পুরস্কার ঘোষণাসহ বিভিন্ন তৎপরতা চালিয়েও কোনোভাবেই প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে সংসদে পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের। সারা দেশে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এমন বাস্তবতায় ‘কোয়েশ্চেন সেটার’ নামে একটি সফটওয়্যার দিয়ে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো সম্ভব বলে দাবি করেছেন আল-আমিন নামের তরুণ এক উদ্ভাবক।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের সাবেক এই শিক্ষার্থী সফটওয়্যারটি কীভাবে কাজ করবে, তা জানিয়েছেন তা প্রিয়.কমকে।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করবে সফটওয়্যার!’ শিরোনামে আল-আমিনের উদ্ভাবিত সফটওয়্যার নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি ‘কোয়েশ্চেন সেটার’ নামক সেই সফটওয়্যারটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রদর্শনও করেছেন এই উদ্ভাবক। তবে মন্ত্রণালয় ফাঁস রোধে আল-আমিনের সফটওয়্যার ব্যবহার করবে কি না, তা এখনো জানায়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও প্রশ্নপত্র না ছেপে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার কথা চিন্তা করছে। যদিও এ সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে আল-আমিন বলেন, ‘এই ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সর্বপ্রথম যা প্রয়োজন, তা হলো একটি নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য সফটওয়্যার। প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ এবং বর্তমান এই চাহিদা পূরণের জন্য আমার তৈরি সফটওয়্যার ব্যবহার করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চাহিদামতো ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করা সম্ভব।’
যেভাবে কাজ করবে সফটওয়্যার
আল-আমিন জানান, এই সফটওয়্যারে একটি প্রশ্ন ব্যাংক থাকবে, যেখানে নির্বাচিত ও অভিজ্ঞ শিক্ষকরা প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশ্ন তৈরি করে সংরক্ষণ করবেন। প্রশ্ন ব্যাংকে সংরক্ষিত অসংখ্য প্রশ্নের মধ্য থেকে মাত্র ২৫ সেকেন্ডে সফটওয়্যারটি একটি প্রশ্নপত্র তৈরি করবে। প্রশ্ন তৈরির আগ মুহূর্তে যিনি প্রশ্ন তৈরি করছেন, তিনিও বলতে পারবেন না কোন প্রশ্ন পরীক্ষায় আসতে যাচ্ছে। কোনো রকম হস্তক্ষেপ ছাড়াই তৈরি হবে প্রশ্নপত্র। প্রশ্ন তৈরিকারীর কাছে প্রশ্ন জেনারেট করা ছাড়া আর কোনো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকবে না। সব বিষয়ের জন্য সিলেবাস ও মানবণ্টনও তৈরি করা যাবে।
জেনারেট করা প্রশ্নটির আইপি এড্রেস ইমেইল করে পাঠানো যাবে সব পরীক্ষা কেন্দ্রে। সেখানে থাকা ডিজিটাল যন্ত্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা যাবে প্রশ্নপত্র।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আল-আমিন
আল-আমিন জানান, নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থী থাকে। সে জন্য প্রশ্নপত্র করার ক্ষেত্রেও সহজ প্রশ্ন, সহজ-জটিলের মাঝামাঝি ও জটিল প্রশ্ন তৈরির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এই সফটওয়্যারে। তিনি আরও জানান, সফটওয়্যারে থাকা প্রশ্নব্যাংক থেকে ইচ্ছামতো প্রশ্নপত্র তৈরি করতে পারবে পরীক্ষা কমিটি। অসংখ্য প্রশ্নের মধ্য থেকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে র্যান্ডমলি (ইচ্ছানুযায়ী) প্রশ্নপত্র তৈরি করা যাবে।
র্যান্ডমলি প্রশ্নপত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে এক অধ্যায় থেকে অনেকগুলো প্রশ্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই সমস্যারও সমাধান দেওয়া হয়েছে সফটওয়্যারে।
এ বিষয়ে আল-আমিন বলেন, ‘ধরা যাক একটি প্রশ্নপত্রে ২০টি প্রশ্ন থাকবে। অধ্যায় আছে ১০টি। তার মানে প্রতিটি অধ্যায় থেকে দুটি করে প্রশ্ন আসবে। এই সফটওয়্যারে এমন কমান্ড দেওয়ার ব্যবস্থা আছে, যেখানে ক্লিক করার পর দুটির বেশি প্রশ্ন ওই অধ্যায় থেকে নেবে না। এমসিকিউয়ের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য।’
বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. সাইফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়নে আল-আমিন প্রায় এক বছর পরিশ্রম করে বিএসসি পরীক্ষার কাজ হিসেবে উদ্ভাবন করেন 'কোয়েশ্চেন সেটার' নামের এই সফটওয়্যার। এটির উন্নয়নে কাজ করতে গিয়ে চাকরির চেষ্টাও করছেন না তিনি।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চাকরির চেষ্টা করলে সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করা সম্ভব হবে না। এটা সফলভাবে করতে পারলে সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব। তাই কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন