্যবসায়িক ক্ষতি কেন করা হলো, সাংবাদিকদের সামনে এমন প্রশ্নও করেছেন সদস্য ও অংশগ্রহণকারীরা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন